T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || বিশেষ সংখ্যায় অনন্ত গোস্বামী

ক্যাপাসিটি বিল্ডিং

 

নারদ আর চন্দ্রদেব মর্ত্যলোকে এসেছেন। এসে দেখছেন একটা মিছিল হচ্ছে –

নারদ- নারায়ণ নারায়ণ , নারায়ণ নারায়ণ- এই মর্তলোকে দেখছি রোজই কোন না কোনও মিছিল লেগে আছে। কিন্তু এটা একটু অদ্ভুত লাগছে সবাই একই রকম ছাতা হাতে হেঁটে চলেছে, কোন ছাতার বিজ্ঞাপন হচ্ছে নাকি! যাই একটু ভালো করে বুঝতে হবে ব্যাপারটা।

 

মিছিলে যারা হাঁটছে- উঃ কি জ্বালাতন এই চাঁদি ফাটা রদ্দুরে ছাতা নিয়ে হাঁটো। আরে তবু তো এবার ছাতা আছে। গতবার তো আর তুই ছিলিনা তখন ছিল শুধু গেঞ্জি। তা তোমরা গেঞ্জির সাথে কি পড়ে হাঁটলে? কি আর পড়ব শাড়ীর ওপর ই গেঞ্জি পড়লাম। হাঃ হাঃ হাঃ ভারী সুন্দর দেখতে লাগছিল তোমাদের ভেবেই যা হাসি পাচ্ছে না।

 

এই চুপ কর এই ফেয়ার ট্রেডের দৌলতে তবু তো বছরে একটা ছাতা বা গেঞ্জি পাওয়া যাচ্ছে সেটাই বা মন্দ কি।

 

নারদ- না এদের কথায় ঠিক বোঝা যাচ্ছে না । কোনও শ্লোগান নেই কারখানা খুলতে চায় না বন্ধ করতে চায় কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। দেখি আর একটু এগিয়ে।

 

মিছিলে যারা হাঁটছে-এই যে দশ দশ্ টা আদর্শ আছে এর মধ্যে কলকাতায় নারী শক্তির পয়েন্ট টা সবচেয়ে বেশি পোক্ত। সব ফেয়ার ট্রেডের কর্ণধার ই মহিলা। হাঃ হাঃ হাঃ তাহলে ঐ সমান অধিকারের পয়েন্ট টার কি হবে ।

 

নারদ- হ্যাঁ এবার একটু বোঝা যাচ্ছে । মোটা মুটি দশ এগারো টা পয়েন্ট আছে এটা মেনে চলার চেষ্টা করাই এদের লক্ষ্য আর একেই এরা ফেয়ার ট্রেড মানে ন্যায্য ব্যবসা বলছে। যাই ঐ প্ল্যাকার্ড গুলো পড়ে ফেলি। একটা প্ল্যাকার্ড এ লেখা আছে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ।

 

 

 

 

 

এর কিছু দিন পর

 

ইন্দ্রের রাজ সভা সবাই বসে আলোচনা করছে।

ইন্দ্র- চন্দ্রদেব আর ভাল লাগেনা চিত্ত। রোজই ঐ রম্ভা – উর্বশীর এক ঘেয়ে নৃত্য । কিছু একটা ভাবো নতুন করে। যাতে আমার মনটা একটু ভরে।

চন্দ্রঃ যা বলেছন আমার ও ঐ একই মত। কিন্তু মাথায় আসছেনা কোনও পথ।

নারদ- নারায়ণ নারায়ণ প্রণাম ইন্দ্রদেব। আমার কাছে আছে নতুন পন্থা। নিশ্চয় এতে ভরবে প্রভুর মনটা। করতে হবে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং। নিতে হবে অপ্সরা দের নতুন নৃত্যের কোচিং।

ইন্দ্র- এতে কি হবে লাভ। কোথায় আছে এমন নৃত্যের হাব।

নারদ- ড্যান্স বাংলা ড্যান্স জি বাংলায়। পরখ করে আসুন যদি মন চায়। কাটতে জুড়তে নেইকো এদের জুরি। সারা বিশ্বের সকল করে চুরি।

ইন্দ্র- চুরি ! এ কি-করে মান ব। তবে রবে যখন মেনে নিয়েছে , আমরা কেন থামব।

তা ওরা কি নৃত্য শিখবে?

নারদ- হিপ হপ টা দারুন প্রভু । ওটাই ভালো জমবে।

ইন্দ্র- কি খপ খপ। এটা কি সেই হাম হাম গুরি গুরি।

নারদ- খপ খপ না হিপ হপ। এতে আছে অনেক জারিজুরি।

ইন্দ্র- নামটা কেমন বড্ড বে আক্কেলে। স্বর্গলোকে এমন নাম চলে। আমরা বরং নতুন নাম দেবো। চন্দ্র একটা ভালো নাম ভাবো।

নারদ- প্রভু আছে কি আপনার মনে। কবে শেষ বেড়িয়ে ছিলেন ভ্রমণে। মর্ত্যলোকে এটাই এখন হিট। চন্দ্রদেব সাক্ষী, উনিই রিপোর্ট দিক।

চন্দ্র- কি বলব ইন্দ্রদেব , ছোট ছোট সব ড্রেস । নৃত্যরতা রমণীরা দেখতে দারুন ফ্রেশ। এনার্জি কি বলব বাড়ছে ক্ষণে ক্ষণে। মধ্য রাতের পরে হানি সিং এর গানে। রম্ভা, উর্বশী সব একবারে ফেল। দেখলে প্রভু আপনিও বলতেন ওদের গো টু হেল।

ইন্দ্র- সে কি চাঁদ , আমরা সবাই বাদ। আপনি একাই নিলেন এমন নৃত্যের স্বাদ।

চন্দ্র- মার্জনা করবেন, হঠাৎ সে রাতে বেড়িয়ে ছিলাম বিহারে। আমার নজর পড়ল গিয়ে তন্ত্রা নামক বারে। ভাবলাম দিই একবার উঁকি। উঁকি দিতেই মনটা হল সুখি।

ইন্দ্র- আচ্ছা আচ্ছা। তাহলে নিয়ে এসো কাউকে একটা ধরে। যারা তেমন করে দেবে উর্বশীকে গড়ে।

চন্দ্র- কে আছো ! যমরাজ কে ডাকো এক্ষণই ?

