• Uncategorized
  • 0

গল্পেরা জোনাকি তে বিপ্লব দত্ত

রাত প্রতিদিন – ৫

পার্ক স্ট্রিটে সত্যভামা

চলছে যেভাবে কারাগারে বন্দি। মৃত্যুভয়ে। ইটের পাঁজরে রক্তের দাগ। তবুও আছি আর যেভাবে আছি সূর্যাস্ত আমার কাছে মৃত্যুকালীন যন্ত্রণার প্রতিদিনের ঘন্টাধ্বনি। পুরোনো দেওয়াল ঘড়ির কাঁটা যেন চলতেই চাই না। পেন্ডুলামের আওয়াজে সময় গণনা। চলুক স্মৃতি, আসুক যন্ত্রণা আর ভালোলাগার আনন্দ। ইদানিং মশা নামক জীবকেও ভয় লাগে। যদি শ্বাসনালী দিয়ে সোজা হৃদযন্ত্রে যায় তো সংক্রামিত অসুখ। আজ মুখচাপায় আমি। টেনে নিয়েছি পাতলা চাদর। ঘুম নাই বা হোক, দিন তো আছে। দেখিনা একবার পিছন ফিরে।
সেদিন……….
পার্ক স্ট্রিটের ডানদিকের ফুটপাথ ধরে হাঁটছি। ব্যস্ত মানুষদের ধাক্কা। যাচ্ছি আলাভোলার মতো। এ অভ্যাস আমি পাল্টাতে পারিনি। জন্মগত অহংকার। ঢোলা পাজামা আর লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবি। বড় চুল কাঁধ পর্য্যন্ত। বুদ্ধিজীবী মানুষ যার ঠিকানা কাঁধব্যাগ। যাচ্ছিলাম…………
আমি সত্যভামা। কিছু দিয়ে যান। পেটে কিছু পড়েনি সকাল থেকে।
এগিয়ে গিয়েও নামটা এক অদ্ভুতভাবে আমার গতিকে আটকে দিল। ফিরে দেখি এক মহিলা ভিক্ষুক। ছেঁড়াফাটা লম্বা ঝুলের সালোয়ার কামিজে। সারা মুখে আঁচড়ের কালো দাগ। কারা যেন অনেক আগে ছুরি দিয়ে দাগ কেটে দিয়েছে। মুখ হাত পা ময়লায় ভর্তি থাকলেও কিছু অংশে দুধেল চকচকে আকর্ষণে আমি। বয়স হলেও তার না পাওয়ার চোখ বলে দেয় – একদিন এ কাহিনী শেষ হবে হয়তো। আমার বদঅভ্যাস নতুন সন্ধান আর এই আর্তি আমাকে কাছে টেনে নিয়ে যায়। পাশে বসি হাঁটু গেড়ে। মানিব্যাগ থেকে বের করে পঞ্চাশ টাকা গুঁজে দিলাম হাতে। জানার ইচ্ছে প্রবলগতিতে……… আমি সত্যভামা।
এবার
………দুলছে সত্যভামা
জানো, আমি ভীষণ সুন্দরী ছিলাম। বাবা নাম রেখেছিলো সত্যভামা। আমার অহংকার আর সাহস এই কলকাতা শহরে পড়ার টানে। কলেজে প্রেম। কৃষ্ণেন্দু গো কৃষ্ণেন্দু। কলেজ শেষ আর দুজনে চাকরি। বিয়ে করবো ভেবেছিলাম। হয়ে আর উঠলো না।
…………কেন?
সে আর এক কাহিনী। রোজ মিট করতাম দুজনে। ওই যে বার দেখছো ওখানে কৃষ্ণেন্দু আর আমি ড্রিঙ্কস করে একদিন মাতাল হলাম। রাত কত হয়েছে মনে নেই। দুজনে বিল মিটিয়ে টলছি। এই রাস্তায় গো, এই রাস্তায়। কৃষ্ণেন্দুকে মারধোর করে আমাকে গাড়িতে নিয়ে চম্পট। আমার গলাতে স্বর ছিল না চিৎকারের। কোলপাঁজা করে চারজনে এক নির্জন ঘরে। এই যে দেখছো আমার মুখে আর সারা গায়ে কালো দাগ ওগুলো ওরা নখ দিয়ে ভালোবেসে এঁকে দিয়েছে।
তারপর?
অজ্ঞান। জ্ঞান ফিরতেই দেখি আমি একটা খাটে শুয়ে। জানলাম এটা পতিতালয়। ওরা ধর্ষণ করে বিক্রি করে গেছে। ওটা তো এই পিছনের গলিতে। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে। আমি এমন ক্ষতবিক্ষত ছিলাম সারতে সময় লেগেছিলো অনেক দিন।
…………….বলো।
হ্যাঁ। আমি পতিতা হলাম। পতিতা সত্যভামা। চলতে চলতে দীর্ঘ সময়। একদিন বয়স হলো। দর কমে গেলো। ব্যাস। এলাম চলে ফুটপাথে। ভিক্ষাটা এমনি। যদি দেখা হয় কৃষ্ণেন্দুর সাথে? চেয়ে থাকি সারাদিন এদিকওদিক। আসে না একদম। তুমি পারবে তাকে আনতে?
আমি……….
চুপ। কারণ এই সত্যভামা আছে শহর আর গ্রামগঞ্জে যারা প্রতিনিয়ত যুদ্ধে। মাথা নত। আজ রাত শেষ হলে আমার শরীরের পুরুষতন্ত্রের ঘৃণা নিয়ে আবার নতুন সকাল দেখবো।
……….সত্যভামা
এই মানুষটা শোনো গো, যদি কৃষ্ণেন্দুর দেখা পাও বলো – সত্যভামা ভালো আছে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।