|| ভাষাতে বাংলা, ভাসাতে বাংলা || সংখ্যায় দীপক বেরা
by
·
Published
· Updated
একুশের চেতনায় মাতৃভাষা
এ ভাষায় ধানের রঙ হয় সোনালী
নদী হয় কুলকুল বেগবতী প্রবাহিণী
এ ভাষায় ঘরের উঠোনে খেলে যায়
ঢেউ ঢেউ ফাগুনের দখিনা বাতাস
এ ভাষার রূপ-রস-গন্ধ মাখা আভাস
অনাবিল দোলা দিয়ে যায় হৃদয়ে
খড়ের আঁটির মত শুয়ে থাকে
ঘন কালো কেশ প্রেয়সীর পিঠে
এই ভাষার সুরে গোচারণ মাঠে
রাখাল ছেলেটা হয় বংশীবাদক
রোদ-ছায়া মেঘ আঁকে রামধনু রঙ
সাতরঙে আকাশ হয় ময়ূরপালক
বাংলার ধুলোমাটি, সজল বাতাসে
স্নিগ্ধ আকাশের নিচে মিশে আছে
আমাদের প্রাণের ভাষা, বাংলা ভাষা!
কারা যেন কেড়ে নিতে চায়—
আমাদের আজন্মের মাতৃভাষা
আমাদের মুখের সেই চিরন্তন ভাষা!
বুকের মধ্যে নিরন্তর তাই…
পলাশের আগুন জ্বলে ধিকিধিকি
কৃষ্ণচূড়াও আছে তার দোসর সই
মধুকর সপ্তডিঙা নিয়ে দিচ্ছে ডাক,
“কে আছ সুজন তরুণ কান্ডারী ভাই
এমন ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ সমুদ্রে
ভাসিয়ে রাখতে পারবে কি ভাষার তরী
নাকি, ডুবেই যাবে অতলে?”
অতল জলের তলায় মরণের হুঁশিয়ারি!
কাল সারারাত ঘুম ছিল না ওদের চোখে
ভোরের লাল সূর্যটা উঁকি দেয় পূর্ব-দিগন্তে
বেলা বাড়ে ক্রমশ..
দামাল ভাইদের শিরা-উপশিরা জুড়ে
জেগে ওঠে বিদ্রোহী কবিতার নজরুল
মহামানবের সাগরতীরে দাঁড়ায় রবীন্দ্রনাথ!
২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
সেদিন বাংলা ভাষার গণদাবিতে—
১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে ফেটে পড়ে
জমাট বাঁধা দীর্ঘ-পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ
গর্জে ওঠে মাতৃভাষার দাবির গান
মুষ্টিবদ্ধ হাতে কলিজা ফাটানো দৃপ্ত-স্লোগান!
হঠাৎ, ধেয়ে আসে,
ঝাঁকে ঝাঁকে পুলিশের বুলেটের আওয়াজ
বারুদের ঘ্রাণে, ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ
তরুণ-বুকের তাজা রক্তে ভেসে যায় রাজপথ!
সেদিনের ডানাপোড়া পাখিরা আর ঘরে ফেরেনি..
নিঃশব্দ নির্জনতায় কবরের নীরবতা
মায়ের আঁচল ছুঁয়ে রেখে যায় প্রলয়দাগ
বুকের আঁচল জুড়ে রক্তরাঙা ঝড়ের ত্রাস!
সেদিন,
গঙ্গা-পদ্মার জলও সেজেছিল লাল রঙে
মাথার উপর একুশে ফেব্রুয়ারি’র সূর্যটা
দাঁড়িয়েছিল কুর্নিশ করে বীর সেনানীদের
এই মহাবিপ্লবের উজ্জ্বলতম সাক্ষী হয়ে!
পোড়া ডানার গন্ধে চরাচরে তখন মিশে যায়—-
একুশের অনির্বাণ চেতনায় বীর শহীদের আত্মাহুতি
ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাস, বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি
“আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” এর গৌরবময় স্বীকৃতি!