যমরাজ- এই যে এলাম বার্তা শুনী।

ইন্দ্র- শুনেছ তো সমস্ত বিবরণ। তুলে আনতে হবে একজন শিক্ষক যে দেবে নৃত্যের প্রশিক্ষণ।

যমরাজ- যতদূর জানি , এমন কেউ মরছে না এক্ষনি।

ইন্দ্র- তবে জ্যান্ত আন ধরে। এটা কি আর কঠিন ব্যাপার তোমার দুতের তরে।

যমরাজ- প্রভুর নিশ্চয় আছে স্মরণে। কি কাণ্ড ঘটেছিল জ্যান্ত মানুষ এনে। তবে একটা উপায় আছে যাতে ঝঞ্ঝাট যাবে এড়ানো , আর বাঁচবে বিশাল খরচা। মর্ত্যলোকে অপ্সরী রা করুক নৃত্য চর্চা।

 

উর্বশী- দেখলি দেখলি তো রম্ভা দেবতারা কেমন আমাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দিল নাচ শিখতে।

আমাদের নাচ কে বলে ঘ্যান ঘ্যানে প্যান প্যানে।

 

 

রম্ভা- দাঁড়া , সব শিখে নিই তারপর , নাচ দেখাব। সবাই কে যদি নাচিয়ে না ছাড়ি তো আমার নাম রম্ভা নয়।

 

উর্বশী- কোথায় যাবি।

 

 

রম্ভা- ঐ তো ড্যান্স বাংলা ড্যান্সে গিয়ে ঢুকে পড়ব।

 

উর্বশী- চ তাহলে। কিন্ত এ কি এতো ছোটোদের নাচ হচ্ছে। নাচের মধ্যে আবার ভুত প্রেত কি করছে।

 

রম্ভা- আরে আমরা কি আর ওদের সাথে শিখব। আমরা তো দেখে শিখে নেব । আর তন্ত্রা বার এ ও একবার যাব। তবে এরা মনে হয় ঐ সত্যজিৎ রায়ের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভুতের নেত্য ও শেখাচ্ছে।

 

উর্বশী- রম্ভা ওই বিজয় না কি নাম সবাই তো অর খুব প্রশংসা করছে চল ওর ওয়ার্কশপ এ গিয়ে দেখি।

 

রম্ভা- হ্যাঁ বিজয়ন , বাঙ্গালী বলে তো মনে হচ্ছে কিন্তু মাদ্রাসি দের মত কেন যে নামের শেষে আবার একটা ন বসাতে গেছে কেন কে জানে। চল যাই।

 

উর্বশী- হিপ হপ তো শেখা হল। তন্ত্রা তে একবার ঘুরে যাই।

 

রম্ভা- কিরে সব ছোট ছোট আবার ছেঁড়া প্যান্ট পড়েছে, গরিব তো নয় তবে ছেঁড়া প্যান্ট কেন।

 

উর্বশী- আরে এটাই ফ্যাশন। কিন্তু আমরা স্বর্গে কি পরে এই নেত্য করব?

 

 

রম্ভা- এই পরেই করব, চ শুনেছি নিউ মার্কেটে সব পাওয়া যায় একবারে কিনে নিয়ে স্বর্গে যাই।

 

 

ইন্দ্র – রম্ভা, উর্বশী শুনলাম এসেছে। নৃত্যের কর আয়োজন। হিপ হপ দেখে ভরুক মন।

 

চন্দ্র- একি তোমরা আবার কারা। বস্ত্র পরে এমন ধারা।

 

উর্বশী- চিনলেন না প্রভু। নতুন বেশে রম্ভা আর উবু।

 

রম্ভা- নতুন নাচের নতুন ড্রেস। হিপ হপ ড্যান্স করব পেশ। কিন্তু কোথায় হানি সিং। তাকেও এবার খবর দিন।

ইন্দ্র- তোমরা কি সব পাগল হলে। নাচতে হবে মৃদঙ্গের তালে।

 

রম্ভা- নতুন নাচের নতুন গান। ডি যে ছাড়া সব বেমানান। তখন হবে হিপ হপ। শিখলে কামদেব রক কি পপ। না হলে হানি সিং। হিপ হপ টা বাদ ই দিণ।

 

ইন্দ্র- নারদ বেটাকে ডাকো তবে । ওকেই পপ গাইতে হবে। উল্টো পাল্টা বুদ্ধি দেওয়া। ওরই উচিৎ গানটা গাওয়া।

 

নারদ- নারায়ন নারায়নঃ । আমার প্রভু কিসের দোষ। আমার প্রতি এমন রোষ। আনতে গেলে নতুন ধারা। হয়না একা সবাই ছাড়া। নতুন নাচের নতুন গান। শিখতে মদন মর্তে যান।

 

ইন্দ্র- ঢের হয়েছে নতুন নাচ। শিখতে লাগবে বছর পাঁচ। নতুন কিছু খুব সোজা নয়। শিখতে গেলে লাগবে সময়। চুলোয় যাক পপ ও রক। আগের নাচ ই আবার হোক।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।