গদ্যানুশীলনে ভুবনেশ্বর মন্ডল

অপমান

কী রে অতীন ভালো আছিস ? অতীন বোধ হয় কথাটা শুনতেই পেল না। ও এখন ফোনে ব্যস্ত। কারো সঙ্গে কথা বলছে। অরিন্দম কিছুক্ষণ ওর চেম্বারের বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। তাই মিনিট সাতেক হবে। ইতিমধ্যে অতীন দুবার অরিন্দমের মুখের দিকে তাকিয়েছে। অরিন্দম ভাবলো যখন তাকিয়েছে তখন ফোন শেষে নিশ্চয়ই কথা বলবে। কিন্তু ফোন তো করা হয়ে গেছে। কিন্তু কোন উত্তর দিল না বা ভ্রুক্ষেপও করল না। তাহলে নিশ্চয়ই দেখেনি। অতীন এখন ডায়রিতে কী একটা পড়ছে। গলা খাঁকারি দিয়ে অনিরুদ্ধ আবার বলল -কী রে অতীন ভালো আছিস ? অতীন একবার অন্যমনস্কের মত তাকিয়ে আবার ডায়রিতে মন দিল। এক সময় ওরা একসঙ্গে স্কুলে পড়েছে। খুব সখ্যতাও ছিল। তারপর অনেক উত্থান পতন। অতীন এখন এলাকার অর্থশালী প্রভাবশালী কেউকেটা ক্ষমতাবান। ওর একটা অঙ্গুলি হেলনে কিনা হয়। ওকে ছাড়া এই মফঃস্বল শহরের যেকোনো উৎসব অনুষ্ঠান যেন শিবহীন যজ্ঞ। ওর একটা সংগঠিত বাহিনীও আছে। সে বাহিনীকে লোকে ভয় পায়। কিছু চাটুকার মাছির মত সব সময় ওর পাশে ভনভন করে। তুলনায় অনিরুদ্ধ একেবারেই ছাপোষা। ওর তেমন কোন পরিচিতিই নেই। অর্থ ক্ষমতাহীন অতি সাধারণ মানুষ । কেরানির কাজ করে। আর ছোটখাটো একটা সেবামূলক সংস্থা চালায়। ওদের সংস্থার বাৎসরিক অনুষ্ঠানে অতীনকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণপত্র দিতে এসেছে। ভেবেছিল যতই ব্যস্ত হোক,পুরনো বন্ধু তো? না করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আসবে। ও এলে অনুষ্ঠানের জৌলুস বাড়বে। এই আর কী। কিন্তু অতীন যে পাত্তাই দিচ্ছে না। দেখে না দেখার ভান করছে। ওর নাম ধরে তুই বলে ডাকাটা বোধ হয় ঠিক হয়নি।  অনেক বড় হয়ে গেছে তো ! ওর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মেলানোর মতো যোগ্যতা অনিরুদ্ধর আছে কী ? নিজেকে এখন খুব ছোট মনে হচ্ছে অনিরুদ্ধর। ভাবছে না এলেই ভালো হতো। মানুষ বড় হয়ে গেলে পুরনো দিনের কথা কে আর মনে রাখে ? হঠাৎই একটা রাস্তার কুকুর অতীনের সিকিউরিটি গার্ডের অন্যমনস্কতার সুযোগে চেম্বারে ঢুকে পড়ল। অতীনের পি এ ধমক দিয়ে সিকিউরিটি গার্ডকে বললেন -জগা করছিস কী? কুকুরটাকে বের করে দে। দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না। সিকিউরিটি গার্ড হেই হেই করে তাড়া করল কুকুরটাকে। অনিরুদ্ধ আর কাউকে কিছু না বলে আমন্ত্রণপত্রটা চুপি চুপি পকেটে পুরে পা রাখল রাস্তায়।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *