কবিতায় পদ্মা-যমুনা তে আনোয়ার রশীদ সাগর (গুচ্ছ কবিতা)

১| বিবর্ণ কবিতা

দুঃখের অতন্দ্রপ্রহরীরা কীভাবে জেগে থাকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে বুঝতে পারি না,
বুঝতে পারি না নীরব ঘুণপোকার মত গহীনে গহীনে কীভাবে বাসা বাঁধে?
জীবন তো একটায়, কেন খোঁপাখোলা বেণুনীতে বয়ে যায় বিরহ বাতাস?-
অন্তর্বেদনাতে জল টুপটাপ সাঁতার কাটে কল্পনার নদীতে
বুঝতে পারি না-বুঝতে পারি না।
রমনীয় চরিত্রগুলো নাচে-নাচে, নেচে নেচে নীড় বাঁধে চেতনার অস্তিমজ্জায়,
প্রসারিত শরীরে ছায়াময় ছলছল ছলনায় চেয়ে থাকে আকাশের নীলে।
গাঢ় দৃষ্টিতে দুহাতে দীর্ঘসময় নিঃসঙ্গতার নীলে বাসা বাঁধে অভিসারে
নিম্নমুখী নিজস্বতায় নেচে-নেচে নাচায় নীরব নদীর বুকের সমুদ্রে।
আমি এক অভিমানী পুরুষ, জেগে থাকি রাতভর
জাগতে জাগতে কল্পনার পাখা গজায় ভিতরে ভিতরে
সে পাখায় উড়ি,শুধুই উড়ি চাঁদ ধরার প্রত্যাশায়।
অতঃপর অনুভবে অন্তর্জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে জ্বেলে রাখি
কবিতার খাতায় একঝলক জ্যোৎস্নালো,
বিচ্ছেদের বিবর্ণ বনভূমিতে খুঁজি সেই লবনাক্ত ঠোঁট।

২| ভূমি আকাশ

দুপুরের জানালায় চোখ রাখো পাখির ঠিকানায়
বিবর্ণ আকাশে রঙচটে রোজ সৌন্দর্যের গভীরতায়
ভোর ভেঙে ভনিতা করে দুপুর আসে অসময়ে।
আশ্চার্য এক জীবন!- জালিমের জালে জ্বলে স্নিগ্ধ ভোর
মরুভূমির মরিচিকায় মর্মর ঝরে পড়ে জ্যোৎস্না-সুর
দক্ষিণা দরজায় দীর্ঘ হয় বিষাদের ছায়া।
সন্ধ্যা ভেজা বৃষ্টিগুলো ডুবন্ত জীবনকে ডুবাতেই চায়,
ডানাকাটা আকাশটা আকাশেই ওড়ে
দুঃখ থৈথৈ নদীর বুকে স্রোতের কান্নাগুলো কেঁদেই বুক ভাসায়।
উপরের ছন্দ ছাড়া ছুঁতে পারে না দূর আকাশের স্বর,
নিম্নমুখী নিচের জীবনটা নিচেই থাকে নিত্য
কষ্ট ভাসা রৌদ্রগুলো ভাঙনের ধারে ভেঙে ভেঙেই বাঁধে ঘর।

৩| কাল্পনিক পৃথিবী

প্রজাপতি প্রসঙ্গ এলেই বুদ্ধিজীবীরা বুদ্ধি বেচে বেচে খায়
পাখা ভেঙে ভেঙে, পড়ে পড়ে প্রজাপতিরা ছটফট করে,
সূর্যাস্তের পূর্বেই বিদ্যুৎ বাতিতে জ্বালে নির্ভেজাল আলো
দুষণ কোথায় খোঁজে সবাই,অন্ধ-অন্ধকারে ডুবে ডুবে চলে।
হায় প্রজাপতি বুদ্ধিদাতা!- ঘুমায় ভোরে, টক’শতে থাকে সারারাত।
ডানা ভাঙা প্রজাপতিরা রোদ-বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মাটিতে বাঁধে ঘর,হয় দুপুর বিকেল এবং সন্ধ্যা;
লুকাতে লুকাতে ঘাসের নিচে পূণর্জন্ম পায় ঘুণপোকা
আবার শুরু হয় লড়াই বেঁচে থাকার লড়াই-
উঠে আসে উপরে, উপরে আরো উপরে;
খেয়ে যায় কীটপতঙ্গে।
শুরু হয় কীটপতঙ্গ নিধন, মরতে থাকে
মরতে মরতে মরতে শুরু হয় রুপান্তর
জন্ম হয় মানুষের,বিপ্লবী মানুষের।-
পুড়িয়ে দেয় সব মিডিয়া,সব বুদ্ধিজীবীর মৃত্যু হয়;
গড়ে ওঠে সাম্যের সমাজ-মানুষের পৃথিবী।

৪| ঘুরে উড়ি

অস্তগামী সূর্যের সাথে আলিঙ্গন করা মানে
চৈত্রদুপুরে স্বল্পজলে ডুবে মরা,
বুকের পাঁজর ঝাঁজর করে
অপ্রেমে তৃষ্ণা মিটিয়ে
বিড়ালমুখে পায়ে চোখঘষা।
জনশূন্য মধ্যদুপুরে সাঁতার কাটা মানে
অস্তিত্বহীন টিকে থাকা,
মাটিশূন্য দাঁড়িয়ে থেকে
ক্ষমতার মসনদ পুড়িয়ে ফেলে
দীর্ঘমেয়াদী জুলুমবাজ হওয়া।
মরুর উপত্যকায় দাঁড়িয়ে থাকা মানে
পুড়তে পুড়তে নিঃশ্বেস করে
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আগুনের বুকে ঠেলে
আত্মহুতি দেওয়া।
ল্যাম্পোস্টকে ফেলে দেওয়া মানে
আলোহীন অন্ধকারে ডুবে থাকা,
ডুবতে ডুবতে মরণকে বরণ করে
নিজের হাতে নিজেকে শ্মশানে পাঠিয়ে
পুড়িয়ে মারা।
এও কী হয়!- বলো,
হরিণ সেজে বাঘের মুখে যেতে যেতে
দিনদুপুরে সবুজবনকে ধ্বংস করে
কেউ অসত্য জয়গান করে?
এসো,ভোরের সূর্য হয়ে নতুন করে
সঙ্গম করি
জন্ম দিই
অসংখ্য প্রজাপতি।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।