• Uncategorized
  • 0

গদ্যের পোডিয়ামে আমিনুল ইসলাম

হামাগুড়ি ও খিস্তি পাঠের প্রায়ান্ধকার

গালাগালিগুলো কাস্তের মতোই ধারালো।
ধান কাটতে গেলে কাস্তে + শরীরের শক্তি বা বল প্রয়োজন। মহাভারতের ধর্মযুদ্ধে ব্যবহৃত বাণের মতোই এগুলোরও ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োগ শৈলী আছে। শক্তি ও সামর্থানু্যায়ী এদের সঠিক কাজে লাগানো নিপুণ অস্ত্রবিদ্যার চেয়ে কিছু কম নয়। এযুগের ভারতবর্ষে বহু কুশল যোদ্ধা বর্তমান। তারা কেউ কেউ ক্ষমতায় ও বিরোধী আসনে সচল।
বর্তমান আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক স্যোশাল ও নৈতিক সংকট মূহুর্তে আতঙ্কিত আমাদের দৈনন্দিন জীবন। এটা সহজ ভাবেই মেনে নিয়েছি আমরা।আবার যারা মেনে নিতে পারেননি তাদের অক্ষমতা তাদের জীবনকে বাধার সম্মুখীন করেছে। একে প্রতিহত করা কতিপয় জনতার কাজ নয়। এর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কীভাবে সংগঠিত হবে?
কৃষি প্রধান আমাদের দেশ। কাস্তে কৃষকের হাতিয়ার। কাস্তে+হাতুড়ি+তারা = মার্কসবাদ নয়। আবার কাস্তে+হাতুড়ি+তারা = কমিউনিজমও নয়, তাহলে কী?
সহজ ভাবে বলতে গেলে- আমি+তুমি+সে=আমরা হলে আমাদের জীবন = যদি
শিক্ষা+স্বাস্থ্য+খাদ্য+বাসস্থান হয় তাহলে সেটাকে বাস্তবায়নের প্রয়োজন। কে মেটাবে আমাদের এই প্রয়োজনগুলো? রাষ্ট্র কি এই পরিসেবাগুলোর সঠিক দায়িত্ব মেনে নিয়েছে?
জনগণ রাষ্ট্রকে (ডাইরেক্ট ও ইনডাইরেক্ট) কর দিয়েছে। পরিবর্তে রাষ্ট্র এই অপরিহার্য পরিসেবাগুলো সুনিশ্চিত করেছে কি?
এরকম নানান প্রশ্নচিহ্ন এঁকে ফেলা যায়।! কিন্তু কীহবে এসব ভেবে? আজ অধিকাংশ মানুষের সেই মত। ‘শোষণ’ শব্দটি শ্রেণি সংগ্রামেরই অলঙ্কার এর সঙ্গে ‘পোষণ’ শব্দটিও জুড়েছে। ‘স্বজন-পোষণ’ সকলের খুব জানা দুটি শব্দের মেলবন্ধন। এই শব্দ বন্ধনীই বর্তমান রাজনীতির জোরালো হাতিয়ার।
এখন- আমাদের হাত বদলে অস্ত্র চলে গেছে অন্যের হাতে। কারন- আমাদের হাত মজবুত ছিল না। শিশুর হাতে খেলনার মতোই অবলুপ্ত হয়েছে বয়সের নিরিখ। আমরা বুঝে নিতে চায়নি নিজের অধিকার।
আমরা বদলে গেছি। আমরা আসলে যেমন ভেতর ভেতর ঠিক তেমন নই। একের অধিক প্যারালাল সরলরেখার মতোই আমাদের অন্তরের সত্তা আবহমানকাল বয়ে চলেছে। নদীর মতোই বহুরৈখিক ছন্দময় জীবন শৈলীতে নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে নিয়ে গেছে সভ্যতার ইতিহাস।
গালিগালাজ=খিস্তি। খিস্তি হলো- এক অর্থে ঠিক পলিসির মতো। বিক্রেতার কাছে কোনো প্রোডাক্ট নেই। শুধু সাজানো গোছানো অক্ষর বিন্যাসের প্রেজেন্টেশন। যিনি ক্রেতা তিনি নিশ্চয়তা কিনলেন। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই সন্তুষ্টি। পলিসির মতোই খিস্তিরও শ্রেণি বিভাগ আছে। ব্যক্তি বিশেষের তারতম্যে তার প্রয়োগ পাল্টে যায়। কিন্তু পলিসির মতো এটা ঠিক বাজারজাত হয়ে ওঠেনি। এটা যিনি প্রদান করেন তাঁর আত্মার তুষ্টিবিধান হয়। বিপরীতে যাঁর উদ্দেশ্যে পারিত হলো তাঁর সম্মুখে সহনশীলতার এক অভাবনীয় পরীক্ষা। দুর্বল মানুষই যে এগুলোর ব্যবহার করেন ঠিক তেমন নয়। আসলে সব অভ্যাস। অভ্যাস কেউই সহজে বদলে ফেলতে পারেন না। তবুও প্রয়াস নিরলস নিরবিচ্ছিন্ন।
ঠিক তেমনই সংগ্রাম কখনোই থামে না, স্রোতের মতোই নিরন্তর। এখানে- জনগণ=জল, স্রোত=সংগ্রাম। যুগ-সন্ধি, মানে দুটো সময়ের মধ্যবর্তী অন্তরাল। সেখানেই আমরা দাঁড়িয়ে। এই দোদুল্যমান প্রদীপের শিখায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা, স্বমহিমায় টিকে থাকার আপ্রান সলতের শরীরে জাগরণের বীজটি বহন করতে হবে আমাদের। আমাদের মাতব্বর আমরা নিজেই। এখন আমাদের পজিটিভ অ্যানার্জিগুলো সঞ্চয় করে রাখার সময়। যা আমাদের অজান্তেই সঞ্চিত হচ্ছে। মেহনতি মানুষের অস্ত্রে একদিন তারার আলোয় স্বচ্ছ দেখা যাবে পথ। আমরা আশাবাদী। সংগ্রাম কখনোই ঘুমোতে জানেনা। তাই সংগ্রামী মানুষের কাছে তন্দ্রা তুচ্ছ। প্রতিটি তন্দ্রার মুহূর্তই এক একটি জ্যোনাকির আলো। সব জ্যোনাকি একত্রে মশাল হয়ে জ্বলবে। আমরা তার স্পন্দনে বিগত দিনেও ছিলাম এখনও আছি এবং ভবিষ্যৎ অনুমেয়। সম্ভাবণার দিকে চলতে থাক অন্তত কিছুটা পথ…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।