কর্ণফুলির গল্প বলায় আনোয়ার রশীদ সাগর

জীবন
কণা কখন কী কয়!
সব সময়ই সেজেগুজে ঠোঁট লাল করে এপাড়া-ওপাড়ায় নেচে বেড়ায়।খিলখিলিয়ে হাসে,খলমলিয়ে চলে। উঠতি বয়সের যুবকগুলো হা-করে চেয়ে থাকে।তাদের চোখের পাতা পড়ে না।
দু’বছর বয়সের সেগুন গাছের মত হেলেদুলে ঘুরেঘুরে বাতাসে দোল খায় কণার শরীর। প্রতিবেশীদের একই কথা,কণা কখন কী কয়, সে মনে রাখতে পারে না বা রাখে না।
অত সহজ-সরল মেয়ের জীবনে কষ্ট থাকে। কষ্ট এসে বুকে বাসা বাঁধে।
কারো কোনো কথা কণার কানে যায় না।সে নদীতে সাঁতার কাটে,ঝাপড় খেলে। চৈত্রের দুপুরে বাগানের মধ্য দাগ কেটে গাঁদন খেলে একপাল মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে।
এখন কণা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা-মা’র তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সকলের ছোট রাজকণ্যা কণা।
কণার বাবা কফিল বিশ্বাসের বাড়ি শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে।কামালপুর গ্রামের বড় বাড়িটা কফিল বিশ্বাসের।ছেলে দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এবং একটা ইউরোপের কোনো এক দেশে থাকে। রাজার হালে চলে সংসার।
এক সময় কফিল বিশ্বাসের ছোট বোনের ছেলে রকিব এসএসসি পাশ করে, এইচএসসি ভর্তি হয়ে,মামার বাড়ি থাকা শুরু করে।
রকিবের নানা-নানী পৃথিবী থেকে অনেক আগেই চিরবিদায় নিয়েছে। এ বাড়ির সব কিছুই মামার দখলে থাকলেও কারো কোনো অভিযোগ নেই। কারণ কফিল বিশ্বাসও তার তিনবোনের আদরের ছোট ভাই। সব বোনগুলোই কফিল বিশ্বাসকে জমি-জায়গার ভাগ না নিয়ে, স্বইচ্ছায় দিয়ে গেছে।
রকিবের বাড়ি থেকে কলেজ দূরে হওয়ার কারণে মামার বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতে থাকে।
এতদিন কণা রকিবের শরীরে হাত দিয়ে ঠেলা দেওয়া, ঝগড়া করা অথবা ঠেলাঠেলি করা সবই করেছে।
সেদিন নদীতে স্নান করতে গিয়ে ডুব খেলা শুরু করে।এক ডুবে কে কাকে ধরতে পারে?
পানির ভিতর এমন লুকোচুরি খেলতে খেলতে কণায় ডুব দিয়ে ধরে ফেলে রকিবকে। রকিবও কণাকে জড়িয়ে ধরে ভুঁস করে পানির ভিতর থেকে উঠে মাজা পানিতে দাঁড়িয়ে পড়ে। দুজনই একেবারে মুখোমুখি বুকেবুক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
তাদের বয়স হয়েছে, সেটা দু’জনে সেদিনই প্রথম বুঝতে পারে। সঙ্গম করা ছাড়া জড়াজড়ি, চুমু খাওয়াখাওয়ি কোনো কিছুই বাকি থাকে না।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সব ঘটনা ঘটে যায়।আকস্মিক এ ঘটনার সমাপ্তি ঘটলে দু’জনেই বেশ লজ্জা পেয়ে যায়।
তবে এক ধরনের নেশা তাদেরকে পেড়ে বসে। গভীর রাতকেও তারা ব্যবহার করতে থাকে। দিনের বেলা দু’জনই নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকা শুরু করে।
এই যে দূরে দূরে থাকাটাও বেশ পছন্দ করে কফিল বিশ্বাস।
একরাতে কফিল বিশ্বাস ও তার গৃহিনী মাহমুদা খাতুন ফিস ফিস করে আলাপ শুরু করে,আমাদের কণার ভালো বুদ্ধি হয়ে গেছে। মেয়ে এখন বুঝতে শিখেছে,বড় হয়ে যাচ্ছে।
মাহমুদা খাতুন বলে,তুমি কী যে বলো! মেয়ে তো অনেক আগেই বড় হয়েছে।
কফিল বিশ্বাস মাহমুদা খাতুনকে কোলের মধ্যে নিয়ে বলে,তাই নাকি?
অনেক দিন পর স্বামীর আদর পেয়ে মাহমুদা খাতুন বোঝাতে চায়,এক বছর আগে থেকে কণার রক্ত ভাঙে মানে স্রাব হয়।
কফিল বিশ্বাস হাসতে হাসতে মাহমুদাকে আরো কাছে টানে।
সে হাসির ঝিলিক রকিবের থাকার ঘরেও পড়ে। কণাও তার মায়ের মত আদর পেতে থাকে।