• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন আলবার্ট অশোক (পর্ব – ৪০)

জ্যাঁ-মিশেল বাস্কুইয়াটের Jean-Michel Basquiat ছবি

TyphoonEdit “জ্যাঁ-মিশেল বাস্কুইয়াটের Jean-Michel Basquiat ছবি”

এটা এই বছরের ৩য় সংখ্যা। জ্যাঁ-মিশেল বাস্কুইয়াটের Jean-Michel Basquiat ছবি নিয়ে কিছু আলোচনা

বছর খানেক আগে ফেসবুকে আমি একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, নিজেকে কি করে তুলে ধরবেন। বাংলার মানুষরা পড়েনা। আমার নির্বাচিত প্রায় ৫০০০ বন্ধুর লিস্টে থাকা মানুষের একটা বড় অংশ ছবি আঁকিয়ে, কিন্তু তাদের প্রোফাইল দেখি, তারা যে ছবি আঁকে, পড়াশুনা করে, বা এক্সপেরিমেন্ট করে মনে হয়না। যা পোস্ট করে, তা দেখে ভক্তি উঠে যায়। ফলে কখনো ভাবি কার জন্য এত সময় ব্যয় করি।
মাথায় রাখবেন, বস্তুর দাম সীমিত হয়। কারণ বস্তু রিপড়োডাক্সন বা অনেক উৎপাদন হয়। করা যায় দেখা দেখি। কিন্তু আপনার মস্তিষ্কের ভাবনা মৌলিক, এবং সেটি কোথাও কিছুর অনুপ্রেরণা বা ঘটনা থেকে আপনার ভাবনাকে প্রভাবিত করে। যেসব কাজ আগে হয়ে গেছে তা তো, আপনাকে ভাবতে হয়না, শিখতে হয়। কিন্তু নতুন ভাবনা জাগলে তাকে রূপ দিতে স্রষ্টাকে বেশ কিছুদিন অর্থবহ ও উপস্থাপনার উপযোগী বা প্রায়োগিক বিষয়ে ভাবতে হয়। যেমন বাস্কুইয়াটের ছবি, দেখতে তো অতি সহজ কিছু মনে হয়, কিন্তু তার আগেতো এরকমটি কেউ করেনি।

বাস্ক্যুইটের ছবির বিশাল আকার। সে দেওয়ালে  গ্রাফিত্তী informal graffiti আঁকত। আমেরিকার সোহোতে Annina Nosei Gallery তে তার প্রথম শো। এক তরুণী বধু , আটলান্টার, জর্জিয়া্, নাম ফে গোল্ড (Fay Gold) স্বামীর কাছ থেকে জন্মদিনের গয়নার টাকায় বাস্ক্যুইটের এই ছবিটা কিনেছিল।

ফে গোল্ড
ফে গোল্ড, এক তরুণির নাম। থাকেন, আটলান্টা , জর্জিয়াতে।১৯৮২ সালে তার জন্ম দিনে তার স্বামী ৫,০০০ ডলারের একটি চেক দিয়ে বলল, একটা হীরের হার (a diamond tennis bracelet) কিনে নাও , আমি নিউ ইয়র্কে সুন্দর সুন্দর কিছু দেখে এসেছি। যখন ফে গোল্ড ম্যান হাটানে যান সুন্দর হীরের হারের নতুন ডিজাইনের , দেখতে পান।
