কবিতায় বলরুমে অমিত বাগল (গদ্য কবিতা)

পয়লা পৌষ

মা চোখের জল ফেলতো আর বলতো : এইদিনেই সিদ্ধকাঠি ছাড়ছি, চৈদ্দ দিনের মাথায় শউর মরলে,সাপে কাইট্যা এক দেয়ররে মারলো । আমি আর যাইতে পারি নাই।
শিয়ালদা স্টেশনে পোক আর পোক
হেইয়াই আমার শ্যাস স্টিমার-রেল

এক্কেরে অগস্হ্য যাত্রা। বুড়াশিবতলা।ভবানীপুর কার্ড আমাগো দুইজনরার। রেঙুনের চাউল দেত। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ অফিস…শীলাও হয় নাই। শীলা তো কত পরে। অর বাপে কালীঘাটে পুজা দেছেলো

কী দিন মাইনসের দেখনের লাগে! মনে আসে,চক্ষে জল আসে,শীলারে লইয়া আমরা আসছিলাম সুকিয়া স্ট্রিটের এক ভাড়াঘরের চৌকির তলে ,ভাড়ায়। কী দাম! কী কোথায় পাই, শঠীর পালো খাওয়া রাখছি শীলারে।


মা আমাদের কখনও পয়লা পৌষ কোথাও যেতে দিতনা। আমি কী বলবো একে! আর্ষ-প্রয়োগ? এতদিনে আমরা কোথাও যাইও না।
কতবছর হয়ে গেল, মা আর নেই। ২০০৫ সালের ৬-ই অক্টোবর–দেবীপক্ষের চতুর্থী। সে হাসপাতালের আরেক কাহিনী।
কিছুতেই ভর্তি নেবেন না মাননীয়… উনি ক্লিনিক্যালি দেখে বুঝলেন,মা খুব ভাল আছে। হেড কন্টিউসান কেস। দুদিন আগে ER Headquarters থেকে এসেছে। ঠিকঠাক পা পড়ছেনা,ঘোলাচোখ…অথচ মা নাকি খুব ভাল আছে। বয়েসে অনেক ছোট ওইডাক্তারসাহাবের পা ধরতে বাকী রেখেছিল বড়দি। উনি ভর্তি নিচ্ছেন না। গায়ের জোর। আমি ফিরিয়ে আনার অটোগাড়ি ঢুন্ডতে গেসলুম। সেজদিরা কোনোভাবে ওয়াশরুম নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করছে। ব্লিচিং উড়তে চতুর্দিকে…
মা অজ্ঞান হয়ে গেসলো। তারপর-ই কোমা। কনফিউজড… ওই সে ডাক্তারসাহেবের তারপরে দিদিকে কী বড়দি,বড়দি… ICCU–তেও যাবো বললেই উঁনি রাজী যেন হয়েই আছেন। শেষে Medical Board গড়লেন আমাদের পরমপ্রিয় ডাক্তার । শুনি উনিও আর নেই, VR… আমার-ই মতো।

হ্যাঁ,যা লিখছিলাম,আমরাও পয়লা পৌষ উঠিয়ে দিইনি। আজও মেনে নিয়েছি মায়ের সে কী আপসোস !

সর্বনাশ রূপ বেলা—
কালবেলা

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।