হোটেল থেকে বেরিয়ে বাইরে এলাম।
জলধারার তীব্র ঝাপটা যেন সাদা করে দিচ্ছে চরাচর
আশেপাশের বাড়িগুলো মুক ও বধির
ঢাকা দেওয়া শার্সিতে আছড়ে পড়ছে জোলো বাতাস
এই যদি বর্ষার রূপ হয় তবে আরও কী জানি দেখব
ছাতা মাথায় গুটিগুটি এগোই সোনাঝুরির অভিমুখে।
সারি সারি দীর্ঘ গাছেদের মধ্যে এসে দাঁড়াতেই দেখি
ভিজে যাওয়া লালমাটি থেকে উঠে আসছে অদ্ভুত ঘ্রাণ
যেমন শৈশবের আবছা স্মৃতিতে মনে পড়ে গেল
প্রপিতামহের দুটি খড়মের খট্ খট্ চলার আওয়াজে
কীভাবে যেন বর্ষাজড়িত বাড়ির পিছনের বাগানে
শুনতে পারতাম আম,জাম, কলাগাছেদের চাপা দীর্ঘশ্বাস।
তেমনই অনুভূতির সুঘন আবেশে খোয়াইয়ের চারপাশে
টের পাচ্ছি অদ্ভুত এক উপস্থিতির মৃদু আভাস
জলধারায় যখন ক্রমশ ভরে উঠছে খোয়াইয়ের বুক
সরিয়ে নিলাম ছাতা মাথা থেকে।
আহা! এ কী দেখছি আশেপাশের প্রত্যেকটি গাছ সহসা
দুলে উঠছে গোড়া থেকে। এও কী সম্ভব?
সমস্ত শরীর ভিজছে অঝোর ধারায়, ঝাপসা হয়ে গেছে
চশমার কাচ, তবু, তবু এক অজানা আকর্ষণে
এগিয়ে গেলাম নদীধারে কাছে
কিন্তু ভেতর থেকে হঠাৎ কেউ যেন টেনে রাখছে পা
চাইছি এগোতে পারছি না
চশমা নামিয়ে নিতেই দেখি সামনে দীর্ঘ এক ছায়া মাথা ঝুঁকিয়ে স্থির চোখে নদীজলের দিকে
কে উনি? আজানুলম্বিত তাঁর হাতে ধরা গীতবিতান।
মূর্ছিত হবার প্রাকমুহূর্তে স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিলাম
ছায়ামূর্তির উচ্চারণঃ আছো কী এখানে বৌঠান?