আচ্ছা ,বাড়ির পোষা টিয়ার নাম শাজাহান , কেউ কখনও শুনেছো ? আমাদের বাড়ির ষষ্ঠ সদস্য টিয়াপাখিটা ক্রমশ থিতু হয়ে, রীতিমতো হুকুমদারী শুরু করলো। যেমন ধরো , দাদা ফি- শনিবার বিকেলে বাড়ি ফিরেই , ছাদে ওঠার সিঁড়ির মাঝামাঝি যে চাতাল , সেখানে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়তে বসে । কিন্তু ঠিক সময়ে পড়তে না বসলেই , কী মুশকিল ! শাজাহান — কে, কে, কে ,কে.. বলে চেঁচাতে থাকে । বেচারা দাদা পরীক্ষার আগে ,তার জটিল বিষয়ে পড়াশোনার মধ্যে ডুবে গেলে ,শাজাহান চুপ। কিন্তু দৃষ্টি তার ঘরে-বাইরে– বাড়ির সব জায়গায়। তারপরে , আমি আর দিদিও তার বকুনি থেকে রেহাই পাই না। তবুও, কী বলবো ? অদ্ভুত ব্যাপার! মা খাঁচার মধ্যে দিয়ে আঙুল ঢুকিয়ে দিলে , কোনোদিনও ঠোক্কর তো মারেই না , উপরন্তু ঠোঁট দিয়ে কী সুন্দর আদর করে দেয় , মায়ের চাঁপাকলির মতো আঙুলগুলোকে। আরও অদ্ভুত , মা যখন একটু টেনে টেনে , ক্লান্ত সুরে হারমোনিয়ামে রেওয়াজ করতে বসে ; শাজাহান ঠিক বুঝতে পারে, এখন ডাকাডাকিটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। সে চুপ করে জানলা দিয়ে হারমোনিয়ামের দিকে তাকিয়ে থাকে । কিন্তু ,আমার সঙ্গে ওর একটা অলিখিত খটাখটি আছে । যেমন , এবার অঙ্ক পরীক্ষার দিন ক্রিকেটের ধারাবিবরণী শুনতে শুনতে রেডিও বন্ধ করে বেরোবার সময় , ও পিছন থেকে ডেকেছিল । টিয়াপাখি যে এত তাড়াতাড়ি মানুষের ডাক শিখে নিতে পারে , না শুনলে বিশ্বাসই করতাম না! ফিচেল ছেলের মতো আমাকে আওয়াজ দিয়েছিল — তাড়াতাড়ি যা… তাড়াতাড়ি যা…
তখনই বুঝেছিলাম, একটা অঘটন ঘটবে। রেজাল্ট যেদিন বেরোলো, আমি যথারীতি অঙ্কে ধেড়িয়ে দেখিয়ে দিলাম যে, আমি অনেক কিছু পারি । ছিয়ানব্বই , উননব্বই থেকে পারদ নামতে নামতে আঠাত্তরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। আর , যাকে খাতা খুলে অঙ্ক দেখাতে গিয়ে , আমার এই কেলোর কীর্তি হলো , সেই নওদাপাড়ার কালু টেনেটুনে উতরে গেলেও , অঙ্কে কিন্তু ( এইবার আমার সত্যিই কান্না পেয়ে যাচ্ছে ) , ব্যাটা আমার খাতা দেখে টুকে বিরাশি পেয়েছে ; আর আমি আটাত্তর ! দিদি তুই বিশ্বাস কর , এবার আমার অঙ্কে একশো দশ পাওয়ার কথা ছিলো। মানে, নিজেরগুলো তো সব ঠিকঠাক করেই ছিলাম , তার ওপরে কালুকে দুটো পাঁচ নম্বরের অঙ্ক উপহার দিয়েছি । তাহলে কত হল ? একশোতে একশো দশ হয় না ? এই আমার ট্রাজেডি–আমি আকুল হয়ে কিছু বোঝাতে গেলেই, দিদি দেয়াল ঘড়িতে ঠিক ছটা বেজে পাঁচের মতো মাথাটা হেলিয়ে, অবাক হবার নিখুঁত অভিনয় করে বলে ওঠে–ওমা! ঝন্টু, তুই কী দারুণ, ভীষণ প্রতিভাময়ী রে….. ।
