• Uncategorized
  • 0

গদ্যানুশীলনে অমিতা মজুমদার

ডাঁসা পেয়ারা ও কসকো সাবানের ভালোবাসা

প্রেম শাশ্বত প্রেম চিরকালীন এ কথা তো আর অস্বীকার করা যায় না।
টাইম মেশিনে চড়ে একটু ৩০-৪০ দশকে যাই। প্রেম তখনো তরুণ মনে আলোড়ন তুলতো। হয়তো বর্তমানের মতো বিএফ আর জিএফ সংস্করণ আসেনি, জানু ,জান আই লাভ ইউ এত জনপ্রিয়তা পায়নি। কিন্তু প্রেম একবার এসেছিল নীরবে পারিনি তা জানতে এটা অহরহ ঘটত।
দুটি তরুণ মন জেনে গেছে তাদের জীবনে প্রেম এসেছে।
এরা হলো নীলকান্ত আর বিধুমুখী। পাশাপাশি গ্রামে তাদের বাস। ঘটনাচক্রে উভয়ের পাড়াতুত দিদি দাদার বিয়েতে দুজনের চারচোখের মিলন ঘটে। বাসরঘরে বর কনের পক্ষ নিয়ে দুজনের দু-চারটে কথাও হয়।
নীলকান্ত সবে কলেজে উঠেছে তাই প্রেম ভালোবাসার প্রথম পাঠ বন্ধুদের কাছ থেকে নিয়েছে সে। বিধুমুখী বাড়িতে থেকেই চিঠিপত্র লেখা, সেলাই ফোঁড়াই, ঘরকন্নার কাজ শিখছে। সবে চৌদ্দ পেরিয়েছে। বাবা বলেছে আগামী বছর তাকে শ্বশুর ঘরে পাঠাবে। তাই তার তালিম চলছে মা কাকি,জেঠিমার কাছে। বাবা মাস্টারমশাই রেখেছেন তাকে ভালো ভক্তিগীতি শেখানোর জন্য। যাতে শ্বশুর ঘরে মেয়ের বাবার মান বাড়ে। অবশ্য কড়া নির্দেশ আছে মায়ের উপর মেয়ের দিকে খেয়াল রাখার।
এই বিধুমুখী আর নীলকান্ত নিজেদের ভালোবাসার কথা দুজনে দুজনের কাছে পৌঁছিয়েছে। যেভাবে পৌঁছিয়েছে সে লিখতে গেলে সপ্তকাণ্ড রামায়ণকেও ছাড়িয়ে যাবে। তাই সে প্রসংগ থাক।
আজ তাদের দেখা হবে এটা নিয়েই এগোই। কলেজে গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। বেছে বেছে এবারেই যেন সূর্যখানা বেশি উত্তপ্ত হয়ে আছে। ভর দুপুরে আমাদের নীলুবাবু হনহন করে হেঁটে চলেছে দীঘির পারের সেই বটগাছের তলায়। ওখানেই বিধু আসবে বলেছে। আগ্রহের আতিসায্যে সে একটু আগেই রওয়ানা দেয়। পথে আসতে আসতে চোখ আটকে যায় লাহাবাবুদের ফলের বাগানে। গাছে ডাঁসা ডাঁসা পেয়ারা ঝুলছে দেখে, নীলুবাবু দুখানা পেয়ারা পেরে পকেটে পুরে ফেলে। পৌঁছে দেখে বিধু তখনো আসেনি। নীলুবাবু অস্থিরভাবে পায়চারি করে আর পথের দিকে চায়। একবার গাছের গোড়ায় বসে একবার ওঠে। একসময় অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে লাল-নীল ডুরে শাড়ি পরা বিধুমুখী লাল ফিতে বাঁধা বিনুনী দুলিয়ে এসে পৌঁছায়। যেন সাত সাগর তেরো নদী পাড়ি দিয়ে এসেছে।
নতমুখে দাঁড়ায় নীলুবাবুর কাছে। নীলুবাবু হাত দিয়ে গাছের তলার অদৃশ্য ধূলা পরিষ্কার করে বলে বসো। বিধু ইতস্তত করে বসেই পড়ে। নীলুবাবুও মুখ কাঁচুমাচু করে পাশে বসে পড়ে। খুব গরম পড়েছে না ? বলে এতক্ষণ যা বলবে বলে মনে মনে আউড়েছিল সব কেমন গুলিয়ে ফেলে। অকস্মাত পকেট থেকে পেয়ারা বের করে বলে নাও খাও। লাহাবাবুদের বাগানের পেয়ারা খুব মিষ্টি। বিধু একটা নিয়ে মুখ নিচু করেই মিহি সুরে বলে আপনিও খান। তারপরে নীলুবাবু বলে বসে একটা গান শোনাও না। বিধু একটু লজ্জা লজ্জা করে কিছুটা নাঁকিসুরে গান ধরে মন কেন মায়ের চরণ ছাড়া, ও মন ভাবো শক্তি—- নীলুবাবু বলে এই গান কেন ,একখানা ভালোবাসার গান গাও। বিধু বলে বাবা তো মাস্টারমশাইকে শুধু ভক্তিমুলক গান শিখাতে বলেছে। আর কিছুতো শিখি নাই।
এরমধ্যে বিধুমুখীর খেয়াল হয় এক্ষুণি বাড়িতে তার খোঁজ পড়বে। তাই তাড়াতাড়ি উঠে বলে এখন যাই। নীলু বলে আর একটু বস। নীলু বিধুর ঘাড়ের উপরে শাড়িতে অদৃশ্য মৌমাছি তাড়িয়ে দেয়। বিধু ব্লাউজের ভেতর থেকে ঘামে জবজবে ভেঁজা একখানা রুমাল বের করে নীলুকে দেয় যার এক কোণে সুক্ষ্ম সুতার কাজে লেখা ভুলনা আমায়। এরপরে শাড়ির আঁচলের বাঁধন খুলে নীলুবাবুর হাতে ধরিয়ে দেয় একখানা কসকো সাবান। বলে গরমে স্নান করবেন ঘামের গন্ধ দূর হবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।