কবিতাগুচ্ছ মোঃ আব্দুল রহমান

১| তবুও অনন্য

সে চাঁদের জোছনা চাইল
আমি দিলাম চাঁদের কলঙ্ক যা শাশ্বত
যৌবনের খিদে মেটায়

সে গোলাপের গন্ধ চাইল
আমি দিলাম কাশফুলের ঘ্রাণ যা অটুট
ত্রিশূলে অনুভূতি রাঙায়

সে এক আকাশ মেঘ চাইল
আমি দিলাম এক টুকরো বরফ যা দীপ্ত
বিরহের আবেগ গলায়

সে বলল তুমি আমায় চাও না
আমি যা চাইলাম তা কখনোই দিলে না
বললাম, আমার চাওয়া ভিন্ন, তবুও অনন্য! শুধু তুমি

২| নিঝুম নিশীথে

ঝিরিঝিরি বাতাস উঠল
শুনশান চারিদিক
নিস্তব্ধতার স্রোত বইছে আকাশের বুকে
নিঝুম নিশীথে

হলদে কুয়াশাছন্ন চাঁদ
একা হাঁটছে
ওই কালো ধূসর মেঘের রাস্তায় চুপিসারে
আমি দেখছি কেবল
লুকোচুরি খেলা — চাঁদ আর মেঘের

লক্ষীপেঁচা এখনো ওঠেনি, ব্যাঙেরা ডাকেনি
জোনাকির আলো মিটমিট করছে
ঝিঁঝিরা শীতঘুম দিয়েছে,
এ রাতের সাক্ষী কেবল আমি আর আমার কবিতারা
নিশীথে গোপনে উৎপন্ন হচ্ছে হৃদয়ের অন্তঃস্থলে!

৩| স্ট্রিট লাইট

যেতে যেতে দেখলাম
জ্বলছে আর নিভছে, তবুও আঁধার নামতে দিচ্ছে না
মানসিকতা বদলায় নি এখনও
শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও পথটিকে আলোকিত
রাখতে চায়— চিত্তের অন্তিম শপথ

হঠাৎ আমার মুখটি ধূসর ফ্যাকাশে হয়ে গেল
হৃদয়ের দিকে তাকালাম
দপ করে জ্বলে উঠল সারা শরীর
যুগে যুগে সভ্যতার বিবর্তনের আগুনে পুড়লো দেহ-প্রাণ
মনুষ্যত্ব এখন একেবারে মরণ ফাঁদে
মানবতার নগ্ন শহরে!

মানুষ নয়, স্ট্রিট লাইট হতে চাই, আঁধারে জীবন বাঁচাতে চাই!

৪| জীবন বড়ই ক্ষণিকের

কিছুক্ষণ আগেই তুমি
রঙিন পৃথিবীতে রঙিন স্বপ্ন সাজিয়েছিলে
প্ৰিয়তমা আর সন্তানের মাঝে
সুন্দর একটি বাড়ি, একটি আকর্ষণীয় গাড়ি
সাথে আগামী প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যত লন্ডনে-

ফ্লাইটের সিটে নিষ্পাপ সন্তানেরা মিষ্টি হাসি দিচ্ছে
দীপ্ত সেলফিতে আটক পরিবারের চিরন্তন সুখ

হঠাৎ বদলে গেল নিয়তি
জানলে যখন এটাই শেষ যাত্রা — না ফেরার দেশে
ভাবতে ভাবতে মুহূর্তে আঁধারে ঢেকে গেল সব
কেবল চিৎকার, শুধুই চিৎকার, শেষ চিৎকার—
বাঁচাও! বাঁচাও! বাঁচাও! ও মাই গড!
মুহূর্তে স্বপ্নেরা ছাই হয়ে পাড়ি দিল ওপারের সিঁড়িতে
কেবল স্মৃতি হয়ে রইল একটি দিন, একটি তারিখ, একটি মুহূর্ত!
ইশ, জীবন বড়ই ক্ষণিকের!

 

৫। কথোপকথন

মাটির সহিত আকাশের ঘনিষ্টতা
পরিচিতি জন্মলগ্নে
বেড়ে ওঠা ঠোঁট ঠোঁট জুড়ে
তবুও অচেনা একে ওপরের প্রান্তদ্বয়ের পরিধি
হঠাৎ একটি সদ্যজাত বৃক্ষ মাটি ফুঁড়ে
আকাশের বুক ছুঁলো
যার হৃদে গ্রোথিত কলিকালের পাঁচালি

বিবর্তন শুধু বিবর্তন যুগে যুগে বিবর্তন
কথোপকথনে উপসংহারের পরিচ্ছেদ আধুনিক সভ্যতা ও সংস্কৃতি
প্রলয়ে কেবল মরা চাঁদ আর বিশ্ব উষ্ণায়ন
ধীরে ধীরে মরণ হল ধরিণি ও আকাশের

আজো অধুরা কথোপকথনে অপর প্রান্তে
আঁকানো তাঁদের গোপন প্রচ্ছদ!
কোনো দূরভাষ কি জানাতে পারে তাঁদের অন্তিম কথোপকথন?

 

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *