Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

|| সাহিত্য হৈচৈ - সরস্বতী পুজো স্পেশালে || পার্থ সারথি চক্রবর্তী

maro news
|| সাহিত্য হৈচৈ - সরস্বতী পুজো স্পেশালে || পার্থ সারথি চক্রবর্তী

সরস্বতী পুজোর স্মৃতিগদ্য

' কিরে! তুই কুল খেয়ে ফেললি' ? ' এ মা, তাইতো! ভুলে গেছি'! ' এবার বুঝবি মজা '! ' বল না, ফেলে দিই এখন'? ' আর লাভ নেই, মুখে তো দিয়ে ফেলেছিস। কাজেই আর কিছু করার নেই '। ' আচ্ছা, তাহলে এটা খেয়েই ফেলি। আর খাব না। মা সরস্বতীর কাছে মাফ চেয়ে নেব।' ' লাভ নেই আর। বুঝবি ঠ্যালা! ' ভয়ে কুল ফেলে দিয়ে মুখ ধুয়ে নিল সাততাড়াতাড়ি। তারপর মনে মনে মা'কে বলল, হাফ ইয়ারলি তে অংকে খারাপ হয়েছিল; অ্যানুয়ালে ভাল করতেই হবে। আর এর মধ্যে যদি এই 'কুল এফেক্ট' কাজ করে, তাহলে আরো মুশকিল। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা আর কি! অনেকের কাছেই এই স্মৃতি উজ্জ্বল। আর রাত জেগে সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেল তৈরি করা। চেয়ে চিন্তে, আবদার করে এক'দুটাকা চাঁদা তোলা। আর নিজের বাবার পকেট বা মায়ের পুঁটুলি কেটে পুজোর জন্য দান মারা! প্যান্ডেলও প্রায়ই সেল্ফমেড। সুতো দিয়ে আর কাগজের ঝালর কেটে নিজস্ব কায়দায় করার প্রতিযোগিতা! তা নিয়ে মতান্তর আর মতবিরোধের শেষ নেই! তবু মায়ের আশীর্বাদে শেষ অবধি দিব্যি দাঁড়িয়ে যায় আস্ত মন্ডপ। আর রাতে ফুলচুরি। এক অপরিহার্য অংশ! যে যত মুন্সিয়ানা দেখাবে, তার কদর তত বেশি। টি.আর.পি বই কি! আশপাশের বাড়ি থেকে শসা, জামরুল ইত্যাদি যদি মিলে যায় ফুলের সাথে, তাহলে তো পোয়াবারো! রাতজাগার পরে সকাল সকাল সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি প্রদান। এক 'মাস্ট বি' ব্যাপার। আর পুরোহিত নিয়ে টানাটানি এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ' সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে.......'এই মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আকুল(তখনো কুলহীন!) প্রার্থনা। মা, অংকটা মেরামত করে দাও। ইতিহাসের লম্বা লম্বা উত্তর আর জ্যামিতির উপপাদ্যের সঙ্গে বাংলার সমাস ও সন্ধিটা উতরে দিও মা! আনকোরা হলুদ পাঞ্জাবি আর আনকোরা হলুদ শাড়ির মধ্যে দৃষ্টি বিনিময়ও হয়ে যায় কখনো সখনো। তার থেকে দু'একবার স্থায়ী কিছুও হয়ে যেত কদাচিৎ। এই জন্যই সরস্বতী পুজো বাঙালি ছেলেমেয়েদের জীবনে আনে প্রেমের প্রথম জোয়ার। অনেক ক্ষেত্রেই তা অপরিণত ও অবিকশিত। অর অস্থায়ীও অধিকাংশ সময়। পুজোর ভোগে খিচুড়ি আর বাঁধাকপি ঘন্ট। স্কুলের পুজোয় দলবেঁধে আনন্দ করা। আর দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়া তো আছেই! স্কুলে ছবি আঁকা, আবৃত্তি, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে সংস্কৃতির পরিসরকে একটু ঝালিয়ে নেওয়া! সব মিলিয়ে সরস্বতী পুজো বাঙালির বিদ্যাদেবীর আরাধনার সাথে সাথে এক সাংস্কৃতিক ও মানসিক বিকাশের পথেও বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়া। আজ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরস্বতী পুজোর সেই অনাবিল আনন্দ, নিস্পাপ স্ফূর্তি আর পবিত্র উন্মাদনা কোথায় যেন বেশ খানিকটা উধাও! তবু আশা রাখতেই হবে! আদর্শ ও মূল্যবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ছাত্রদল সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আজ মা সরস্বতীর কাছে এটাই প্রার্থনা।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register