শনিবারের হরেকরকম – এ অরূপ চট্টোপাধ্যায়

লোকান্তর
শ্রাদ্ধের আমন্ত্রণপত্রতে অনেক সময়ই দেখা যায় লিখিত বয়ান – প্রয়াত ব্যক্তি সাধনোচিত ধামে / অমৃতলোকে প্রস্থান করেছেন।
কতিপয় ব্যক্তির মনে কখনো হয়তো প্রশ্ন জাগে – কি এই সাধনোচিত ধাম অথবা কাকে বলে অমৃতলোক ? কবি মোহিতলাল মজুমদার- এর মত কট্টর দেহতত্ববাদী অথবা বরেণ্য বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার মত বস্তুবাদী (যিনি বেদান্ত-কেও অন্তঃসারশূন্য বলে অস্বীকার করেছিলেন) – তাঁদের কে শ্রদ্ধা জানিয়েও বলা যেতে পারে – স্বামী অভেদানন্দ এবং ঋষি অরবিন্দ – এনাদের সাধনা এবং গবেষণা উপেক্ষণীয় হতে পারেনা।
স্বামী অভেদানন্দ তাঁর Life beyond Death গ্রন্থে এবং ঋষি অরবিন্দ তাঁর Life Divine গ্রন্থে – জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মা-র অন্বয় তথা সমন্বয় এর উল্লেখ করেছেন।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য দেহতত্ত্বের কিছু মতবাদ ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ দেব ও স্বীকার করেছেন। তাঁর কথায় – “যাহা নাই ভান্ডে , তাহা নাই ব্রহ্মাণ্ডে” ! বাস্তবিকপক্ষে ই – আদি ভারতীয় শাস্ত্র অনুসারে মানবদেহে অবস্থান করে মহাকাশ , সমুদ্র, নক্ষত্ররাজি|
আবার সেই বেদান্তশাস্ত্র কিন্তু উল্লেখ করছে আমাদের দেহাভ্যন্তরের কিছু বিশেষ “বাযু”র কথা । প্রাণবায়ু , অপানবায়ু , সমানবায়ু , উদানবায়ু , ব্যানবায়ু।তাহলে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন ওঠে – লালনের দর্শনের “খাঁচার ভিতর” হতে এই “অচিন পাখি” অর্থাৎ প্রাণবায়ু কোন লোকে যায় ?
বিভূতভূষণ বন্দ্যোপধ্যায়ের “দেবযান” উপন্যাসেও আমরা দেখতে পাই – পরলোকের বিভিন্ন স্তরভেদের উল্লেখ । ভারতীয় দর্শন বলে সপ্তলোকের কথা। সেগুলি যথাক্রমে হলো – ভূলোক , ভূর্বলোক, স্বরলোক, মোহরলোক, জনলোক , তপোলোক, সত্যলোক । আমাদের সুষুম্নাকাণ্ডের অভ্যন্তরস্থ সপ্তচক্রের এক একটি চক্রের সাথে অন্বয় রয়েছে উল্লিখিত একেকটি লোকের।
এই প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে এমন একটি ছোট বই, যেটি আসলে রবীন্দ্রনাথ লিখিত কিছু পত্রগুচ্ছের সমষ্টি। পত্রগুলি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তাঁর স্নেহভাজন এবং পরবর্তী কালের দিকপাল সাহিত্যিক শ্রী প্রমথনাথ বিশী কে। তার একটি চিঠিতে তিনি লিখেছেন – “আমাদের বাড়িতে মাইকেল মধুসূদনের প্রভাবিত বাতাবরণে আমার জন্ম। তাঁকে কখনো চাক্ষুষ করিনি , যদিও পরবর্তীকালে একবার প্রেতবাণীবহ চক্র যোগে আলাপচারিতা হয়েছিল”
মৃত্যুচেতনার এক অনন্য উপলব্ধি রবীন্দ্রনাথ লাভ করেছিলেন বলেই বোধহয় তিনি বলতে পেরেছিলেন “কেন রে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয় , জয় অজানার জয়”|