• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক উপন্যাসে আবুল কালাম আজাদ (পর্ব – ২১)

দার্শনিক হেলাল ভাই – ১৭

: শুনেছি, তার নাকি অনেক গুণ আছে।
: ঠিকই শুনেছ। গুণ না থাকলে আমাদের মতো ত্যাঁদরগুলোকে মুহূর্তে নিজের করে ফেলতে পারত না।
: সে নাকি ভাল আবৃত্তি করে?
: শুধু ভাল না, অসাধারণ। শুনলে তোমরা মুগ্ধ না হয়ে পারবে না।
: আচ্ছা, সে তো দার্শনিক মানুষ। তার দু’/একটা দার্শনিক মন্তব্য শোনাও তো।
: বেশির ভাগ মেয়েই বেশি বেশি প্রেম প্রস্তাব পেতে পছন্দ করে। আর সেই বেশি বেশি প্রস্তাবের ভেতর থেকে চুলচেড়া বাছাই করতে করতে সবচেয়ে অযোগ্য প্রার্থীর আহ্বানে চূড়ান্তভাবে সাড়া দেয়। মেয়ে যত রূপবতী তার বাছাইয়ের মান তত নিম্ন।
ফেকু দার্শনিক হেলাল ভাইয়ের দার্শনিক মন্তব্য উল্লেখ করতে গেলেই এটা টেনে আনে। আর আমরা ভয় পাই যে, মেয়েরা রেগে যাবে এরকম মন্তব্য শুনে। কিন্তু না, মেয়েরা রাগে না। আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে বলে: হেলাল ভাইয়ের কথা ঠিক, হানড্রেট পার্সেন্ট রাইট। বাস্তবিক সুন্দর মেয়েগুলার স্বামী হয় রাম ছাগল টাইপ। ওরা অসংখ্য প্রস্তাবের চাপে পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যায়। দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে সঠিকটা বাছাই করা সম্ভব হয় না। দার্শনিক হেলাল ভাইকে ধন্যবাদ।
অবশেষে পাড়ার মেয়েদের নিয়ে আমাদের আর কোনো সমস্যা থাকল না। তারা হেলাল ভাইয়ের প্রেম প্রস্তাবে রাজি হোক, বা না হোক, ব্যাপারটাকে একরবমভাবে মেনে নেয়।
সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এলাকার পুরনো রংবাজ ও ব্যর্থ নেতা আমাদের আফজাল ভাই।
আমরা আফজাল ভাইকে ত্যাগ করে দলবেঁধে হেলাল ভাইয়ে শিষ্যত্ব বরণ করেছি, এ নিয়ে এমনিতেই আফজাল ভাই আমাদের ওপর ক্ষ্যাপা।
সব সময় সুযোগ খোঁজে হেলাল ভাইয়ের কোনো দোষ পাওয়া যায় কি না। পাড়ার এতগুলো মেয়েকে প্রেম প্রস্তাবপত্র দিয়েছে, দোষ তো পাবেই।
আফজাল ভাইয়ের মুখেমুখি হলেই আমাদের দাঁড় করায়। শুরু করে দেয়: ঐ তোরা কই যাস?
: মোজাফ্ফরের চায়ের দোকানে। উত্তর দেয় ফেকু।
: সেখানে ঐ চোয়াল ভাঙাটা আছে নিশ্চয়।
: আফজাল ভাই, মানুষের সম্পর্কে এভাবে কথা বলা ঠিক না।
: যে পাড়ার সব মেয়েকে প্রেমপত্র দেয় তার সম্পর্কে এরচয়ে ভাল করে কথা বলতে আমি অপারগ। শোন, এই এলাকা থেকে তাকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করতেছি।
: আমরা থাকতে তাকে কেউ তাড়াতে পারবে না।
: ওরে বাব্বা! বিরাট মাস্তান হয়ে গেছোস মনে হয়? থাবড়া দিয়ে তোদের সবগুলার আক্কেল দাঁত ফেলে দিব।
: উত্তেজিত হবেন না আফজাল ভাই। দার্শনিক হেলাল ভাই একজন মহামানব।
: আমি ঐ মহামানব সক্রেটিসকে এই এলাকা থেকে ঘাড়ে ধরে তাড়িয়ে দিব। মানে অর্ধচন্দ্র দিয়ে…..।
: আচ্ছা, দেখা যাবে।
এরকম তর্কের শেষ পর্যায়ে বল্টুটা লাফ দিয়ে আফজাল ভাইয়ের সামনে গিয়ে বলে: আফজাল ভাই, আপনে যদি হেলাল ভাইয়ের কোনো সমস্য করতে পারেন তো এই বল্টু সারা জীবন বিনা পয়সার আপনার চাকর থাকবে।
: এক থাবড়া দিয়া…….!

