গদ্যের পোডিয়ামে বিপ্লব দত্ত

ফিরেছি বধ্যভূমিতে 

চারিদিকে সময়চিত্র। আমার রূপ এখন অন্ধকারে ঢাকা। মুখ নেই, চোখ নেই, নাক নেই আছে এক শরীর। যে শরীরে ভালোবাসার গন্ধ তাও যেন তামাটে রং হতে হতে ক্রমশ শুকনো কাষ্ঠখণ্ড। চাওয়া ছিল, স্বপ্ন ছিল আর ছিল বেঁচে থাকার অঙ্গীকার। সময় পাল্টায়। বয়স বাড়ে । প্রতিদিন এখানে সূর্য ওঠে । আমি নিয়মমাফিক। রক্তমাংস জমাট বাঁধছে । মুখ তুলে দেখতে পাচ্ছি না আর। দলাপাকানো অন্তরদৃষ্টি আর
গুটিয়ে যাওয়া দুহাত কিছুই আর চাই না। ছিনিয়ে নিলিরে সব । ছিনিয়ে নিলি ।
চেয়ে দ্যাখ চারিদিক মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপ। মানুষ হাঁটছে বুক পেতে । আগামীদিনের থরে থরে স্বপ্নহীন লাশ। রক্তহীন লাশ। প্রেমহীন লাশের পাহাড়। যে পাহাড়ে থাকবে ক্ষতের রক্ত। আমি কি এখন নির্লিপ্ত এক প্রাণী? শুন্যতার খেলায় মত্ত আজ।
পাহাড় ডিঙিয়ে পাহাড়। অবসাদের পাহাড়। স্বপ্ন ভাঙা পাহাড়। ভয় আমায় চেপে ধরেছে । ফুলেদের সৌন্দর্য্য পাখিদের ডাক এসব এখন অতীত। বাতাসে বিষ। আমি দেখতে পাচ্ছি না। সব অন্ধকার। আমার দেহের জন্য অপেক্ষামান একরাশ মানুষপ্রাণী ।
নাহ্। এবার একটু প্রানভরে শ্বাস নিই যে শ্বাসে আছে বাঁচার মুক্ত স্বপ্ন। আমি হালকা হচ্ছি ক্রমশ। উঠছি , উঠেই যাচ্ছি । প্রানভরে নতুনের স্বাদ। বনবন ঘুরছি হাত ঘুরিয়ে । এখানে মৃত্যু নেই আছে অনাবিল আনন্দ। হঠাৎ ভাবনায় আসে প্রিয়জন। আবার নামছি । নেমেই যাচ্ছি । অন্তরাত্মা চেয়ে দেখছে অগণিত শীর্ণকায় হাত আমায় ডাকছে । আমি আবার বধ্যভূমিতে । যে ভূমি আমাকে দিয়েছে জন্ম আর বেঁচে থাকার অধিকার। এভাবেই থাকবো নতুন সূর্যের অপেক্ষায়।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।