– তোমার কোমরে ব্যথা, তুমি আবার সিঁড়ি ভেঙে রাখতে যেওনা। আমি ফ্রেশ হয়ে কিছু কিছু করে রেখে আসছি
– অফিস থেকে ফিরে আবার আম তুলতে ওপরে যাবি ? কাল সবলা তুলে রাখবে। কবে থেকে বলছি এবার বিয়ে কর, তুই অফিস চলে যাওয়ার পর সারাদিন একা থাকি। এতো বড় বাড়িটা খা- খা করে।
– কেন ঝামেলা বাড়াচ্ছ বলোতো, এই বেশ আছি। তোমার তো সবলা মাসি আছে। বাড়িতে যতক্ষণ থাকে বকবকের শেষ নেই
– ও- আরও তিন বাড়ি কাজ করে, সারাদিন কি এখানে বসে থাকে?
– তোর যেমন কথা, আমাদের বাড়ি কি এমন কাজ যে সারাদিন থাকবে। বিয়ের কথা বললেই যত অজুহাত। তোর বাবা দেখতে দেখতে তিনবছর হয়ে গেল আমাদের ছেড়ে চলে গ্যাছে, বউ দেখে যেতে পারলো না…
পরের দিন বিকেলে বিনতা চিলেকোঠার ঘর খুললো, আমগুলো কতটা পেকেছে দেখার জন্য। ভেতরে ঢুকে দ্যাখে ছোট্ট ঘরের চারিদিকে কিছু আমের আটি পড়ে আছে। বিনতা ভাবলো… এসব নিশ্চয় ইঁদুরের কাজ, অনেক ইঁদুর আছে মনে হচ্ছে, কিন্তু বাড়িতে তো ইঁদুর দেখিনি, কিজানি হয়তো চিলেকোঠা ফাঁকা থাকে দেখে এখানে বাসা বেঁধেছে।
অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর বিনতা বিতানকে ইঁদুরের আম খাওয়ার কথা বললো
বিতান– ইঁদুরে কতো আর আম খাবে, আমি কাল সকালে ইঁদুর মারা বিষ নিয়ে আসবো।
পরেরদিন বিকেলে বিনতা চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে দ্যাখে কাল রাতেও ইঁদুরে অনেক আম খেয়ে নিয়েছে। বিনতা ভাবে- আম পাকার আগেই যদি ইঁদুরে সব আম খেয়ে নেয় তাহলে নিজেরা কি খাবো? বিনতা ঘরের কোনায় কোনায় পাউরুটির টুকরোতে যে বিষ মাখিয়ে নিয়ে এসেছিল সেগুলো রাখলো। আজ রাতে ইঁদুর জব্দ হবে …এই ভেবে নিচে নেমে এলো।
পরদিন সকালে সবলা কাজে আসার পর বিনতা সবলাকে চিলেকোঠায় পাঠালো ইঁদুর মরেছে কিনা দেখার জন্য। সবলা ওপরে গিয়ে খুঁজে কোথাও ইঁদুর দেখতে পেলোনা, পাউরুটির টুকরোগুলো যেখানে রেখেছিল সেখানেই পড়ে আছে। শুনে বিনতার মনখারাপ হয়ে গেল, আপন মনে বকবক করতে লাগলো- গাছ পাকা আম খেয়ে ইঁদুরের বে- স্বাদ পাউরুটি কি মুখে রোচে ? অতো সুন্দর টক মিষ্টি স্বাদ … অর্ধেক আমতো ইঁদুরের পেটেই গেলো।
চোখদুটো সবে লেগে এসেছিল, ভালো করে কান খাড়া করে শুনলো… মনে হচ্ছে পাশের বাড়ি থেকে ওকে কেউ ডাকছে,মেয়ের গলা, কিন্তু পাশের বাড়িতে কোনো মেয়ে তো থাকেনা, এক বয়স্ক ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা থাকে। এক ছেলে তার পরিবার নিয়ে আমেরিকায় থাকে। তাহলে.. হ্যাঁ, ওকেই ডাকছে । বিনতা বারান্দায় এলো, পাশের বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে ওকে দেখে বললো– এইতো মাসিমা, আপনাদের বাড়ির ওপরের চিলেকোঠার ঘরের স্কাইলাইটের ভেতর দিয়ে হনুমান ঢুকেছে ওই দেখুন সানসেটের ওপরে বসে থাকা বড় হনুমানটাকে হাত বাড়িয়ে কি দিচ্ছে, বড় হনুমানটা সেটা খাচ্ছে। আম মনে হচ্ছে, আপনি কি চিলেকোঠায় আম রেখেছেন?