আমার ট্রাজেডির আর একটা দিক জানো? অ্যানুয়ালের রেজাল্ট বেরোলে , সপ্তম বা অষ্টম হয়েও ফেলুরামের এর মতো মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরি। ওই বিশ্বাসঘাতক অঙ্ক আমাকে গোল করার মুখে মোক্ষম ল্যাং মারবেই মারবে । তবু , আমাদের ডার্লিং বাবা আমাকে উৎসাহ দেয় — তাতে কী হয়েছে ? পরেরবার ঠিক হবে । তারপর মার্কসিটে মন্তব্য লিখে দেয় — দেখিলাম । ধন্যবাদ।
স্বাঃ — শচীন্দ্র কুমার বসু।
অথচ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরের দিনই ,দাদা আমাকে নিয়ে ফড়িয়াপুকুর ছুটেছিল , দাশগুপ্ত ব্রাদার্স থেকে আমার ফুটবল খেলার বুট , সাদা হাফপ্যান্ট, মোহনবাগানের সবুজ মেরুন জার্সি আর মোজা, এমনকি সমস্ত টুকিটাকি পর্যন্ত কিনে দিতে । তারপর শ্যামবাজারের বিখ্যাত গোলবাড়ির কষা মাংস পরোটা খেয়ে , বীরদর্পে পাড়ায় ফেরা । এবার থেকে আর খালি পায়ে না , রীতিমত বুট পরে ফুটবল মাঠ দাপাবো। আস্তে আস্তে নিজেকে বেশ বড় বড় বলে মনে হচ্ছে । কিন্তু অঙ্কে ধেড়িয়ে, আমি সমস্ত সুখের দুধে একফোঁটা চোনা ফেলে দিলাম । যখনই দেখলাম ,বাড়িসুদ্ধ সবাই আমাকে একটু যেন বেশি বেশি সান্ত্বনা দিচ্ছে , তখনই মনে হলো আমার ব্যর্থতা এরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না । বিপ্লবের ভাই হয়ে, ছি ছি ছি …..লজ্জা লজ্জা । কিন্তু দাদার কোনো হেলদোলই নেই –ভাবটা এইরকম যে,হয়েছে তো কী এমন হয়েছে ? পরেরবার ঠিক হয়ে যাবে। এই হচ্ছে আমার দাদা । সুখে দুঃখে বিশেষ নড়াচড়াও নেই অথবা ,অযথা হাঁকডাক দেখিয়ে কোনো দাদাগিরিও নেই । আজ যেমন , বাড়ি ফিরে এসে নিঃশব্দে , বাবার নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের বাড়ির লাগোয়া একটুকরো জমিতে রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য আলো ফিট করে , নেট লাগিয়ে , সম্রাট শাহজাহানকে কুর্নিশ করে নিজের পড়ার জায়গায় চলে গেল । বাবা বলে –ওটা হচ্ছে বিলুর
স্টুডিও । বাবার আবার বিলু থেকে মাঝেমধ্যে আদরে গোবরে, নিজের বড় ছেলেকে লু বলেও ডাকতে ইচ্ছে করে। এই ‘লু’ শব্দটা খড়্গপুরে বীণাপিসিদের ওখান থেকে এসেছে। বীণাপিসি এখন খড়্গপুরের বাসিন্দা। যশোরের প্রাক্তন মহিলা অ্যাথলেট, আমাদের প্রিয় মেজপিসি, বীণা বোস — সাইকেল রেস , জ্যাভলিন থ্রো , পোলভল্ট আর একশো মিটার ,দুশো মিটার দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন। এখন ভাইফোঁটার দিনে আদরের ভাই খোকন মানে আমার বাবাকে মনে করে , দেয়ালে ঘিয়ের ফোঁটা দেয়, আর বাবা প্রতিবারই বলে — সামনের বছর মেজদির কাছে যাচ্ছি । খড়্গপুরে নাকি গ্রীষ্মকালে এত গরম বাতাস বয়ে যায়, যে গায়ে ফোসকা পড়ে । সেই বাতাসকে বলে ‘লু’ । সেই থেকেই বিলু থেকে লু। বাবার