• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন অ্যালবার্ট অশোক (পর্ব – ৪২)

মহিলা ভাস্কর

শিল্প -সাহিত্য -নাটক ইত্যাদি সংস্কৃতির জগতে মহিলাদের উচ্চমেধা সম্পন্ন অবদান খুব একটা পাওয়া যায়না। আমরা যতটুকু শিল্প সাহিত্য বুঝি তা আমেরিকা ও ইউরোপের দান। এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রলিয়া দক্ষিন আমেরিকা প্রভৃতি মহাদেশের প্রভাব তেমন নেই।
সংস্কৃতির সাফল্য আসে ভাত/ রুটি, কাজ/চাকরি,আশ্রয়/ঠাঁই ইত্যাদির পরে। আর কিছুটা মানুষের মেধা মনন চর্চার উপরে। ইউরোপ আমেরিকার নাগরিকদের এবং তাদের রাস্ট্রের পরিচালকদের যে ক্ষমতা আছে তা সম্ভবতঃ বাকী মহাদেশগুলিতে নেই। এছাড়া আর উত্তর আপনি কি দিতে পারেন?
আমরা চেষ্টা করি, ইউরোপ আমেরিকার সংস্কৃতি নকল করে আবার তাদের কাছেই বিক্রী করতে। কারণ ক্রেতা তো আর অন্যকোথাও নেই। নকল কখনো আসলকে ছাপিয়ে যায়না। ফলে নকল বিক্রী হয়না। তবু আমরা চেষ্টার অন্ত রাখিনা।
ইউরোপ, আমেরিকাতে বেশ কিছু মহিলা ভাস্কর আছেন। ভাস্কর্য নির্মাণ পরিশ্রমের কাজ।মহিলাদের সেখানে অবদান নিশ্চিত প্রশংসা করার।
জোসেফিনা ডি ভাসকনসেলোস (Josefina de Vasconcellos)

ভাস্কর্যের নামঃ Reconciliation
জোসেফিনা অ্যালিস হার্মিস ডি ভাসকনসিলোস (Josefina Alys Hermes de Vasconcellos) জন্ম ২৬শে অক্টোবর ১৯০৪, মোলেসি, সেরি, ইংল্যান্ড(Molesey, Surrey, England), মারা গেছেন ২০ জুলাই ২০০৫ (বয়স ১০০ হয়েছিল) ব্ল্যাকপুল, ইংল্যান্ড (Blackpool, England)
শিক্ষাঃ বোর্নেমাউথ আর্ট স্কুল(Bournemouth Art School), রিজেন্ট স্ট্রিট পলিটেকনিক, একাডেমি দে লা গ্র্যান্ডে চৌমিয়ার(Académie de la Grande Chaumière), রয়েল একাডেমী স্কুল
ভাস্কর্যর জন্য পরিচিত।
উপরের মূর্তীটি দেখে আপনার মনে অনেক আবেগের সংঘাত ঘটবে। দুজন নরনারী নিশ্চিত মনোমালিন্য ও বিরহের পর আবার ফিরে এসেছে দুজন দুজনার কাছে।নিজেদের দোষ কবুল করে শান্তি ও সহমর্মিতায় ভালবাসা চাইছে। এ এক চিরন্তন নরনারীর সংসারের ছবি। মনকে নাড়িয়ে দেয়। এই কাজটি তার বিখ্যাত কাজ। তিনি জীবনের শেষ কাজ রিডালের জঙ্গলে (in the woods at Rydal), এস্কেইপ টু লাইট (Escape to Light) নামে একটি বড় আকারের পাথরের খোদাই ভাস্কর্য করেছিলেন ৯০ বছর বয়সে। জীবনে প্রচুর সম্মান ও পুরস্কার পান।