– এমা, সব আম হনুমানে খেয়ে নিল, তাইতো ভাবছি ওতো আম ইঁদুরে কি করে খাবে। হনুমানের কথা মাথায় আসেনি। এখন কি দিয়ে তাড়া করি…খুঁজতে খুঁজতে ঝুল ঝাড়ুটা নিয়ে ওপরে চিলেকোঠার দরজা খুলতেই বিনতার দিকে তাকিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে এলো হনুমানটা। বিনতা তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নেমে দোতলার বারান্দায় গিয়ে দ্যাখে মেয়েটা তখনও দাঁড়িয়ে আছে।
বিনতা মেয়েটাকে বললো- তুমি একটু আমাদের বাড়ি আসতে পারবে ? আমাকে হনুমান দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে আসছে, খুব ভয় করছে। তুমি এলে দুজনে মিলে তাড়া করবো।
মেয়েটা বললো- আপনি দরজা খুলুন, আমি যাচ্ছি।
বিনতা নিচে নেমে দরজা খুলে দিল, মেয়েটা ওদের বাড়ি থেকে একটা একটা লাঠি নিয়ে এসেছে।
মেয়েটা ওপরে গিয়ে লাঠি দেখিয়ে হনুমান তাড়া করতে শুরু করে দিয়েছে – যা..যা বলছি, আবার দাঁত দেখানো হচ্ছে। অনেক আম খেয়েছিস, আমাদের জন্য তো কিছু রাখবি , না কি? জানিস না একা কিছু খেতে নেই, সবাইকে দিয়ে ভাগ করে খেতে হয়।
– যাক চলে গ্যাছে, হনুমান দুটো আপনাদের অনেক আম খেয়ে নিয়েছে, এই বলে বিনতার দিকে তাকিয়ে হাসলো মেয়েটা।
এতক্ষণে বিনতা ভালো করে মেয়েটাকে দেখলো, আগে কখনো ও বাড়িতে দ্যাখেনি। ফরসা আর নীলচে চোখের মিষ্টি মুখের অধিকারিণী, পড়নে একটা কুর্তি আর হাঁটুর নিচ ছোঁয়া একটা প্যান্ট, কি নাম তোমার?
– আমার নাম আম্রপালি রায়চৌধুরী, এই বলে মুচকি হেসে বললো- বিশাল নাম তাইনা, অবশ্য ছোট্ট আর একটা নাম আছে, সেতু…
– আমি তাহলে সেতু বলে ডাকবো। আমগুলো পেকেছে মনে হচ্ছে
সেতু আমের গায়ে হাত দিয়ে টিপে দেখে বললো– হ্যাঁ মাসিমা কয়েকটা পেকেছে…এই বলে পাশে রাখা একটা প্লাস্টিকের ছোট ঝুড়ি দেখে তাতে বেছে কয়েকটা আম তুলে বললো– এবার নিচে চলুন, বাকি আমগুলো নিচে নিয়ে যেতে হবে। তা নাহলে কাল আবার হনুমান দুটো এসে আম খাবে।
সেতু নিজের বাড়ির মতো রান্নাঘরে গিয়ে সিঙ্কে একটা গামলায় ভিজিয়ে রাখলো আমগুলো। যেন কতদিনের চেনা বাড়ি।
– বাঃ, তুমি সব জানো দেখছি
– বাড়িতে পাপা করে তাই দেখে আমিও শিখে গেছি
– এবার বোসো, তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
– আমি আর পাপা
– তোমার মা নেই ?
– আমি যখন ছোটো তখন মা আমাদের ছেড়ে দিক শূন্যপুরে চলে গ্যাছে
– কোথায় বাড়ি তোমার?