কিছু সুন্দর স্মৃতিধারক বস্তু কিনবেন, এমন ইচ্ছা নিয়ে ঘুরছেন, ঘুরতে ঘুরতে  সোহোর একটা প্রদর্শনীর গ্যালারীতে Annina Nosei Gallery চলে আসেন। সেখানে চলছিল মিশেল বাস্কুইটের Jean-Michel Basquiat  প্রথম একক প্রদর্শনী। এটা ফে গোল্ডের জীবনে এক সৌভাগ্য আনয়নকারী মুহুর্ত। ছবি দেখে তার ভাল লাগল। একটা বড় ছবির পাশে এসে তার গতি আটকে গেল। ছবিটার নাম Untitled (Pollo Frito), ৫ ফুট বাই দশ ফুট। মাঝখানে জোড়া। আমরা ছবির  ভাষায় যেটাকে বলি diptych  ডিপ্টিক। গোল্ড জানতেননা , এই ছবি ইতিহাস সৃষ্টি করবে। তিনি গ্যালারিকে ৫, ২০০ টাকার চেক দিয়ে ছবিটি নিয়ে বাড়ি চলে এলেন। গলার হার নিপাত গেল।
SoHo at the Annina Nosei Gallery,
২০ বছর পর সেই ছবির দাম উঠল $1 million ১০০,০০০ ডলার।  এই নভেম্বরে November, Sotheby’s  সোথবি এই ছবিটাকে  Untitled (Pollo Frito ২৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রী করবে।  নামটা পালটে সোথবী নাম করেছে ‘ভাজা মুরগী’ “Fried Chicken”আসলে (Pollo Frito) র মানে ভাজা মুরগী,   ভাবুন। একটা ছবি একজনের বরাত, ভাগ্য।
আমেরিকার লোকগুলির মতো সংস্কৃতিবান ও সচেতন ভারতের অন্যান্য রাজ্য কিছুটা হলেও হবে, বাংলা আগামীতে ৫০ বছরে হবে, আমি মনে করিনা। বাংলার মানুষ দিল্লী মুম্বাই ব্যাঙ্গালোরু যায় ছবি বিক্রি করতে। তবু কিছু অন্ধ লোক বলবে। বাংলা মহান ও সংস্কৃতিবান।  আপনি কী বলেন?একটা ইতিহাস বা ডকুমেন্ট হাতে থাকলে তার সাপোর্টে কথা বলা যায়। বাংলার কোন ডকুমেন্ট নেই। হাম বড়া আছে!
পাঠক, ছবি কিনুন। আমি যত টুকু জানি, সঠিক ছবির জন্য ব্যবসায়ীরা ঘুরছে। রাধা কৃষ্ণ মার্কা পটুয়ার ছবির জন্য নয়। যে ছবি কথা বলে। টাকা থাকলে টাকা ছবিতে লগ্নি করুন। শিল্পী বাঁচবে, আপনিও বাঁচবেন।
উপরের বাস্কুইয়াটের ছবির নাম বাংলা করলে , মুর্গী ভাজা! ‘Fried Chicken’ এর মানে নয়ত কি হতে পারে? এর মানে কি কোটি কোটি টাকা উপায়? না লটারি!
ছবিটা দেখুন। আজ আপনি নানা কচকচানি বা ইজম নিয়ে জ্ঞান দেবেন। কিন্তু সেদিন শিল্পী এক তরুণ, তার চোখে ছিল তার কাজের প্রতি ভালবাসা আর তার থিমের প্রতি বিশ্বাস। সে কিছু বলেছিল। এই ছবি আঁকার জন্য কিন্তু অ্যাকাডেমিক অ্যানাটমি শিখতে হয়না। নিজের ভাবনা ও ভাবনাকে চালাবার জন্য মকশ করা হাত।
আজ আমেরিকার বৃহৎ শিল্পী বাস্ক্যুইট। তার ছবি দুস্প্রাপ্য। কোটি কোটি টাকার খেলা চলে। এই ছবিটা সোথবি বিক্রী করেছিল $25 million। ভাবুন বাচ্চাদের মত লাগে আঁকাটা, কেন কোটি টাকা এর পেছনে!
Untitled (Boxing Ring), (56.2 x 76.5 cm), 1981, The Schorr Family Collection | © The Estate of Jean-Michel Basquiat / ADAGP, Paris / ARS, New York 2014 / Photo by Kent Pell
এই ছবিটা দেখে আপনার কি মনে হচ্ছে?
