T3 || প্রভাত ফেরি || বিশেষ সংখ্যায় অংশু মণ্ডল

প্রভাত চৌধুরী : উত্তরাধুনিক বাঙলা কবিতার অ্যানাক্সিম্যান্ডার
• দৃশ্যের ভিতর যে অসংখ্য দৃশ্য আছে, সেই দৃশ্যগুলিকে তুলে আনতে হবে, এবং সেই দৃশ্যগুলিকে কবিতার মতো করে সাজিয়ে দিতে হবে।
• প্রতীক একটি আধুনিক ধারনা, প্রতীক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
• আধুনিক শিল্পসাহিত্য ছিল একরৈখিক, এখন তা বহু রৈখিক।
• চিত্রকল্পের পরিবর্তে চলচিত্রকল্প।
• আধুনিকরা সীমাবদ্ধ ছিলেন, যুক্তির পৃথিবীতে। তারা মূলত যুক্তিবাদী বা যুক্তির ক্রীতদাস ছিলেন।
( পোস্টমডার্ন মানচিত্র, পৃষ্ঠা ২৪ – প্রভাত চৌধুরী )
এভাবেই খুব স্পষ্টভাবে প্রভাত চৌধুরী জানিয়ে দেন পোষ্টমডার্ন চিহ্নগুলি। সময়ের সাথে সাথে যে কোন শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির মতো বাঙলা কবিতাও গতিপথ পরিবর্তন করে যা কখনই আমাদের দেশ কাল সমাজ নিরপেক্ষ নয়। এরকমই সময়ের চাহিদায় বাঁক নিতে নিতে প্রভাত চৌধুরী ঘোষণা করেন – পোষ্টমডার্ন এ যুগের নিয়তি।
এখানে পোষ্টমডার্ন বা উত্তরাধুনিক এর মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে Singularity কে অগ্রাহ্য করে Plurality কে। আহবান করা। ধ্রুবকে না মেনে ঐতিহাসিকতা বা কনটিনজেনসি র প্রতি তার ঝোক।
আমদের মনে করিয়ে দেন – এই পোষ্টমডার্ন প্রীতি “করে খাবার মন্ত্র নয়। ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবী জ্যাক দেরিদা , জ্যা ফ্রাসোয়া লিওতার, মিশেল ফুকো, আঁক লাকা, কিংবা রলা বার্থ প্রমুখ যেভাবে পোষ্টমডার্নকে ব্যাখ্যা করেছেন, আমদের দেশে সেভাবে আমরা পোষ্টমডার্নকে দেখছি না।
অর্থাৎ যুক্তির ক্রীতদাস না হয়ে, প্রতীকের ব্যবহার না করে ভাষাকে তার আদি লক্ষণে তার চিহ্ন বা সাইন ভালুতে ব্যবহার করতে হবে; এভাবেই প্রভাত চৌধুরী বাঙলা কবিতায় উত্তরাধুনিক কবিতার নতুন মানচিত্র নির্মাণের যে শুধু স্বপ্ন দেখেছিলেন তা নয়, তা রুপায়নের জন্য প্রায় অসাধ্যসাধন করেছিলেন। শতাধিক বিভিন্ন বয়সের পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের ও ভারতের বাইরের কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে কাজ করে চলেছিলেন তাঁর কবিতা পাক্ষিকের মধ্যদিয়ে।
প্রথম সারা পৃথিবীর মানচিত্র আঁকার চেষ্টা করেন, অ্যানাক্সিম্যান্ডার। সেদিক থেকে বলতে গেলে প্রভাত চৌধুরীকে বাঙলা উত্তরধুনিক কবিতার অ্যানাক্সিম্যান্ডার বলাই যেতে পারে এবং আমার মনে হয় তার জন্মদিন বা মৃত্যদিনটিকে আমারা – উত্তরাধুনিক কবিতা দিবস” হিসাবে পালন করলেই তার প্রতি আমাদের যথার্থ শ্রদ্ধা প্রদর্শন হবে বলে আমি মনে করি।