– আমি কানপুরে থাকি, ছোট দিদার বাড়ি এসেছি
– তুমি কানপুরে থাকো, খুব সুন্দর বাংলা জানো তো তুমি?
– বাড়িতে আমরা বাংলায় কথা বলি। বাংলা গল্প আর কবিতা পড়তে আমি খুব ভালোবাসি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার প্রিয় কবি সাহিত্যিক।
-– তুমি হিন্দি ভাষী হয়েও বাংলাকে ভালোবাসো জেনে গর্ব হচ্ছে
– আমি বাঙালী, ভারতবাসী, কানপুরে থাকলেও ছোট থেকে বাড়িতে বাংলা ও বাইরে হিন্দি বলতে বলতে দুটো ভাষায় শিখে গেছি।
বিনতা একা থাকে, সেতুকে পেয়ে খুব খুশি।
সেতু বললো – মাসিমা আমি ছোট দিদুনকে ফোন করে বলে দিই যে আমি আপনার সাথে গল্প করছি, এই বলে ওর প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে দিদুনকে বলে দিল ।
বিনতা সেতুকে ফ্রিজ থেকে বের করে শরবত আর মিষ্টি দিলো সেতু মিষ্টি নিলো না শরবত নিলো।
এই সময় কলিংবেল বেজে উঠলো।
এখন আবার কে এলো, এখনো তো বিতানের আসার সময় হয়নি, বলে দরজা খুলতে গেল।
বিতান ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো– অফিসে সেরকম কাজ ছিলোনা তাই আজ তাড়াতাড়ি চলে এলাম। ড্রইংরুমে রুমে ঢুকতেই দ্যাখে অচেনা একটা মেয়ে বসে, বিতান দাঁড়িয়ে পড়লো।
দুজনেই দুজনের মুখের দিকে কিছুক্ষণ একভাবে তাকিয়ে থাকলো।
বিনতা তা দেখে বললো – বিতান এ সেতু, মানে আম্রপালি রায়চৌধুরী। পাশের বাড়ির ব্যানার্জী দিদার নাতনি, কানপুরে থাকে।
বিতান– দিদার নাতি- নাতনিরা তো সব আমেরিকায় থাকে, তাইতো শুনেছি।
সেতু তখন নিজেই উত্তর দিলো– আমি দিদুনের দিদির নাতনি, এটা আমার ছোট দিদুন। একটা প্রজেক্টের ব্যাপারে কদিনের জন্য এখানে এসেছি। আমার কাজও হলো আবার অনেকদিন পর দাদু দিদুনের সাথে দেখাও হলো।
বিতান– আপনার সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগছে
– আমাকে আপনি করে বলবেন না, নাম ধরে তুমি করে বললে আমি বেশি খুশি হবো।
– আচ্ছা তাই হবে, আমাদের এখানে ভালো লাগছে তো?
– ভালো লাগছে, তবে আমার কাজও শেষের দিকে, এবার ফিরতে হবে
বিতান সেতুকে বললো– তুমি না এলে মা একা হনুমান তাড়াতে পারতো না, উল্টে আর এক বিপদ হোতো
সেতু – সেজন্যই মাসিমা ডাকতেই আমি লাঠি নিয়ে চলে এসেছি।
আরও কিছুক্ষণ গল্প করার পর সেতু বাড়ি ফেরার জন্য উঠে দাঁড়ালো…এবার তাহলে আসছি
বিনতা– এখুনি চলে যাবে? আর একটু বোসো না। তুমি আসাতে বাড়িটা ঝলমল করছে
সেতু– কি যে বলেন, কখন এসেছি, আবার পরে আসবো…এই বলে চলে গেল সেতু
বিতান ওর ঘরে গেল, বিনতা রান্নাঘরে গেল।
রাতে খাবার খেতে বসে বিনতা বললো- সেতু মেয়েটা বেশ মিষ্টি, কি সুন্দর আন্তরিকতা, সহজেই পরকে আপন করে নেওয়ার এক অসীম ক্ষমতা ওর মধ্যে। এরকম যদি একটা মেয়ে পেতাম…
বিতান মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছে, মায়ের কথার কোনো উত্তর দিলো না।
রাতে শোবার পর বিতানের চোখে বারবার সেতুর মুখ ভেসে আসছে। ও যতবার অন্যদিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করছে ততবার সেতুর মুখটা ভেসে আসছে। মেয়েদের প্রতি কোনো আকর্ষণ এর আগে কখনো অনুভূত হয়নি। সেতু এসে ওর ব্রহ্মচারী রূপ ভেঙে দিলো বোধহয়। ও যে ভেবেছিল বিয়ে করবেনা, তবে কি এবার ওর মত বদল হলো।
পরেরদিন সকালে বিনা কারণে বারান্দায় গেল বিতান। পাশের বাড়ির ব্যালকনিতে চেয়ারে বসে একটা ফাইল দেখছিল সেতু, ও গিয়ে দাঁড়াতেই ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো– গুড মর্নিং, ঘুম হলো?
