চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার। গাছপালার রঙ কালচে। জঙ্গলে ভর্তি। একটা চারচাকার বড় গাড়ি চলার মতো পিচের রাস্তা। প্রায়ই এখানে মানুষ খুন করে ফেলে যায়। সময় গণচিতা। দূরে পুড়ছে একসারি লাশ।
মুষলধারে বৃষ্টি। একটা অ্যাম্বুলেন্স রাতের অন্ধকারকে খানখান করে এগিয়ে এলো। একটা বড় পাকুড় গাছের নিচে গাড়িটা থেমে গেল। আবরণে ঢাকা দুজন নেমে এলো গাড়ি থেকে। পিছনের দরজা খুলে কালো পলিথিনে মোড়ানো মৃতদেহ এক এক করে নামিয়ে রাখলো। চারটে প্যাক।
পকেট থেকে একটা লিস্ট বের করে একজন বললো – কালু নাম্বারটা আর নামটা মিলিয়ে নে।
ঠিক আছে বলে প্রথমেই কমলি চ্যাটুজ্যেকে দুজন দুদিকে নুনের বস্তার মতো ধরে কিছুটা দূরে ধপাস। কমলির ডান দিকে মহিদুল ইসলাম। বাঁ দিকে মিস্টার জোসেফ আর পায়ের নিচে কালু ডোম। কাজ শেষ। অ্যাম্বুলেন্স ঘুরিয়ে আবার হাসপাতাল।
এখন ……..
পলিপ্যাকে থাকলেও আত্মা ভিতরে।
কমলির শরীর ঘিনঘিন করছে আশপাশের দেহ আর তাদের জাতপাতের ছোঁয়ায়। মুছুরমান, ইংরেজ সাহেব আবার ডোম। বাপরে। কমলি ভাবে তার কোথায় চন্দন কাঠে পোড়ার কথা না বেজাতগুলোর জন্য গঙ্গা পাওয়া আর এ জনমে হলো না। নিজের লাশকে ঘৃনাই ভরিয়ে এখন।
আমি…..
আমার এই দেখা আর জাতপাত ঘৃনায় । ভাবি কেন এই বৈষম্য? পৃথিবীর সৃষ্টি আমাকে বারবার আহত করে। চিন্তায় আসে এমন যদি না হতো। সমবণ্টনে থাকতাম যদি। একই ধরণের পোশাক। বন্ধুত্বের বন্ধন আর প্রতিদিনের ভাগ করে নেওয়া জীবন যন্ত্রনা। দুঃখ কষ্টহীন সাবলীল জীবন। টেবিল একটাই যেখানে থাকবে সম্মিলিত আনন্দ। এ চিন্তায় হালকা ক্রমশ। উড়ছি আর ভাসছি অনন্ত খোঁজে। আকাশ ছুঁয়েছে মাথা। উপরে নেই প্ৰজন্মের মিলনক্ষেত্র। মৃত্যু আর শেষ এক জন্মে । না পাওয়া পরজন্মের অঙ্গীকার তাহলে কি এখানেই শেষ? রাত প্রদক্ষিণ প্রতিদিনের । কেন এই জাত আর বর্ণ বৈষম্য। আমার চোখের পাতা আস্তে আস্তে নির্বিকারে খুলছে। ভয় লাগে যদি দেখি এই ঘৃণিত প্রাণী যারা নিজস্ব নিয়মে। বিছানায় উঠে উপর তাকিয়ে। দেওয়ালে টিকটিকি আর আরশোলার ঝটপটানি। দ্রুত উঠি বিছানা ত্যাগে। তুলে নিই লাঠি। বাঁচাতে চাই আমি।