মুখে শুনেছি , কমিউনিস্ট নেত্রী গীতা মুখার্জি নাকি বীণাপিসির ছোট্টবেলার বন্ধু ! আচ্ছা, খড়্গপুর কত দূরে ? সেখানে আমাদের যাওয়া হয় না কেন ? এ সব ভাবতে ভাবতে , রাতের আলোয় ব্যাডমিন্টন খেলতে জড়ো হওয়া বন্ধুদের ,আমার জন্যে কেনা ফুটবলের সাজ সরঞ্জাম যখন দেখাচ্ছি , ওমা ! দাদা কখন যেন একটা কী সুন্দর কবিতা লিখে ফেলেছে । আর দিদি সেটা দাদার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে , সবাইকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পড়ে শোনাচ্ছে। কবিতার নাম — মুছে যাওয়া দিন। এইটুকু সময়ের মধ্যে দাদা একটা আস্ত কবিতা লিখে ফেলল ! মাইরি দিদি , জিনিয়াসরা বোধহয় এরকমই হয় । আচ্ছা , কবিতাটা বলি , কেমন —
গলাগলি ছিল হাতাহাতি ছিল / মাঝে ছিল ছিটেবেড়া/বেলা বারোটায় ভাইকে আনতে/ বেলতলা যেতো ন্যাড়া/ মায়াতরু ছিল ভোজবাজি ছিল /ফুটবলে পি কে , চুণী / উটকো বাতাসে উসকে উঠতো / সাধুবাবাদের ধুনী / কথাকলি ছিল কত্থক ছিল / সকলের ছিল ডানা / নিম্নচাপের বর্ষণ দিতো / নীল দিগন্তে হানা / দুধ কলা আর কালসাপ ছিল / বাঘের সঙ্গে ফেউ / চুপিসাড়ে নদী মাঝরাতে দিতো / বাড়ির উঠোনে ঢেউ / রূপকথা আর চুপকথা ছিল / সূয্যি নামলে পাটে / মরা সাহেবের গামবুট পরে / ভূত নাড়া দিতো খাটে / পূর্ণিমা ঢালা কোজাগরী ছিল / মোয়া নাড়ু মুড়কিতে / বুড়ো ভগবান শিহরিত হতো / চরণামৃত নিতে / গুণভাগ ছিল দোলে ফাগ ছিল / কালবাউসের ঘাই /পটকা দোদোমা ছুঁচোবাজিদের / কী বিচ্ছু রোশনাই /তিনতাল আর নিমডাল ছিল / হাতে ছিল ঝুরো চাঁদ / ভালো মাটি দিয়ে বাঁদর গড়েছি / তাতেই কি আহ্লাদ / রাজাগজা ছিল মৌতাত ছিল / যাত্রার সংলাপে / মুছে যাওয়া দিন জমিয়ে রেখেছি / তলোয়ারহীন খাপে।
হাততালি ,হাততালি ,হাততালি — ব্যস , সেদিনের রাতের ব্যডমিন্টন যেন দুধ জমে জমে ক্ষীর ! বাবা মালকোঁচা মেরে , র্যাকেট হাতে নেমে পড়েছে । দিদি আর মা চাদর মুড়ি দিয়ে সিঁড়ির ধাপে বসে শাজাহানের খাঁচাটাকে নিয়ে খেলা দেখছে । বাবার ট্রেনিংয়ে আমরা মোটামুটি সবাই যদিও ওস্তাদ হয়ে গেছি ; লেকিন ,শ্যামলের বাঁহাতে র্যাকেট ধরে ব্যাডমিন্টন খেলাটা সত্যিই দেখবার মতো ! বাবা আর শ্যামল পার্টনার হলে নেটের উল্টোদিকে আমাদের ওস্তাদি খতম । বাবা একটু ভারী শরীর নিয়ে এই বয়সে লাফিয়ে উঠে স্ম্যাস করতে পারে না ঠিকই , তবু এককালের ক্যালকাটা চ্যাম্পিয়নশিপে লড়ে যাওয়া আমার বাবা যখন সাটল-কক নিখুঁতভাবে নেটের উপর টাচ করিয়ে অপোনেন্টকে বোকা বানিয়ে দেয় , অথবা সার্ভিস করার সময় স্পিন করায় , তখন শুধু হাঁ করে চেয়ে চেয়ে ভাবি — এই বাবাই যখন অ্যালজেবরা, পাটিগণিত নিয়ে আমাকে শেখাতে বসে , তখন