–মর্নিং, একটু আগে উঠলাম। তারপর হাত নেড়ে ইশারায় বললো কেমন আছো ?
ওর হাত নেড়ে বলা দেখে সেতু ওর নকল করে ইশারায় উত্তর দিলো।
বিতানের একটু নেচে নিতে ইচ্ছে হলো ওর দেখাদেখি সেতুও একই পদ্ধতি করছে বলে। তবে কি সেতুও ওকে পছন্দ করছে? কি জানি, কিছুক্ষণ ইশারায় কথা বলার পর সেতু ঘরে ঢুকে গেল, বিতানের ও অফিস যাওয়ার তাড়া আছে তাই ও বাই বললো।
দেখতে দেখতে তিনদিন কেটে গ্যাছে, সকালে বারান্দায় গিয়ে সেতুর সাথে দেখা করাটা যেন একটা নিয়ম মাফিক নেশায় পেয়ে গ্যাছে।
আজ ব্যালকনিতে বিতান গিয়ে দ্যাখে সেতু নেই, আধ ঘন্টা মতো অপেক্ষা করলো তবু সেতু এলোনা, কি হলো সেতুর?
খেতে বসে বিনতা বললো – তোর কি কিছু হয়েছে, শরীর খারাপ করছে? আজ কিছুই খাচ্ছিসনা দেখছি, শুধু নাড়াচাড়া করছিস
– না তো, কিছু হয়নি, আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না
অফিসে যাবার সময় বাইকে স্টার্ট দিয়ে একবার সেতুর ব্যালকনির দিকে তাকালো…নাঃ… কেউ নেই
সারাদিন ভীষণ অস্থির লাগছিল বিতানের, কিছুই ভালো লাগছিল না।
আরও দুদিন কেটে গেল, নাঃ…এবার খোঁজ নিতে হবে
রাতে খাবার খেতে বসে বিনতাকে জিজ্ঞাসা করলো – মা,সেদিন হনুমান তাড়াতে পাশের দিদার বাড়ি থেকে যে মেয়েটা এসেছিল সে কি চলে গ্যাছে ?
–কি জানি, আমার সাথে আর দেখা হয়নি
– আমাদের বাড়ি এলো, তোমাকে হনুমান তাড়াতে সাহায্য করলো তারপর তুমি ওর কোনো খোঁজ নেওনি? পাশেই তো থাকে, দিদুনের সাথে দেখা করতে গিয়ে ওর খোঁজ নিয়ে আসতে পারো।
– কিরে তোর মনে হচ্ছে সেতুকে খুব পছন্দ, এর আগে কোনো মেয়ের প্রতি কৌতূহল তো দেখাসনি।
– একটা কর্তব্য তো আছে, সেদিন ওতো গল্প করলো, তাই বলছিলাম।
– হ্যাঁ, তা তো আছেই। দেখতে ও সুন্দর, হাসিটাও সুন্দর, ব্যাবহার ও খুব ভালো… তাইনা?
মা এসব বলে আসলে কি জানতে চাইছে সেটা না বুঝে বিতান বললো– এক কথায় স্মার্ট ও সুন্দরী আর বাঙালি মেয়েদের তুলনায় বেশ লম্বা।
বিনতা আর কোনো কথা না বলে মুচকি হাসলো, ওর যা বোঝার বোঝা হয়ে গ্যাছে।
পরদিন সকালে বিতান ব্যালকনিতে গেল, সেতু আজও নেই। চুপচাপ মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। বিনতা পা টিপে এসে ওকে দেখে চলে গেল।
বিতান অফিসে যাবার জন্য তৈরি হয়ে খেতে বসেছে তখন বিনতা বললো– বাবু আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারবি?
