কর্ণফুলির গল্প বলায় বিপুল খন্দকার

চিঠি !
অনার্সের রেজাল্ট বের হল। ইউনিভার্সিটিতে দুই সেকশনে ৭৫জন করে ১৫০ ছাত্র- ছাত্রী। কেমন করে যেন এদের সবার মধ্যে আনিস প্রথম হলো। বিভাগে প্রথম হওয়া চাট্টিখানি কথা তো আর নয় ! আনন্দে আত্নহারা আনিসের মাথায় এবার একটা প্রেম করার খায়েশ এল। আনিস থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের ২২৮ নম্বর রুমে । তার রুমের অন্য তিনজন রুমমেটের সবারই মনের মানুষ আছে। একজন রুমমেট মন্জু ওরফে পিন্টু আনিসের উপজেলারই ছেলে আর আনিসের সাথে অর্থনীতিতে একই বর্ষে পড়াশোনা করে। সে আবার বিবাহিত। সুযোগ পেলেই সে রুমের অন্য সবাইকে তার স্ত্রীর সঙ্গে কাটানো একান্ত সময়ের ঘটনাগুলো রসিয়ে রসিয়ে গল্প করে। শুধু আনিসেরই কেউ নেই- শুধু তাকেই জিজ্ঞাসা করার কেউ নেই “চোখ কেনো লাল?”
বিষয়টা মাথায় এলে আনিসের কেমন যেন দু:খ দু:খ ভাব লাগা শুরু হল। আর বুকের যেখানে হৃদপিন্ড ধুক ধুক করে সেখানে কেমন যেন একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু করল। আনিসের এই দু:খবোধ দ্বিগুণ বেড়ে গেল যখন তার এক রুমমেট যে কিনা তাদের বিভাগে অনার্সে একমাত্র তৃতীয় বিভাগ পাওয়া ছাত্র , সে ও যখন আনিসকে দেখিয়ে দেখিয়ে তার প্রেমিকার দেওয়া রুমাল দিয়ে আনিসের সামনে ঘন ঘন মুখ মোছা শুরু করল। তার সেই রুমালের মাঝখানে আবার সুইঁ সুতো দিয়ে সুন্দর করে লেখা “ভূলনা আমায়”।
ইজ্জত কা সওয়াল ! একে তো নিজের দু:খে নিজেরই মর মর অবস্থা, এদিকে রুমমেটদের কাছেও আনিসের মান-সম্মানেরও তেরটা বেজে যাচ্ছে । কিন্তু কি করবে? কাকে প্রপোজ করবে? কে আছে?
অনেক ভেবে চিন্তে আনিস দেখলো সম্ভাবনাময় বেশ কয়েকজনের মধ্যে আনিসের পাশের গ্রামে তার এক লতায় পাতায় দূর সম্পর্কের কাজিন আছে। সে দেখতে শুনতে ভালই। ছোটবেলা থেকেই আনিস তাকে দেখে এসেছে, আর সেও আনিসকে চিনে আদ্যাপান্ত। তাদের দেখা হলে সাধারণ কথাবার্তা সব সময়ই হয়। তাকেই ষাঁড়ের চোখ বানিয়ে,আনিস একটা দিলাম একটা চিঠি ছেড়ে দিলো। সারারাত জেগে আনিস সেই চিঠি লিখেছিলো ইনসেপ্টা ওষুধ কোম্পানির এক নীল প্যাডে, গ্লোসি কলমের কালি দিয়ে। কি কি লিখেছিলো তার পুরোটুকু এখন আর মনে নেই তবে সে সময় প্রচলিত বেশ কিছু ছন্দ লিখেছিলো। যেমন:
গাছের পাতা নাড়ে চড়ে
তোমার কথা মনে পড়ে।।
গাছটি হল সবুজ বন্ধু
ফুলটি হল লাল
তোমার আমার ভালবাসা
থাকবে চিরকাল।।
প্রেমের পবিত্র শিখা
চিরদিন জ্বলে
স্বর্গ থেকে আসে প্রেম
স্বর্গে যায় চলে।।
পুরো পাতা জুড়ে এই রকম নানান ছন্দ লিখেছিলাম।
সেইসাথে অর্থনীতি পড়তে যেয়ে ব্যাবসায় অংক ক্লাশে শেখা সমীকরণ অনুসরণ করে একটা ফর্মুলাও লিখেছিলো
যদি
আমি + তুমি – ভালবাসা = ০ — (১) হয়,
তাহলে:
আমি + তুমি= ভালবাসা ——–(২)
একইভাবে
আমি = ভালবাসা- তুমি—–(৩)
আর
তুমি = ভালবাসা-আমি —–(৪)
লেখা শেষ হলে সেই চিঠির ওপর আবার মিল্লাত ঘামাচি পাউডার ছিটিয়ে দিয়ে খামে পুরে ডাক বাক্সে ফেলার আগে বিসমিল্লাহ বলে খামের ওপরে একটা চুমুও দিয়েছিলো। সেই চিঠির ভেতরে দিয়েছিলো হলের গোলাপের ঝাড় থেকে সদ্য তুলে আনা কিছু গোলাপের পাঁপড়িও। ইউনিভার্সিটির স্টেডিয়াম মার্কেটে চিঠি পোস্ট করতে যাবার সময় আনিস সেদিন সুন্দর করে চুলে সিঁথি করে পরেছিলো নীল রংয়ের সবচেয়ে প্রিয় ফুলহাতা শার্ট । চিঠি পাঠিয়েছিলো সেই কাজিনের কলেজের হোস্টেলের ঠিকানায়।