এটা কোন আর্ট হলো? আপনি লক্ষ্য করেছেন, আপনার নয় দশ বছরের বাচ্চাটি খাতায় কি আঁকে। কেমন আঁকে? অনেকটা বাচ্চাদের আঁকা এই ছবিটার মতো নয়কি? সব বাচ্চা আঁকেনা। অভিভাবকরা জোর করে শেখায়। কিন্তু কিছু বাচ্চা একেবারে ওস্তাদের মত তার অপটু হাতে পেন্সিল কলম দিয়ে আপনার ছবি, বা তার মনের আইডিয়া দ্রুত এঁকে ফেলবে। তার ডরভয় নেই। থাকেনা। বহু বাচ্চা ছবি আঁকাতে অনেক ভয় পায়, সিঁটিয়ে থাকে। কেননা তার মাথা কাজ করেনা। যেমন করেনা স্কুলে অনেক অনুন্নত শ্রেণির বাচ্চাদের। কারো ইংরেজি, কারুর অংক ইত্যাদি আবার কারুর স্কুলের নাম শুনলেই আতঙ্ক। মাথা কাজ করেনা। তার ভেতর থেকে একটা সহজাত প্রবৃত্তি গ্রহন করতে চাইছেনা। তার কাছে আসোয়াস্তি দিচ্ছে। এই সব কেসে বাবা-মায়েরা বাচ্চাকে মারধোর করেন। মারধোর করে বাচ্চার উন্নত হয়না।বাচ্চার ক্ষতি হয় উলটো শারিরীক ও মানসিক। আর বাবামায়ের রাগ বা হিংসা দমন হয় মাত্র। বাবা-মা বাচ্চার উপর দিয়ে নিজের রাগ, হিংসা দমন করছেন- এটা খুবই যন্ত্রণার। এসব ক্ষেত্রে বাচ্চাকে একটা লম্বা স্পেস দিতে হয়। বাচ্চার নিজের মানসিক স্ফুরণের সময় দিতে হয়। এই নয় যে বাচ্চার বুদ্ধি কম আছে। যে বাচ্চা পড়াশুনা না করে দুষ্টুমি করে সে অধিক বুদ্ধিমান, এটা প্রমান হয়। যেটা বাবামায়ের করনীয়, তা হলো বাচ্চাকে প্রশ্রয় দেওয়া, পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া এবং সে পরিবেশ যাতে একটা মূল্যবোধ তার মনে সৃষ্টি করে দিতে পারে। কিন্তু তাদের ছবি আঁকা শেখাতে হলে, খেলার ছলে নানা স্টেপ দেখিয়ে আঁকা শেখাতে  হয়। যাতে সে বুঝতে পারে এটা কোন শক্ত ব্যাপার নয়। ভালবাসলে তাকে সবাই আদর করবে।
সাধারণতঃ দেখা যায় ১৮ বছর না গেলে ওই বাচ্চা, ছবি ভবিষ্যতে আঁকবে কিনা বলা যায়না। দেখা যায় যে বাচ্চা ছবি আঁকতেই চাইতনা সে ছবি আঁকাতে মন বসিয়ে দিয়েছে। আর যে ভাল ছবি আঁকত সে আর আঁকাতে দম পাচ্ছেনা। আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যেখানে চ্যালেঞ্জ নেই, সঙ্কট নেই সেখানে অনেক কিছু কাজ করেনা। মানুষ চ্যালেঞ্জ করতে ভালবাসে বা অনায়াসে পেয়ে নষ্ট করতে ভালবাসে। এই দুরকম মনোবৃত্তি মানুষের। যে বাচ্চা ফুটবল ক্রিকেট খেলার আগেই দামী দামী ফুটবল আর ক্রিকেট ব্যাট পেয়ে যায়, সে বাচ্চা ফুটবল ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। হয়ত সে ফুটবল ক্রিকেট বুঝবে কিন্তু তাকে ফুটবলার হতে হবে বা ক্রিকেটার হতে হবে, এরকম ধারণা তার মনে আর জাগেনা। যে মুহুর্তে তার মনে হবে, এটা চ্যালেঞ্জের জিনিস, করে দেখালে বাহবা মিলবে,  সম্মান খাতির মিলবে সে মুহুর্তে শুরু হয় তার লড়াই। ছবি আঁকার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।। বাচ্চার সামনে সঙ্কট ও উচ্চাশা না থাকলে, বা উচ্চাশা ও সঙ্কট না তাকে ছুঁলে সে সেইভাবে বড় হয়ে উঠেনা। অভাববোধ, বা প্রয়োজনের তাগিদ মানুষকে যথাস্থানে টেনে নিয়ে যায়।
