ধারাবাহিক উপন্যাসে আবুল কালাম আজাদ (পর্ব – ১০)

দার্শনিক হেলাল ভাই – ১০
হেলাল ভাই বলে, মেয়ে মানুষের হৃদয় প্রশান্ত মহাসাগরের চেয়েও গভীর। এর তল পাওয়া সহজ ব্যাপার না।
কিন্তু না। সৈয়দা নার্গিস জাহান সেই আবৃত্তি সংগঠন নিয়েই রইল। দিনে সাতবার ফোন করে হেলাল ভাইকে। মুখস্তের মতো বলতে থাকে একই কথা: হেলাল ভাই, আমাদের ছাদঘরটা নেন। একটা আবৃত্তি সংগঠন চালু করেন। ভাড়া-টারা কিছু দিতে হবে না। আমি সংগঠনের শিক্ষার্থী কাম কর্মী হিসেবে থাকব। সপ্তাহে একটা/দুইটা ক্লাশ নেয়া ছাড়া আপনাকে আর কিচ্ছুটি করতে হবে না। সব আমি করে দিব। সংগঠন থেকে যা আয় হবে সব আপনার।
সৈয়দা নার্গিস জাহানের প্রস্তাবটা আমাদের কাছে খারাপ লাগে না, বরং বেশ ভালই মনে হয়। ভাল একটা সংগঠন দাঁড় করানো যাবে হয়ত। হেলাল ভাই দর্শনিক হলেও কবিতার ওপর আছে তার ব্যাপক পাঠ। ছন্দ, তাল, লয়, মাত্রা ভাল জানে। আবৃত্তির নিয়ম-কানুনও ভাল জানে, সেই সাথে জানে কন্ঠের কারুকাজ। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেমন হবে, তেমন হবে কিছু রোজগার।
কিন্তু হেলাল ভাই প্রস্তাবটাকে ভালভাবে নেয় না। সৈয়দা নার্গিস জাহানের কাছ থেকে ফোন এলেই হেলাল ভাই ভীষণ বিরক্ত হয়। তারপর মফিজকে গালাগাল শুরু করে।
মফিজ চিঠিটা সৈয়দা নার্গিস জাহানের বাবার হাতে দেবার পর থেকেই হেলাল ভাইয়ের গালাগাল শুনছে। আহা বেচারা!
ফেকু একবার বলল: মেয়েটা তো খারাপ কিছু বলছে না।
: খারাপ কিছু বলছে না মানে?
: সে নিজে সব দায়িত্ব পালন করতে চাচ্ছে। বিনা ভাড়ায় জায়গা দিতে চাচ্ছে। এই ঢাকা শহরে একটা খুপরি ভাড়া করতে গেলেও দশ/বারো হাজার টাকা ভাড়া গুণতে হয়।
: ততে কী হয়েছে?
: সেখানে আবৃত্তি সংগঠন চালু করলে এলাকার ছেলেমেয়েরা কবিতার কাছাকাছি যেতে পারবে।
: আমি কি আবৃত্তি সংগঠন করার জন্য বায়ান্নটা চিঠি বিলি করেছি?
: আপনার সে উদ্দেশ্যও সফল হবার সম্ভাবনা আছে এখানে?
: কীভাবে?
: দৃষ্টির কাছাকাছি থাকলে কারও হৃদয়ের কাছাকাছি যাবার সম্ভাবনাও তৈরী হয়।
: খোলসা করে বল।
: এত খোলসার কী আছে? দার্শনিক মানুষ আপনি। সাধারণ সূত্র বোঝেন না? আবৃত্তি সংগঠন চালু করলে সৈয়দা নার্গিস জাহানের সাথে আপনার বার বার দেখা হবে, কথা হবে, আপনার আবৃত্তি শুনবে, এভাবে……..এভাবে প্রেম হয়ে যাবে।
: যাহ! তুই খুব বাজে বকিস। ফাজিল একটা!
হেলাল ভাই লজ্জায় লাল টুকটুকে টমেটো হয়ে গেল। ভাল মানুষেরা খুব সহজেই লজ্জা পায়। লজ্জাহীন হয় খারাপ মানুষেরা। তবে এরকম লজ্জা নিয়ে হেলাল ভাই প্রেম করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে কেন সেটা আমাদের মাথায় আসে না।
শেষ পর্যন্ত হেলাল ভাই আবৃত্তি সংগঠন করতে রাজি হল না। তার চিঠিতে যদি কেউ সাড়া দেয় তো তার সাথে প্রেম করবে। প্রেম করার জন্য সে অন্য কোনো পন্থায় যাবে না।
সৈয়দা নার্গিস জাহানের ফোন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হেলাল ভাই নিজের ফোন নাম্বার বদলে ফেলল।
সৈয়দা নার্গিস জাহান আমাদের কাছে অনেক বার হেলাল ভাইয়ের নতুন নাম্বারটা চেয়েছে। নিষেধ থাকায় আমরা দিতে পারিনি। মেয়েটা অনেক কষ্ট নিয়ে শেষমেশ চুপ হয়ে গেছে।
৪