মুক্ত গদ্যে বর্ণজিৎ বর্মন

ঘুরপাক খাওয়া একটা শব্দ এবং বৃষ্টি মাখা বিকেল
সম্মানীয়
কাউকে
কোন কোনদিন এমন ভাবেও কেটে যায় , কোনটা ঠিক; কোনটা বেঠিক, ঠিক খুঁজে পাওয়া যায় না । একটা গোলাপ ফুটলো কি ফুটলো না তাতে প্রেমিক প্রেমিকার কিছু এসে যায় না । ওই যে কবি বলছিল “ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত” তেমনি পার্কের বেঞ্চিতে তারা শরীর ঘেঁষে বসবে। বাদাম ভাজা খাবে, ভুট্টা পোড়া খাবে আর পড়ন্ত শীত মেখে মেখে উষ্ণতা নেবে ঠোঁটে ঠোঁট লেপ্টে। কী মনোরম! কী আশ্চর্য! এ সুখ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উষ্ণতা লাভের উপায় এর বিকল্প হয় না। কোন গবেষণাগারে তৈরি করা যায় না। এ নিতান্তই প্রকৃতদত্ত।
সন্ধ্যা হলে জ্যোৎস্না নেমে আসবে দুজনার হাতের তালুতে। মন পায়রাকে উড়িয়ে দেবে নীল আকাশের দিকে। তারপর ভাবনার সাম্রাজ্যে জড়ো হবে অনেক কথামালা। সেই কথা মালা ফুল হয়ে ফুটবে গন্ধ ছড়াবে চারিদিকে।
হাতে হাত রেখে গোলক ধাঁধাশহরের গলি গুলি হাঁটতে হাঁটতে সেতু পেরিয়ে এক নতুন দেশ নতুন কল্পনাছাওয়া ভাবনার ঘরবাড়ি তৈরি হবে একদিন ।
তারপর কোন একদিন ভাবনায় জড়ো করা শব্দের প্রকাশ ঘটবে এভাবে । কেন এবং কিভাবে এই শব্দ দুটি সন্দেহের জাদুতে ডুবে থাকে। না তা ঠিক নয়। কোন কিছুর সঠিক জানার জন্য এ শব্দ দুটি খুব দরকার । কেন এবং কিভাবে বিশ্বসেরা শব্দ । গোপনে এবং প্রকাশ্যে জপমালার চাবিকাঠি। তুই পেলি! কিভাবে পেলি? কেন পেলি?
ধরুন আপনি অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে চাকরি পেলেন । তারপর সমাজের ফিডব্যাক এভাবে আসবে। কবে চাকরি পেলি রে? কেমন করে পেলি রে? ইত্যাদি ইত্যাদি যখন যার সামনে আপনি হবেন সে বাজারে হোক, পথে হাঁটতে হোক, অফিসের পথে যেতে হোক, বাসে-ট্রেনে-টোটো তে-অটোতে দেখা পেলেই কিভাবে পেলি রে ? একটু বলিস। আপনি কোন মুডে থাকবেন কতটা ব্যস্ত থাকবেন , মাথায় সুখ নাকি দুখ বিরাজিত, সে দিকে কারো ভ্রুক্ষেপ থাকবে না । প্রশ্ন করে যাবে নদীর স্রোতের মত।
উত্তর কি এবং কেমন করে দেবেন তা ভাবতে ভাবতেই আপনাকে পাল্টা উত্তর ওরাই দিয়ে দেবে অর্থাৎ তোমার নিজের সঠিক বিষয় উপস্থাপনের মন এবং মানসিকতা নষ্ট হয়ে যাবে ততক্ষণে। এটাই এখনকার দিনের ঘূর্ণনীয়মান অবস্থার অবস্থান।
এবার ধরুন কোথাও কোন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পি এইচ ডি করার সুযোগ পেল কেউ। অনেকের মন্তব্য এরকম যে গাধা ছেলে বা মেয়ে সে পড়াশোনায় একদম কাঁচা অথচ পি এইচ ডি তে তার নাম উঠে গেল। সবাই বলবে কেমন করে পেলি রে? আড়ালে গিয়ে বলবে হুজুগ কান্ত বা খেপি খেন্তি কেন পেল পি এইচ ডি? ওর তো সেই যোগ্যতা নেই! ওর তো সেই ক্যাপাবিলিটি নেই ! ওর তো সেই ট্যালেন্ট নেই! আরো তো অনেক ছিল যোগ্যতা সম্পন্ন ছাত্র ছাত্রী তাদের না নিয়ে ওকে কেন নেওয়া হল। কেন? কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অধ্যাপক এর উত্তর দিতে পারবেন না। দেবেনও না কোনদিন । তবে হ্যাঁ সেও একদিন সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যোগ্য হয়ে উঠবে কিন্তু যারা এখন যোগ্য কিন্তু বঞ্চিত হল তাদের অবস্থা কি হবে? কেউ উত্তর দেবে? বয়ে যাওয়া সময় তারা কি ফিরে পাবে?
আসলে মানুষ হয়ে মানুষের মান নির্ণয় করাটা ভীষণ কঠিন এবং আপেক্ষিক একটা গোলক ধাঁধার মত । কেউ বলেন ভাগ্য কেউ বলেন কর্ম আসলে আমি মনে করি কোনটাই নয় একটা আপেক্ষিক প্যারামিটারে নির্ণয় হয়ে থাকে এই সবকিছুর নির্বাচন প্রক্রিয়া আর এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার কোনদিন কোন সঠিক প্যারামিটার তৈরি হবে না। হবার কথাও নয়। তবু পৃথিবী এগিয়ে যাবে । অগ্রগতি ঘটবে সভ্যতার। অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণের অস্থায়ী সেতু গড়ে উঠবে অহরহ।
পৃথিবীজুড়ে সার্বজনীন সুখ ও শান্তির কোন তত্ত্ব তৈরি হবে না। যতদিন না মানুষ নিজের আকাঙ্ক্ষার লালা ঝরা জিবে লাগাম টানতে পারবে। জীবনব্যাপী সমস্ত স্বপ্ন একটি বৃষ্টি ভেজা বিকেলেই বন্দী হয়ে থাকবে আর সমস্ত বাসনা গুলি ঘুরতে থাকবে মায়াময় ভাবনা সাগরে।
ইতি
আপনার একান্ত অনুগত
হতাশা গ্রস্ত শালিক।