তার অন্য রূপ ! অঙ্কগুলো যেন মাখনের মতো গলে যায় , এত সুন্দর তার বোঝাবার কায়দা । রাত সাড়ে নটায় খেলা শেষ করে , নেট গুটিয়ে, তারপরেই কি ছুটি হয়ে যায় ? কক্ষণো না। কারণ , ততক্ষণে বাবার বন্ধু অমরকাকুর ডিরেকশনে ,পাড়ার বড়দের শীতের নাটকের রিহার্সালে হানা দেওয়া আছে না ? সেখানে তখন তুমুলভাবে চলেছে কিরণ মৈত্রের ‘ বারো ঘন্টা ‘ নাটকের রিহার্সাল ।
আমি এমন গবেট (শব্দটা দিদি আমার সম্পর্কে বলে ) , মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম– আচ্ছা মা , পাড়ার বড়রা কি এবারে বারো ঘন্টা ধরে নাটক করবে ?
মা এখন অনেকটাই সুস্থ । কিন্তু সেই ছটফটে খুন্তি নাড়া , বাবাকে অফিস পাঠিয়েই হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়া , দিদিকে দু-বিনুনী করে স্কুলে পাঠানো,নাচের ক্লাসে পাঠানো — সবকিছুতেই যেন একটা ভাঁটা পড়ে গেছে । মায়ের শোবার খাটের পাশে , একটা ছোট্ট টেবিল জুড়ে নস্যির কৌটোর মতো শিশিতে শিশিতে মায়ের ওষুধ সাজানো । দিদি একাই দায়িত্ব নিয়েছে দিনের বিভিন্ন সময় মাকে ওষুধ খাওয়ানোর । দিদি না থাকলে আমি — এভাবেই চলছে । একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি , এই ওষুধগুলো আসলে মার উন্মাদনাকে ঠান্ডা রাখার জন্য। মা এখন আর উত্তেজিত হয় না। বরং মাঝে মধ্যেই বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে । একদিন তো জোর করে রান্নাঘরে ঢুকে , ডাল সম্বরায় রাধুনী ফোড়ন দিয়ে , এক কড়াই ডাল ঢেলে, একটু চোখ বুজতে গিয়ে , খাটে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল । সেই পোড়া ডালের গন্ধে পাশের বাড়ির মাসিমা এসে ডাকাডাকি করে মায়ের ঘুম ভাঙায়। ভাগ্যিস সেদিন বাড়িতে আগুন ধরে যায় নি ! কেননা , আমি দিদি দাদা কেউ ছিলাম না ,আর বাবা তো তখন অফিসে ।
স্কুলের বার্ষিক পুরষ্কার বিতরণী উৎসবে , বাংলার অন্যতম মাস্টারমশাই রঞ্জিতবাবুর ডিরেকশনে, রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর নাটকে, যখন আমাকে অমল করবার জন্য ডাকা হলো , সেদিন আমি বাড়িতে এসে দিদির সঙ্গে রীতিমতো কত্থক নাচ জুড়ে দিয়েছিলাম — আনন্দে , আরে বাবা আনন্দে ! সাতদিন ধরে অমল দইঅলা অংশটা করতে করতে , যখন আমি মনেপ্রাণে আমার দাদার মতো কবি হয়ে গেছি , আর নিজেকে অমল বলে ভাবতে শুরু করেছি , সারা বাড়িতে শুকনো মুখে খোলা জানালার দিকে তাকিয়ে অমলের ডায়লগ প্র্যাকটিস করছি , আর পাশের বাড়ির কৃষ্ণা বা বুড়িকে মনে মনে সুধা সুধা বলে ডাকছি — ঠিক সেই সময় একদিন রঞ্জিতবাবুর বাংলা ক্লাসে সেই অঘটনটা ঘটলো। উনি তখন নতুন ক্লাসে কবিতা পড়াচ্ছেন — অয়ি সুখময়ী উষে , কে তোমারে নিরবিল ?
