Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

|| সাহিত্য হৈচৈ - সরস্বতী পুজো স্পেশালে || শতভিষা গুহ

maro news
|| সাহিত্য হৈচৈ - সরস্বতী পুজো স্পেশালে || শতভিষা গুহ

সরস্বতী পুজো, মেয়েবেলা এবং আমরা

বেশিদিন নয়। বছর দুয়েক আগের কথা। জানুয়ারি মাস পড়লেই একটা ভীষণ মন ভালো করা গন্ধ ভাসতো হাওয়ায় হাওয়ায়। স্কুলে পড়া দিনগুলোর সবথেকে বড়ো আনন্দটা ঝাঁপিয়ে আসতো হঠাৎ। শীতের ছুটি কাটিয়ে স্কুলে পা রাখতে না রাখতেই জলতরঙ্গে বেজে উঠতো অনেকগুলো গলার আওয়াজ, "ওরে, কাজ শুরু হবে কবে? পুজো এসে গেল তো!" সরস্বতী পুজো। শুনলেই এখনো কেমন করে ওঠে না বুকের ভিতরটা? আমাদেরও করতো। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পুজোর কাজ, ঘর সাজানো, বাজার করা, ঠাকুর আনতে যাওয়া..................আর সবথেকে বড়ো উত্তেজনা ছিলো অন্য স্কুলগুলোতে নেমন্তন্ন করতে যাওয়া নিয়ে। বছরের মধ্যে ওই একটা দিনেই তো বয়েজ স্কুলে মেয়েদের (এবং গার্লসে ছেলেদের) পা রাখার অনুমতি মিলতো স্বয়ং স্কুল থেকে। রঙ্গোলি সাজানো, আল্পনা দেওয়া, আরো হাজারটা কাজ সেরে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় স্কুল থেকে বেরিয়ে গেটের পাশে বসা কাকুর থেকে দশ টাকার নিমকিমাখা নিয়ে আটজনে ভাগ করে খাওয়া! অদ্ভুত একটা আনন্দ ছিলো না! পুজোর দিনের হাসিঠাট্টা, চোরা চাউনি, অপটু হাতে সামলানো শাড়ি.......................একটা গোটা বছর ভালো থাকার রসদ দিয়ে যেতো।
দু'বছর পরের ছবিটা অনেক আলাদা। সেদিন যারা দলবেঁধে ঘুরে বেড়াতো একসাথে, কোনো প্ল্যান প্রোগ্রাম ছাড়াই, আজ তাদের সময় নেই নিজেদের জন্য। সবাই এখন অন্য অন্য পথের যাত্রী। কথা বলা হয় না, দেখা হয়ে ওঠে না, কতোদিন ছুঁয়ে দেখা যায় না সেই ভীষণ প্রিয় ছোট্টবেলার সঙ্গীগুলোকে। বন্ধুদের সাথে ফুচকা খাওয়াকে ছাপিয়ে ওঠে প্রেমিক-প্রেমিকার সাথে কফি ডেটে যাওয়ার আনন্দ। ব্যস্ততার অজুহাতে আমরা সবাই সবাইকে এড়িয়ে যেতেই থাকি। যেতেই থাকি। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর....................
শুধু এখনো স্কুলফিরতি ছেলেমেয়েদের দেখে কেমন যেন হিংসে হয়! মনে হয়, ওইরকম একটা সাজানো গোছানো রঙিন সময় তো আমাদেরও ছিলো! একটা সুন্দর মেয়েবেলা ছিল, খাতার ওপর বার্বি আর মিনি মাউস আঁকা স্টিকার ছিলো, দু'টাকায় লাল-নীল বরফজল ছিলো, বৃষ্টির দিনে ইচ্ছে করে জলজমা রাস্তায় হেঁটে বাড়িফেরা ছিল। খুনসুটির বিকেল ছিলো, সন্ধ্যেবেলার টিউশন ক্লাস ছিলো। সরস্বতী পুজোর দিনে আলমারি থেকে বের করে দেওয়া, ধূপের গন্ধ মাখানো মায়ের হলদে শাড়ি ছিলো।
আসলে একটা বয়সে পৌঁছে যাওয়ার পর আমাদের সব "আছে"গুলোই "ছিলো" হয়ে যেতে থাকে একটু একটু করে। সারাক্ষণ ছুঁয়ে থাকা উজ্জ্বল হাসিমুখগুলো ফোনের গ্যালারিতেই আটকে পড়ে ক্রমশ। আর একদিন আমরা হঠাৎই আবিষ্কার করে ফেলি, বড়ো হয়ে গেছি আমরা। আর বড্ড একাও!
একটা সময়ের পর না, মানুষ স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে! অতীতে ফিরে গিয়ে বাঁচতে চায়। আর তখন আমরা ফেলে আসা ছোটবেলার কৌটোটায় হাত বোলাই। বুক ভরে গন্ধ নিই সেই চলে যাওয়া দিনগুলোর। যে দিনগুলোয় আমাদের "সত্যিকারের আমি"রা ছুটে বেড়াতো বকুলফুলের মাঠে! সেই সময়! আমাদের মেয়েবেলা। আমাদের বন্ধুরা। আমাদের পুজো।
আমাদের নস্টালজিয়া।
[হঠাৎ করে ফোনের গ্যালারি সাফ করতে গিয়ে পাওয়া পুরনো কিছু ছবি মনের দরজাটা খুলে দিল আবার]
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register