Escape to Light
অগাস্থা সেভেজ (Augusta Savage) অগাস্টা ক্রিস্টিন ফেলস Augusta Christine Fells; জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারী , ১৮৯২, গ্রিন কোভ স্প্রিংস, ফ্লোরিডা,মৃত্যু ২৭ মার্চ, ১৯৬২ (বয়স ৭০) নিউ ইয়র্ক
জাতীয়তাঃ আমেরিকান। শিক্ষাঃ কুপার ইউনিয়ন, অ্যাকাদেমি দে লা গ্র্যান্ডে চৌমিয়ার (Cooper Union, Académie de la Grande Chaumière)। ভাস্কর্যর জন্য পরিচিত।
উল্লেখযোগ্য কাজ Gamin, W.E.B Duboi্‌ Lift Every Voice and Sing ।
হারলেম রেনেসাঁ (Harlem Renaissance) হল নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটান বরোর(Borough: Manhattan) সংলগ্ন এলাকা হারলেম নামক স্থানে নয়া নিগ্রো আন্দোলনের ফসল। ১৯২০ সাল থেকে ১৯৩০ সাল, সামাজিক , বৌদ্ধিক ও শৈল্পিক জাগরণ হয়েছিল। এটা আমেরিকার ইতিহাসে একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সেই সময়, বর্ণ বৈষম্য, নগন্য অর্থনৈতিক সুবিধা,এবং নিগ্রোদের সাংস্কৃতিক বেড়ে উঠার পথ কদাচিৎ ছিল। ঐরকম একটা সময়ে হারলেম রেনেসাঁ নিগ্রোদের, আফ্রিকার আমেরিকানদের একটা জমি তৈরি করে দিয়েছিল। সমগ্র আমেরিকার ইতিহাসে। সময়টা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর। নিউইয়র্ক শহরে চূড়ান্ত অর্থনৈতিক মন্দা। তখন সাড়ে সাত লক্ষ নিগ্রো, আমেরিকার দক্ষিণ থেকে উত্তরে ভবিষ্যৎ গড়তে ছুটল। ম্যান হাটানে হারলেম সেকসন হল, ৩ বর্গ কিমি, তাতে প্রায় পৌনে দু লাখ নিগ্রো। এলাকা পুরো কালো মানুষদের জন্য চিহ্নিত। সেখানে, সংগীত, সাহিত্য শিল্প ইত্যাদি নিয়ে কালো নারী পুরুষ সৃজনে চরম উৎকর্ষতা দেখাল। তাদের মধ্যে একজন হলেন অগাস্থা সেভেজ (Augusta Savage, 1892 – 1962 )। এক নারী ভাস্কর। অগাস্ত রঁদ্যার নাম শুনেছেন আপনারা। পৃথিবীর বিখ্যাত ভাস্কর্যের যাদুকর। তার তুলনা না হলেও অগাস্থা সেভেজের ভাস্কর্যের ক্ষমতা প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি ও গড়তে পারেন।
আমি দেখছিলাম অগাস্থা সেভেজের মূর্তি, আর মনে পড়ে গেল ক্যামিলি ক্লদেলের (Camille Claudel, 1864-1943) কথা, রঁদ্যার প্রেমিকা, এক সুনিপুন মহিলা ভাস্কর। এই দুই মহিলা হাজারো মহিলার অনুপ্রেরণা। তারা দক্ষ ভাস্কর, তার প্রতিভার আকর, তারা কাজ করে প্রমাণ দিয়ে গেলেন।
১৮৯২ সালে ফ্লোরিডায় অগাস্থা সেভেজ জন্মান। তার তখন নাম ছিল Augusta Christine Fells । তার বাবা মেথডিস্ট চার্চের এক গরীব যাজক। ধর্মপ্রাণ মানুষ। আর মা Cornelia Murphy। অভাবের সংসার। অগাস্থা শিশু বয়েস থেকেই মূর্তি বানাতো, মাটি দিয়ে। স্কুল কামাই করত, আর মাটি দিয়ে জন্তু জানোয়ার বানাত। তার বাবা তাকে সপ্তাহে ৫/৬ বার লাঠিপেটা করত। পেটাতে পেটাতে তার আর্ট তার মন থেকে বার করে দিত। অগাস্থার বাবা এডোয়ার্ড ভাবত, মূর্তি বানিয়ে বাইবেলের বিরোধিতা করছে আর পাপ করছে অগাস্থা। যাই হোক, কোন মার তাকে মুর্তি গড়া থেকে বিরত করতে পারেনি।
১৯০৭ সালে অগাস্থা ফেলস (Augusta Fells ) বিয়ে করেন John T. Moore কে। তার পরের বছর তার একমাত্র মেয়ে Irene Connie Mooreএর জন্ম হয় ও তার স্বামী এর কিছুদিন পর মারা যান। ১৯১৫ সালে তিনি জেমস সেভেজ (James Savage) কে বিয়ে করেন। অগাস্থা ফেলস, হয়ে যান অগাস্থা সেভেজ এবং তার ৫ বছর পর ১৯২০ তে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু অগাস্থা তার উপাধি সেভেজ সারা জীবন বয়ে যান।
১৯২৩ সালে সামার আর্ট প্রোগ্রাম বলে একটা প্রোগ্রাম ফরাসী সরকার স্পনসর করেছিল। অগাস্থা সব দিকে কোয়ালিফায়েড হয়েও তার গায়ের রঙ কালো বলে তাকে সেই প্রোগ্রাম থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হল। তারপর থেকেই তিনি আফ্রিকান আমেরিকানদের সমান অধিকারের জন্য লড়তে থাকেন। ১৯২৩ এ তিনি আবার বিয়ে করেন Robert Lincoln Poston, a protégé of Garvey
অগাস্থার জীবনে রোদ্দুর ছায়ার অনেক খেলা গেছে। জীবন সংগ্রাম যেমন গেছে তেমন তার সংগ্রামের ফসলও পেয়েছেন। প্রচুর সম্মান পেয়েছেন। ৪৮ বছরে, ১৯৪০ সালে তিনি অবসর নেন, বাকি ২২ বছর তিনি গ্রামের বিস্মৃতির মতন নীরব জীবন কাটান। ১৯৬২ সালে মারা যান।

Gamin প্লাস্টার কাস্টিং
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।