কবিতায় বলরুমে অনিরুদ্ধ সুব্রত (গুচ্ছ)

উৎপাদক

যেদিন ফুরনোর গন্ধ বেরোয় আমার গা থেকে
ব্যর্থ রস মৃত-গাছ জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদে
সেদিন রিপুর শান্ত বালক পিছন বেঞ্চের নষ্ট,
বসে থাকে, বিমূঢ় আশ্চর্য মেধাহীন হতাশায়–

বীজগণিতের কত অসংখ্য সূত্র তার মনে নেই
ঈশ্বর বড়ো নিষ্ঠুর, উৎপাদকে-বিশ্লেষণ ছাড়া
তার কাছে কি কোনো সহজ মান-নির্ণয় ছিল না,
যেদিন ফুরোনোর ধুলো-গন্ধ বেরোয় গা থেকে

খানিকটা অপর্যাপ্ত বৃষ্টির পর মেঘ চুরি যাওয়া
পশ্চিমি ঝঞ্ঝার ঢঙে, এখানে সময় চুরি করেন
কোন স্যর, কী কী নতুন সমস্যার সমাধান দিয়ে,
যেন আমি পরীক্ষায় ফেল করলে উপকৃত হবে
সকল মেধাবী সতীর্থ

অথবা যারা চির প্রশান্ত
প্রথম বেঞ্চের ভালো, আমার কান্নার কী হবে
আমার সমস্ত স্বমেহনে কিছুতেই খুলছে না গ্রন্থি,
কী হবে সে সব ব্যর্থতার সরল ত্রিকোণমিতির–
এই সব গন্ধ ফুরনো দিন, কেন পৃথিবীতে এসে
প্রমাণ করবেই, গন্ধহীন বিশ্লেষণ-ব্যর্থ উৎপাদক।

 

চাকতি

পকেটে একটি রোগা দুঃখ বোধ পড়ে আছে
যতবার কিছু কিনব বলে হাতড়াই, ঠেকে তা-ই
কেনা হয়না খিদের গরম খাবার এবং শীতবস্ত্র

পাথেয় ছিল না, পথ‌ও ছিল না, হাঁটা তবু হলো
সামনে পিছনে ক্যালিডোস্কোপ জনপদ, জগৎ
পুরনো কুড়োনো মুদ্রিত সে দুঃখবোধের মুদ্রায়

যত ক্ষয়ে গেছে ছাপ, তত যে তার ধাতব গমক
রুটি অথবা রোদ, কেনা যায়না অচল পয়সায়
রাত পুষ্ট হয়ে এলে, অন্ধকার ভীষণ‌ ধান্দাবাজ

পকেট হাতড়ে মুদ্রা তুলেধরি নীল নক্ষত্র-দিক
প্রাগৈতিহাসিক এক পৃথিবী দেখা যায়— তাতে
কিন্তু সেকথা বলব কাকে, খিল হিম-জানলায়।

 

বালিঝড়

শুকনো ঠোঁট আর চোয়ালে দাগ কেটে গেছে বালিঝড়
পক্ষান্তরে শৈত্যে, চর্ম-রোম সহ্যে বিরামহীন ফাটল
শুক্লপক্ষের রাতে ধ্বংস সভ্যতার ত্যক্ত ভাস্কর্যের সঙ্গে মিশে যায়
আমিও তাকে পড়তে গেলে, পাতা উড়ে যায়—
অনার্য-ইতিবৃত্ত যেন।

শক্ত কোটরাবদ্ধ ভিজে চোখ, বিরল কান্না জ্বলে কৃষ্ণপক্ষে
ছন্নছাড়া পাথরের ভিতর থেকে, স্বতন্ত্র সংবেদনের, অন্ধকার সময়—
কতবার সম্পাদিত হয়েছে এই সমুদ্র,মাটি, বরফের আধিপত্য।

তবু কোনো কোনো ব্যক্তিগত সাড়া— পাথুরে বাগানে ক্ষুদ্র ও নরম
খসে যাওয়া আঙুল খুঁজলেও পাবে না, অনেক দূর পর্যন্ত
কেবল ধূ ধূ ভেঙে বিঘ্ন ঘটায় পর্যটক-বাতাসে, এক বিচ্ছিন্ন আর্ত
নাড়ির নৃতত্ত্বে বৃথা অন্বেষণ, আমিও শ্রোতা হয়ে চুপ থাকি, তাঁবুর ভিতর।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *