• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক বড় গল্পে বদরুদ্দোজা শেখু (পর্ব – ১)

নানার হুঁকো – ১

খেজুর বনে বাঘের মুখে

আমার এক মামাতো নানার চাচাতো ভাই
ছিল ইমরান নানা। গাঁজা দিয়ে হুঁকো টানতো।আফিম খেতো। ইয়া ব্বড়ো পাকানো গোঁফ। চোখদুটো জবা ফুলের মতো টকটকে লাল।
যেমন তাগড়াই জোয়ান তেমনি তার হিম্মতৎ আর উপস্থিত বুদ্ধি।
সে অনেককাল আগের কথা। তখন সাগরদিঘির মনিগ্রাম ভূমিহর এলাকা জুড়ে ছিল বিস্তীর্ণ শালবন।তার আশপাশে প্রচুর খেজুরবন ও তালবন ছিল। শালবনে বাঘ থাকতো।
ইমরান নানা, শীতকালে ভূমিহরের খেজুরবনে রস লাগাতো।তার মাথায় থাকতো পাগড়ি , গায়ে ফতুয়া, হাতে পাকানো সড়কি- লাঠি, গামছা-বাঁধা কোমরে ধারালো হেঁসো, মোটা রশি, কাঁধে রসের কলসীর বাঁহুক। দুপুর থেকে সে গাছ থেকে রস নামাতে শুরু করতো , শেষ ক’রে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দশটা হ’য়ে যেতো।
একদিন হলো কি—- তখন প্রায় রাত আটটা হবে। পূর্ণিমার রাত। তখনো তার রস নামানো শেষ হয়নি। উঁচু গাছের মাথার গোড়ায় সবে উঠেছে, আর একটা চিমকুটে দুর্গন্ধ পেলো। নীচে তাকিয়ে দ্যাখে, একটা শেলা বাঘ গাছের গোড়ায় এসে শুয়েছে আর তার দু’টো বাচ্চা ,ঠিক বিড়ালের মতো, তার গায়ে পিঠে উঠে লাফালাফি ক’রে খেলা করছে। বাঘটা উপরে তাকিয়ে আছে। চোখদুটো আগুনের গোলার মতো জ্বলছে ! নানার তো চোখচাঁদি লাগার জোগাড়। সব্বোনাশ !
আর তো সকাল না হ’লে সে নামতে পারবে না ! বুদ্ধি ক’রে সে তক্ষুণি তার রশি দিয়ে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে শক্ত ক’রে খেজুর গাছের সাথে বেঁধে ফেললো যাতে সে অজ্ঞান হ’য়ে গেলেও প’ড়ে না যায়। সে খেজুরগাছের ডগায় বাঁধা , আর নীচে সেই বাঘিনী তার বাচ্চাদের নিয়ে ব’সে। আসলে ও মানুষের গন্ধ পেয়েছে।
ওদিকে রাত বারোটা বেজে গেলেও ইমরান বাড়ি না ফেরায় তার বাড়িতে কাঁদাকাটা শুরু হলো। তাকে নিশ্চয় বাঘে খেয়েছে। পরদিন সকালে তার ভাইয়েরা সবাই খেজুরবনে ছুটলো তাকে খুঁজতে। বনের ভিতর এক জায়গায় দেখলো, রসের কলসী বাঁহুক লাঠি নামানো আছে। গাছের গোড়ায় মাটিতে বাঘের আঁচড়ের দাগ, পেচ্ছাবের দুর্গন্ধ। উপর দিকে তাকিয়ে দেখলো, ইমরান গাছের ডগার সাথে বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞান হ’য়ে গাছকে আঁকড়ে’ ধ’রে আছে। গাছে উঠে রশি খুলে সবাই তাকে ধরাধরি ক’রে কোনোমতে নীচে নামিয়ে ,ঘাড়ে ক’রে বাড়িতে নিয়ে এলো । সারাদিন সেঁকাপোড়া ক’রে তবেই তার জ্ঞান ফিরে। হুঁকো খেয়ে
এক সপ্তাহে সুস্থ হয়।- – –
তারপরেও সে ওই বনে রস লাগাতে যেতো। কিন্তু বিকাল গড়ালে আর ওখানে থাকতো না। বাড়ি এসে হুঁকো টানতো আর রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরী করতো।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।