• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক উপন্যাসে আবুল কালাম আজাদ (পর্ব – ২৩)

দার্শনিক হেলাল ভাই

গাব্বু বলল: রিনির চিঠি নিয়ে যখন নিচে নেমে এলাম, তখন দেখা হলো ঝিনি আপার সাথে।
: ঝিনি আপা….! এই বলে হেলাল ভাই হাঁ করে রইল।
ঝিনি আপাকে তো আমরা সবাই চিনি। রিনির বড় বোন। ফিলোসফিতে অনার্স থার্ড ইয়ারে আছে। শিলা আপার সাথেই। শিলা আপা তো ফিলোসফির হেলাল ভাইকে সহ্যই করতে পারল না। তাহলে এই ফিলোসপি…। রিনির মতই সুন্দরী। কিন্তু রিনির মতো অমন চটপটে না। কথা বলে কম। হেলাল ভাইয়ের মতোই দার্শনিক টাইপের আচরণ। খুব শান্ত স্বভাবের।
আমি বললাম: ঝিনি আপার সাথে দেখা হল, তারপর কী?
: ঝিনি আপা বলল-দাঁড়াও দাঁড়াও……….।
আমি দাঁড়ালাম। তারপর সে ব্যাগ খুলে একটা চিঠি বের করল। চিঠিটা আমার হাতে দিয়ে বলল: লিখে রেখেছি সেই কবে। দেয়ার সুযোগ হচ্ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ, টিউটোরিয়াল এটা-সেটা নিয়ে খুব ব্যস্ত। ফিলোসফিতে পড়তে গিয়ে…….। আবার সুযোগ এলেও ভুলে যাই।
ফিলোসফিতে পড়ার কথা শুনে হেলাল ভাই নড়েচড়ে বসল। তার চোখে-মুখে উৎসাহ-উদ্দীপনা।
গাব্বু বলে চলল: ঝিনি আপা বলল, তোমাদের হেলাল ভাইকে দিও। আই লাভ হিম। আই লাভ হিম ভেরি মাচ।
হেলাল ভাই বলল: রিনি আর ঝিনি দু’জন আপন বোন?
গাব্বু বলল: হু।
: এক মায়ের পেটের?
: হু।
: সহদোরা?
: হু। রিনি-ঝিনি। অথবা ঝিনি-রিনি। সুন্দর অনুপ্রাস আছে নামে।
: রাখ তোর অনুপ্রাস।
: ঝিনি আপার চিঠিটা পড়ে দেখেন।
: আমার ইচ্ছা নাই।
: ইচ্ছা না থাকার কী হল?
: একই মায়ের পেটের দুই বোনের সাথে প্রেম করব?
দুই বোনের সাথে প্রেম করবেন কেন? আপনি বায়ান্নজনের কাছে টোপ ফেলেছেন, দুইজন বড়শি গিলেছে। এখন মনে হচ্ছে, আরও কেউ গিলতে পারে। আমাদের কনফিডেন্স বেড়ে গেছে। কার সাথে প্রেম করবেন সেটা পরে যাচাই-বাছাই করা হবে।
ফজা বলল: ছোট বোনই যখন এত চমৎকার একটা চিঠি লিখেছে, বড় বোন না জানি আরও কত সুন্দর লিখবে। অতো কথা বলে লাভ নেই। আগে চিঠিটা শুনি।
আমি আরেক গ্লাস পানি খেয়ে চিঠি পড়তে শুরু করলাম-
প্রিয় হেলাল ভাই//
পত্রের শুরুতে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিবেন। যদিও এখন ‘ভাই’ সম্বোধন করলাম, ভবিষ্যতে সেটা করব না। সেটা করা উচিতও না। তখন ‘প্রিয়তম’ অথবা ‘প্রানেশ্বরী’ এরকম কোনো সম্বোধন করবো। যা হোক, হার্ট ইজ ফরমড ফর লাভ। হৃদয় ভালবাসার জন্য তৈরী। ভালবাসাহীন কোনো হৃদয় হয় না। প্রিয় শিল্পী মান্নাদের সেই গানটার কথা ভাবুন-হৃদয় আছে যার, সেই তো ভালবাসে/প্রতিটি মানুষেরই জীবনে প্রেম আসে। হৃদয় থাকবে অথচ ভালবাসবে না, এটা হতে পারে না। ভালবাসবে অথচ প্রেম আসবে না তাও হতে পারে না। আপনার হৃদয়ে প্রেম আছে। সে প্রেম নিবেদন করেছেন আমাকে। আমার হৃদয়েরও প্রেম আছে। আমি হৃদয় দিয়ে আপনার প্রেমকে গ্রহণ করেছি। তবে এ কথাও সত্য যে, ভালবাসার জন্য অনেক সময় মানুষ অকারণে দুঃখ পায়। ভালবাসার দুঃখের মধ্যেও আবার এক রকমের সুখ আছে। প্রেমের পথ বন্ধুর পথ। প্রেমের পথে সর্বদাই কাঁটা বিছানো থাকে। নানা চড়াই-উৎড়াই মেনে নিয়ে প্রেমের পথে হাঁটতে হয়। অবশেষে প্রেমেরই বিজয় হয়। সে বিজয় মিলনে অথবা বিরহে। আমি চাই, আমাদের প্রেমের বিজয় মিলনেই হোক। আপনাকে এই প্রথম লেখা। তাই দীর্ঘায়িত করবো না। তবে আপনাকে সর্বোচ্চ বাহাত্তর পৃষ্ঠার প্রেমপত্র লেখার ইচ্ছা আছে আমার। ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। লেখা হবে অবশ্যই। তবে শুধু চিঠিতে আমি তুষ্ট থাকতে চাই না। খুব শীঘ্রই আপনার সাথে আমি দেখা করতে চাই। আপনার পাশে বসতে চাই। আপনার হাতে হাত রাখতে চাই। আপনার চোখে চোখ রেখে ভষাহীন কন্ঠে অসংখ্য কথা বলতে চাই। আপনার ঠোঁটের নিকোটিনের বিশ্রী গন্ধ শুষে নিতে চাই। আর আপনি যে ছেলেগুলোর সাথে চলেন, সত্যিই ওরা খুব ভাল ছেলে, আাদর্শ ছেলে। ওদের জন্য রইল আমার আদোর ও স্নেহ।
ইতি//
আপনার প্রাণেশ্বরী।
চিঠি পড়ে আমরা উচ্ছসিত হলাম। রিনি আমাদেরকে বাজে ছেলেছে। কিন্তু ঝিনি আপা আমাদেরকে ভাল ছেলে, আদর্শ ছেলে বলেছে। আমাদেরকে আদোর ও স্নেহ জানিয়েছে। আমরা সবাই মনে মনে একই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যে, হেলাল ভাইকে রিনির সাথে প্রেম করতে দিব না। হেলাল ভাই প্রেম করবে ঝিনি আপার সাথে।
কিন্তু ঝিনি আপার চিঠি শুনে হেলাল ভাই বিশেষ উচ্ছাস বা উৎফুল্লতা প্রকাশ করল না। বরং ঠেঁাঁট উল্টাল। বলল: ফিলোসফিতে থার্ড ইয়ার……। চিঠির ভেতর ফিলোসফি বলে তো কিছু পেলাম না।
আমি বললাম: আছে তো।
: কী আছে?
: ঐ যে, হার্ট ইজ ফরমড ফর লাভ। এর চেয়েও চমৎকার দার্শনিক কথা বলেছে ঝিনি আপা-ভালোবাসা কখনো ব্যর্থ হয় না। সব সময় স্বার্থক। সে মিলন হোক, আর বিরহ হোক-স্বার্থক।
: এসব নতুন কিছু না।
: প্রথম প্রেমপত্র। এখনই এত দর্শন বলা ঠিক হবে না। বলেছে তো, সর্বোচ্চ বাহাত্তর পৃষ্ঠার প্রেমপত্র লেখার ইচ্ছা আছে। তখন দেখবেন শুধু দর্শন আর দর্শন।
: চিঠির শেষটা তো দুই বোনের হুবহু মিলে গেল।
: এটা কাকতালীয় নিশ্চয়।
: আবার দুই বোন এক সাথে বসে লেখে নাই তো? আমার সাথে ইয়ার্কি করছে না তো?
: আরে না, দুই বোন এক সাথে বসে একই ব্যক্তির কাছে প্রেমপত্র লিখবে, সেটা কী করে সম্ভব? আর ঝিনি আপার মতো শান্ত-শিষ্ট একটা মেয়ে প্রেমের নামে কারও সাথে ইয়ার্কি করতে পারে না।
: বাহাত্তর পৃষ্ঠা চিঠি লিখতে চাইল। বায়ান্ন পৃষ্ঠা লিখতে চাইলে ভাল লাগতো। বাহাত্তর শুনলেই সেই হুরদের কথা মনে আসে। খুব খারাপ লাগে। বাহাত্তরটা হুর একটা মানুষের জন্য কত কষ্ট করে!
: আপনি খুবই অদ্ভূত মানুষ। সবাই বেহেস্তে যাওয়ার জন্য পাগল, আর আপনি…….।
একাধিক জনের কাছ থেকে প্রেম প্রস্তাব গৃহিত হলে এমনিতেই সমস্যা। এ ক্ষেত্রে সমস্যাটা অনেক বেশি। কারণ প্রেম প্রস্তাব গৃহিত হয়েছে আপন দুই বোনের কাছ থেকে।
হেলাল ভাই ভাবতে লাগল। তিনদিন, পাঁচদিন, সাত দিন, এক মাস চলে গেল। হেলাল ভাই কোনো কুল-কিনারা করতে পারে না।
এর মধ্যে রিনির কাছ থেকে চারটি, এবং ঝিনি আপার কাছ থেকে আরও দু’টি চিঠি এল। রিনির চিঠিতে আবেগ বেশি। ঝিনি আপার চিঠি গোছালো। কিছু সুন্দর উপদেশ থাকে।
তারা দু’জনই হেলাল ভাইয়ের মতামত জানতে চায়। প্রেম প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। সে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এখন এরকম নীরব কেন? এইসব প্রশ্নও তাদের চিঠিতে।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।