৫ 

যে চিঠির জন্য এত কিছু সে চিঠি থেকে কঙ্খিত কোনো ফলই এল না। বায়ান্নটা মেয়ের একজনও এতটুকু ইতিবাচক সাড়া দিল না।
হেলাল ভাইয়ের জন্য আমাদের মনে কষ্ট বাজতে লাগল। নিজেদেরকেও কেমন দোষি মনে হতে লাগল। সে আগে কোথায়, কতজনকে চিঠি লিখেছিল সেটা বিষয় না। এখানে আমরা এতগুলো ছেলে তার সাথে আছি, অথচ তার একটা চিঠি স্বার্থক করতে পারলাম না, এটা আমাদেরও এক রকমের ব্যর্থতা।
তা ছাড়া হেলাল ভাইয়ের প্রেম দেখাও আমাদের জন্য একটা আগ্রহের বিষয়। শত হলেও দার্শনিক মানুষ। সব কিছুতেই তো ব্যতিক্রমী। তার প্রেমটাও নিশ্চয় আর দশটা প্রেমের মত হবে না।
আমরা আফসোস করে মরি, কিন্তু এ নিয়ে হেলাল ভাইয়ের ভেতর বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া বোঝা যায় না। সে নির্বিকার। যেন কোথাও কাউকে প্রেম প্রস্তাবপত্র লেখেনি। একবার শুধু বলল: আমার জীবনটা চিরকালই ঘোলা জলের ডোবা। বড় রকমের কোনো ইতিহাস ধরে না সেখানে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতার লাইন এ দু’টো তা আমরা জেনেছি।
একদিন আমরা সবাই মোজাফ্ফরের চায়ের দোকানে বসে আছি। গাব্বুটা ছিল না।
আচানক দেখি গাব্বু তীরবেগে আমাদের দিকে ছুটে আসছে। সমস্যা কী? আফজাল ভাই তাড়া করেছে মনে হয়। আমরা উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম।
গাব্বু দোকানের সামনের একটা বেঞ্চি জাম্প করে ডিঙিয়ে ভেতর প্রবেশ করল। মোজাফ্ফর রেগে বলল: রেসের ঘোড়ার মত অমন লাফ মাইরা ঢুকলা যে? আর একটু হইলে তো কেটলিটা উল্টায়া পড়ত। শরীরের নিচের অংশ গরম পানিতে ঝইলসা যাইত।
গাব্বু ভীষণ হাফাচ্ছিল। ঘেমে নেয়ে উঠেছে। কথা বলতে পারছে না। একবার বসছে তো আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে।
আমরা ধরে নিলাম আফজাল ভাই ধমক-টমক দিয়েছে। ওকে একা পেয়ে আবার চড়-থাপ্পর দিল কি না।
হেলাল ভাই বলল: সমস্যা কী?
: সমস্যা কিছু না।
: তাহলে এরকম করছিস কেন?
: বলবো, সব বলবো। ফেকু পাখার স্পিড বাড়িয়ে দেত।
ফেকু বসেছিল পাখার সুইচের নিচে। ও নড়ল না। অবশ্য পাখা বাড়ানোর দরকারও ছিল না, কারণ সেটা ফুল স্পিডেই ছিল। ফেকু বলল: ও সব কিছুতেই এরকম ভাব নেয়। আসলে দেখা যাবে ব্যপার কিছুই না।
হেলাল ভাই বলল: পানি খাবি?
: খাবো, ঠান্ডা এক জগ।
এক জগ পানি খাবে। এতটা তৃষ্ণার্ত! তাহলে কিছু একটা হয়েছে নিশ্চয়।
হেলাল ভাই বলল: ফেকু, জগ ভরে ঠান্ডা পানি আন।
ফেকু আগের মতোই নট নড়ন-চড়ন। উঠতে হল আমাকে। ফিল্টার থেকে এক জগ ঠান্ডা পানি এনে দিলাম। গাব্বু আধা গ্লাস পানি খেল কি না সন্দেহ। এমনভাবে পানি খেল যেন চিবিয়ে খাচ্ছে। আমরা বুঝলাম, আসলেই সমস্যা তেমন কিছু না। সমস্যায় পড়লে, ঘাবড়ে গেলে, ভয় পেলে মানুষ এক নিঃশ্বাসে পানি খেয়ে ফেলে।
আমাদের ধৈর্য্যরে বাধ ভেঙে যাচ্ছিল। হেলাল ভাই বলল: এবার বল, ঘটনা কী ঘটেছে। আফজাল ভাই ধরেছিল নাকি?
: আরে না, আফজাল ভাই কী ধরবে?
: তাহলে হয়েছেটা কী?
: আমি আসছিলাম নাহার মঞ্জিলের সামনে দিয়ে।
: ঠিক আছে, তারপর?
: নাহার মঞ্জিলের মালিক নাহার খালার ছোট মেয়ে রিনি ডাকল।
: তারপর?

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।