যদি। প্রতিদিন রাত্রে ঘুম না আসে? যদি দুঃস্বপ্ন দেখি? রাত যদি যন্ত্রণার রাত হয়। প্রশ্নাবদ্ধ । দেখে নিই নাক শরীর। নাহ। সব কিছু ঠিকঠাক। ঘুম ভেঙে নাকে হাত। শ্বাস পড়ছে।
আগে
মাথায় কে যেন চুলে বিলি কেটে ঘুম পাড়ানি গান গাইতো। যে গানে থাকতো মধুর শব্দ। খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়োলো বর্গী এলো……
আচ্ছা
বর্গীরা যে কোথায় গেলো কে জানে। উৎপাত তো আজও আছে। আমার জানতে চাওয়ার শেষ নেই। কি অপরাধে আজ গৃহবন্দী এখন? কে যেন পিছন থেকে বললো – থাক ব্যাটা। আমাদের সময় এখন।
আর আমি
প্রতিনিয়ত যুদ্ধে। সীমাহীন এক অশীরীরী আত্মা যেন। বুক ছেঁচড়ে চলছি এক আদিঅনন্তের জলছবির আবহে। দিন আসে। রাত হয়। পাখি ডাকে। যে পাখি গান গাইতো তার সুর বেসুরো লাগে। প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে লড়াই। আর আয়নায় মুখ দেখি না। অ্যালবাম ধুলো জমে জমে ধূসর। একদিন দেখি বেড়াল কুকুর পা মাড়িয়ে। আমার ক্ষোভ নেই এখন । নিঃস্তব্ধ জীবন আর এই চার দেওয়াল যেখানে রেখে যাচ্ছি এক সিন্দুক। লেখা থাকছে – আমি জন্মেছিলাম।
শেষে আবার
রাত এলেই কেমন যেন মনে হয় সকাল আসবে তো ? দুঃস্বপ্ন দেখবো না তো ?
সুন্দর সকালে সোনালী রোদ কি লাগবে আমার গায়ে? আমি ছুঁতে পারবো তো সবকিছু? মনে আশা। সময়আশা জাগিয়ে তোলে এক নিশ্ছিদ্র বন্ধনের জোরালো মুহূর্ত।
রাত প্রতিদিন – ২
রাত এখন বারোটা। ঝি ঝি পোকা শব্দ। দূরে রেলগাড়ির আওয়াজ। সারাদিন শব্দ শুনতে পাইনা। কালা নাম আমার। ডাক্তার অনেক হয়েছে। অসুবিধা কিছু নেই। দু’কান শব্দবন্ধে কাটে। বকাঝকা। আমি নির্লিপ্ত থাকি। ভুল করেও উত্তর দিইনা। জানি কানে না শোনা মানুষের অমূল্য সম্পদ- চুপ থাকা । আজ? ইঁদুর দৌড়ে গেল। চিক চিক শব্দ আর দূরে কুকুরের ডাক যেন আধুনিক গিটারের ধ্বনি। আমি কান চাপায় এখন।
বেহালা বাজায় অতীন কাকা রাতে।অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ। তারপর আর বেহালা বাজছে না। আমি শুনতে পায়। কেও বিশ্বাস করে না। নাই বা করুক। ভাবি – অতীন কাকা বেহালার আওয়াজে মিলিয়ে যাই নি তো ? হতেই পারে। তার সুর আমাকে রোজ কাঁদায় । শব্দ বেহালায় যে সুর থাকে সে সুর প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক সাবালিকার না পাওয়ার অসুখ। জানি। এ সুর আমাকে আহত করে। তবে কি অতীন কাকা না পাওয়ার কষ্টের শিকার। এইসব মাথা ব্যাথাতে কি আসে যায় কারণ এখন রাত্রিকাল। ঘুমোনোর রাত্রি। স্বপ্ন দেখার রাত্রি।
চেষ্টার ঘুমে এখন। অহর্নিশ। ত্রুটিমুক্ত চেষ্টা। চোখ যদি আমাকে ঘুম দেয় আমি নতুন সকাল দেখবো। আবার দৌড়াবো। অশান্ত দৌড়। সারাদিন ছুটবো পেশীবহুল ঘোড়াগুলোর মতো। রক্তঘাম। কিন্তু এখন?
ভৌতিক পরিস্থিতি যা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতদিন ভয় আমাকে গ্রাস করতে পারেনি। ভয় পাচ্ছি কেন? চোখপাতা এক হচ্ছে না। ঠুক শব্দ হলেই কেঁপে উঠছে শরীর। উঠে বসছি বারবার। জল খাচ্ছি ঢকঢক। এই রাত কি দুঃস্বপ্নের না বাঁচার, ঠাওর করতে পারছি না।
টয়লেট। সাহসী মানুষ দুর্বলে পরিণত। চোখে জল ছিটে দিয়ে দেখি সামনের আয়নার ভিতর থেকে সুন্দর ফুটফুটে এক বালিকার মুখ। এক গাল হাসি। সরলতার হাসি। যে হাসি আকৃষ্ট করছে মুহূর্তের সময়কে। অবাক বিস্ময়ে। ……………ভয়মুক্ত।