বালার্ক সিন্দুর ফোঁটা কে তোমার ভালে দিলো ?
আচ্ছা কল্যাণের কী দরকার ছিল — স্যার , বালার্ক শব্দের মানে কি , জিজ্ঞেস করবার ? একটু থেমে রঞ্জিতবাবু উত্তরটা দিতে গিয়ে হঠাৎ টের পেলেন , আমি ফিক করে হেসে ফেলেছি । ব্যস ! তখনই আমার বজ্রতে মস্তকপাত । রঞ্জিতবাবু একটু গম্ভীর হয়ে , ক্লাসের মধ্যেই আমাকে বলে দিলেন — পরিচয় , আজ আর নাটকের রিহার্সাল হচ্ছে না । তোরা তো ক্লাস এবার সেভেনে , ক্লাস সিক্সের সোমনাথকে পেয়ে গেছি — অবিকল রবিঠাকুরের অমলের মতো দেখতে । ওকে বইটা দেওয়া হয়েছে , অমলের রোলটা মুখস্থ করবার জন্য । তুই তো খারাপ করছিলি না , কিন্তু মুশকিল হলো …. আমি প্রাণপণে আমার চোখের সামনের অন্ধকার হাতড়ে মনে মনে মিনতি করছি — স্যার,স্যার, বলবেন না , বলবেন না , প্লিজ….আমি বুঝে গেছি। কিন্তু স্যারকে তো তখন কথাতে পেয়েছে…. পরিচয় , সোমনাথ যদিও তোর থেকে অনেক সুন্দর দেখতে , কিন্তু অভিনয়টা ও তোর মতো পারবে না, আমি সিওর । তবে ,ওর দাঁতের সেটিংটা তোর থেকে ভালো । যাই হোক, অমলের খেলার সঙ্গীদের মধ্যে তুই কিন্তু থাকছিস। মন খারাপ করিস না ।
সেদিন ছুটির শেষে , ফাঁকা ক্লাসরুমটাকে আমার মহাশূন্য মনে হতে লাগলো । আমি কল্পনার শ্যামলী নদীর দিকে তাকিয়ে, প়াঁচমুড়ো পাহাড়ের কোল থেকে আসা দইঅলাকে আকুলভাবে ডেকে ডেকে বললাম– দইঅলা ,ও দইঅলা ,ডাকঘর ডাকঘরেই আছে ; শুধু অমল বদলে গেছে । এরপর থেকে , রিহার্সালে তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না । তুমি কিন্তু রাজার ডাকহরকরাকে মনে করে বলে দিও — রাজা যেন আমার নামেও রঙিন খামে চিঠি পাঠায়।
ক্লাসরুমের দরজা জানলা বন্ধ করতে এসে উমাশঙ্করদা আমাকে বেঞ্চে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো — কী হয়েছে পরিচয় ? তুমি কাঁদছো কেন ? বাড়ি যাবে না ?