সাহিত্য ভাষান্তরে বাসুদেব দাস

সার্জন এবং মেঘগুলি

নীলিমা ঠাকুরীয়া হক
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ

মেঘগুলি ধূসর এবং ভারী হয়ে নেমে আসছে
বেদনা শোষে শোষে খসে পড়ে নীলিমার বুকের
চাদর,আচম্বিতে

মেঘগুলি জমা হয় বিশাল ঘরটির চৌহদে
বন্ধ কাচের জানালায় মুখ ঘষে ,ভেন্টিলেটর দিয়ে
প্রবেশ করে,দরজাগুলিতে ঠোকরায়

কখনও কারও নিশ্বাসে প্রবেশ করে
ফুসফুসে ঘর বানায়,দুচোখে বর্ষার আকাশ
ফুলে ফেঁপে বর্ষিত হয়

তখনই দরকার হয় তার ,বড় দরকার
শুভ্র এপ্রনের ডানা ঝাপটে তাকে আসতে দেখলেই
সরে যায় দলবদ্ধ মেঘগুলি

তাঁর কাছে দিন-রাত সমান
তাঁর জন্য যখন-তথন প্রস্তুত বিশেষ মঞ্চ-
ইস,কী তন্ময় হয়ে নাচতে থাকে ছুরিটা
কাঁচিটাও যেন ব্যালেরিনা
অস্ত্রোপচার কক্ষের আকাশে
জীবন-সূর্য জ্বলে
অদ্ভুত ললিত এবং ধারাল নৃ্ত্য দেখার জন্য
ঘুরে ঘুরে নাচে ছুরিটা
ত্বক এবং চর্বির কোমল গালিচায়
গভীর অরণ্যের ভেতরে
দ্রুত তালের এক লহমায় পার হতে হবে
রক্তের ঝরনা,সিরা-ধমনীর বেগবান নদী

গোলাপী মখমল পর্দা মাংসপেশীর
সরিয়ে দিলেই উদ্ভাসিত
রহস্যময় শরীরের মঞ্চ
এই ধরনের ধ্রুপদী পরিবেশে তিনি মগ্ন না হয়ে পারেন না
মনে হয় ছুরিটাই নাচছে
আসলে নাচছে দর্জি পাখির
ঠোঁট পরা তাঁর আঙুলগুলি
দস্তানা পরা হাত দুটি যন্ত্রণার
ঠিকানা জানে
শরীরের গভীর অরণ্যে
ছুরি আর কাঁচিটি দিয়ে একটি নৃ্ত্যের
সংরচনা করে করে
খুঁজে বের করে যন্ত্রণার উৎস ,বিষের চারা
উৎখাত না করে ছাড়েন না তিনি

ঈগল চোখের মানুষটি নাকি একজন সার্জন

জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া মেঘগুলি দেখে-
রক্তের পুকুর থেকে তিনি তুলে আনেন যন্ত্রণা
ধাতব পাত্রটিতে রাখে
আর অচেতন থেকে চেতনায় ফিরে আসা ব্যক্তির
চোখে স্বপ্নের নেশা লেগে থাকে
‘সব ঠিকই আছে’,তিনি বলেন আর
ছুঁড়ে দেন এপ্র’নটা মেঘগুলির দিকে
মেঘেরা আশ্বস্ত হয়

একজন সার্জনের কথায় ভিজে মেঘগুলির
ডানা গজায় এবং উড়ে যায় উষ্ণতার উদ্দ্যেশে
নীলিমার চাদর হতে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।