– দেখি চেষ্টা করে
– কয়েকজন অতিথি আসবে বাড়িতে, তাই বলছিলাম
– অতিথি, কে আসবে মা?
– এলেই দেখতে পাবি, আসার সময় এইগুলো একটু নিয়ে আসিস। এই বলে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিলো বিতানের হাতে
আজ বিনতা সবলাকে বিকেলে আসতে বলেছে, তাই ও চলে এসেছে। বিতানও ঘন্টা খানেক আগেই বাড়ি ফিরেছে। বিনতা বিতানের জন্য একটা পাঞ্জাবি বের করে রেখেছিল, বিতান বাথরুম থেকে বেরোনোর পর বিনতা বললো – খাটের ওপরে পাঞ্জাবি রাখা আছে, ওটা পর
– আবার পাঞ্জাবি কেন, তুমিতো জানো আমার পাঞ্জাবি পরতে একদম ভালো লাগে না। একটা টি-শার্ট পড়ছি।
– আজ যা বলছি তাই করনা বাবু
– তোমার জ্বালায় আর পারলাম না, কে না কে আসবে তার জন্য আমাকে পাঞ্জাবি পরতে হবে।
পাঞ্জাবি পরে বাইরে আসতেই বিতানের মা বিতানের হাত ধরে কড়ে আঙুলের নখের ডগা কামড়ে দিয়ে বললো– আমার রাজকুমার, আজ যদি তোর বাবা থাকতো তোকে দেখে খুব খুশি হোতো।
– বাবা সবসময় আমাদের দেখছে, আমাদের আশেপাশেই আছে বাবা
– তা তো দেখছেই, আর তোকে আশীর্বাদও করছে
কলিংবেল বেজে উঠলো
বিনতা – যা, দরজা খোল
বিতান দরজা খুলে হতভম্ব, দ্যাখে– পাশের বাড়ির দাদু, দিদুন ,সেতু আর এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে
– আসুন, ভেতরে আসুন। মা দেখো কারা এসেছে…
– আসুন মাসিমা, মেসোমসাই আসুন, আসুন দাদা।
সেতু বিতানের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। বিতান ক্যাবলার মতো হাসলো পাঞ্জাবি পড়েছে বলে লজ্জায়।
সবাই বসার পর দাদু বিতানকে বললো– বিতান তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই, এ আমার শ্যালিকার ছেলে, মানে সেতুর বাবা সৌগত। আমি আসতে বলাতে ফ্লাইটে আজ সকালে এসেছে।
বিতান– আমি কিছু বুঝতে পারছি না, আমাদের বাড়ি এসেছেন সেজন্য আমি প্রনাম করলাম কিন্তু সেতু আবার প্রনাম করলো কেন?
দিদুন – আরে হাঁদারাম, এখনো বুঝলি না। সেতুর পাকাপাকিভাবে এ বাড়িতে থাকার ব্যাবস্থা করছি, তোকে আর ব্যালকনিতে গিয়ে সেতুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। ওকে এবার বাড়িতেই সবসময় দেখতে পাবি ।
বিতান– কিন্তু এতে সেতুর মত আছে তো?
এতক্ষণ পর সেতুর বাবা বললেন- আমার একমাত্র মা-হারা মেয়ে সেতু, পণ করেছিল কোনোদিন বিয়ে করবে না। আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। তোমার মধ্যে কি জানি কি দেখে ওর মত বদল করেছে, ওর ব্রহ্মচারিণী রূপ বদলে সংসারী হয়ে তোমার হাত ধরে একসাথে পথ চলার ব্রত নিয়েছে। ওর এই ব্রত নেওয়াটাকে আমরা সর্মথন করছি।
সবলা পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, বলে উঠলো– এ সবই হলো হনুমানের জন্য, হনুমান আম না খেলে দুজনের ব্রহ্মচারী রূপ ভাঙতো না।