ক্যাফে গুচ্ছ কাব্যে আলোক মণ্ডল

একটি নাট্যবীজ ও এরিস্টটল
নাট্যকার একটি নাটক লিখবেন বলে প্লট খুঁজছিলেন
এরিস্টটল এসে দাঁড়ালেন
গথিক গির্জার থাম আকড়ে ধরে, বললেন,
প্লট এবং চরিত্র দু’টোই তোমার চোখের সামনে
তুমি দেখতে পাচ্ছ না, তাই হন্যে হয়ে খুঁজছো।
একবার ভালো করে চারদিক তাকিয়ে দেখ
দেখ,রাণীমা মৌলালি মোড়ে হাম্বা দিযেছেন
নির্যাতিতার ফাঁসির দাবীতে, দু’চারদিন আগে
ভিলেনও থাকতে না পেরে ওখানেই হাম্বা দিবেন
বলে মুগুর ভাঁজছেন
এই নাটকীয় প্লটে সংলাপ বসাতে কতক্ষণ!
সুতরাং কপাল কোঁচকানো হে, নাট্যবিদ,
ট্রেজেডির Climax-এ একটি গণ ধর্ষণ
ও হত্যা হয়ে যাবার পর নাটকের ফলিং অ্যাকশন তো শুরু…
এপর্যন্ত বলেই এরিস্টটল তাঁর পোয়েটিক্স গ্রন্থটি
নিয়ে চলে যেতে যেতে বললেন,
যে দেশ এতো নাটক দিনের বাস্তবতায় সে দেশে
রাতে মায়া-বাস্তবতার কোন প্রয়োজন আছে কি?
ওঝাকাহিনি
সর্ষের ভিতরে ভূত ছিল জানত না ওঝা ঝাড়তে
ভূতের সঙ্গে মিতালি করে
ছিল দড় বিদগুটে খেলা খেলতে।
মন্ত্রগুনে জাল প্যাকেট ঢুকে যেত ওর ঝুলিতে
ভালো প্যাকেট গুনতি করে
মোহর বানাত, যন্ত্রের কোটি কাট মানিতে।
একটি মেয়ে দেখেছিল সেই মন্ত্রের খেলা
হয়নি রাজি হাত মেলাতে
বলেছিল,এসব বন্ধ না হলে চিৎকার হবে মেলা
বন্ধ কর বুজরুকি সব মানুষ মারার খেলা!
ওঝা জানত তার হাতে বাঁশি, পদক আছে ঢের
যতই চেঁচাক নাম্বার পেতে
হাত মেলাবেই ঠিক
তা যদি না হয় মেয়ের ভাগ্য করবেই জেরবার।
মন্ত্রে বশিভূত হোল না মেয়ে, চিৎকার দিল বাড়িয়ে
ভাবনার বশে বুঁদ হয়ে ওঝা
এল দুই রাত্তির গভীরে
একে একে তিন কালনাগিনীরে ঝোলা থেকে দিল ছেড়ে
অসহায় খুব অসহায় একা দংশনে দংশনে ধর্ষিত হোল মেয়ে।
ধীর পায়ে হেঁটে
ওঝা গেল ফিরে গোপনে গোপন অধিক্ষকের ঘরে,
উড়িল খবর মরিয়াছে মেয়ে আত্মহত্যা করে।
খেলিছ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আন মনে
ফিগার ধরে রাখতে হলে খেলাধুলা দরকার
‘খেলা খেলা সারা বেলা এ কি খেলা আপন মনে’-
না, চলবে না এ খেলা, মনে মনে খেলা হতে পারে না, খেলতে হবে গায়ে গতরে,মাঠে- ময়দানে,
রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং, ফুটপাতে, রেল লাইনে।
খেলা হবে সকালে, খেলা হবে বিকালে
খেলা হবে চোত গাজনে,খেলা হবে বই মেলাতে,
খেলা হবে নির্বাচনে,খেলা হবে বানভাসি বন্যায়।
প্রতিপক্ষ ছায়া কি মায়া,পাথর কি গাছ ভাবলে চলবে না
খেলা হবে,নিখুঁত খেলুড়ে হয়ে খেলতে হবে
ফিগার ধরে রাখতে হলে খেলতেই হবে।
খেলা হবে যখন তখন, সুযোগ এলেই খেলতে হবে-
খেলা হবে ডাক্তার মামণির ধর্ষণের পর
খেলা হবে ডাক্তার মামণির মৃত্যুর পর
খেলা হবে হাসপাতাল ভাঙচুরের পর
খেলা হবে রোড শো করতে করতে-
‘ নির্যাতিতের ফাঁসির দাবীতে!!’
খেলা হবে নিজের ঘর সামলাতে মৃত্যু ধর্ষণ ইস্যুতে
কেননা প্রকৃত খেলুড়িই জানে খেলার মাহাত্ম্য।