এই ছবিটার দাম কোটি টাকা।আপনার বাচ্চার ছবির মত। খুব গুনগত মানের পার্থক্য কিছু নেই। যিনি এঁকেছেন ছবিটা, তিনি হাইফাই তেমন কিছু ভেবে আঁকেননি। বা আপনিও ছবিটাতে হাইফাই ভাবনা কিছু পাবেননা। তিনি ঐ বাচ্চা ওস্তাদ ছেলেটির মত নিজের আইডিয়াকে রুপ দেন, তার অপটু হাতে। ছবিটার কোটি টাকা দাম কারণ যিনি এঁকেছেন তিনি একজন বিখ্যাত লোক। আমেরিকার শিল্পের ইতিহাসে এক শিল্প আন্দোলনের স্রষ্টা। ছবিটা তার একটা সিগনেচার প্যাটার্ণ এর তাই এর দাম কোটি টাকা।
গ্রামের পটুয়ারা ও অশিক্ষিত, ও অপটু হাতে ছবি আঁকে। তারা কিন্তু আপনার বাচ্চার মত মন থেকে কোন আইডিইয়াকে এঁকে দেখাতে পারেনা। তারা ট্রাডিশনালি যে প্যাটার্ণে ছবির ইতিউতি হয়, মানে বিষয় ঠাকুরের বা কোন বাজারে বিকোতে পারে, পণ্য, ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে, যা বাজারে চাহিদা করেছে তেমন ছবির একটি ছাঁচ বানিয়ে ছবি আঁকে। টিপিক্যাল তাদের ড্রয়িং হয়।তাদের উৎপাদন খরচ বহুল নয়। যৎসামান্য। হয়ত দু কিলো চালের দাম বা একটা গামছার দাম।তারা মেলায় বসে, দুটো তিনটে ছবি নিয়ে। বিক্রী করে খুশী মনে বাজার করে বাড়ি ফিরে। আর যারা মন থেকে সরাসরি ছবি আঁকে, তারাই সৃজনশীল শিল্পী। এবার সৃজনশীল ছবি, বা একদম নতুন ভাবনার কিছু করলেই সেটা মূল্যবান হয়ে যায়না।
ছবির মূল্য নির্ধারণ হয় অনেক পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ীঃ ১। কে এঁকেছেন, তিনি কি বিখ্যাত অন্য কোন পেশায়। বা তিনি কি দীর্ঘদিন ধরে ছবি আঁকছেন। ২। ছবিটার বা ভাস্কর্যটুকুর, যে উপাদান দিয়ে বানানো, তা কি দামী বস্তু,(যেমন ধরুন সোনা কিংবা ব্রোঞ্জ দিয়ে বানানো)  ৩। শিল্পবস্তুটি কি দুস্প্রাপ্য, সংগ্রহ করলে ভবিষ্যতে লাভের আশা আছে ৪। এর কি কোন ঐতিহাসিক মূল্য আছে। ৫।এটা কি কোন বিখ্যাত লোকের স্মৃতিচারণার (বিখ্যাত লোকের নাম জড়ানো) ৬।এর কারিগরি দক্ষতা কি অমূল্য নিদর্শন কিছু ৭।হাজার শিল্পের মধ্যে এটা একটা নতুন ব্যতিক্রমী শিল্প ৮।সমসাময়িক শিল্পের একমাত্র বিশেষ নমূনা ৯।বিতর্কিত ছবি ১০। নতুন শিল্পীর নতুন ভাবনার, আঙ্গিকের নতুন দিশা জাগানো।। ইত্যাদি নির্ভর করে একটা শিল্পবস্তুর আকাশছোঁয়া দামের পিছনে।
সাধারণতঃ কোন শিল্পীর নতুন ভাবনা, বিতর্কিত ভাবনা যা দর্শকদের মনে নানা প্রতিক্রিয়া জাগাতে সক্ষম তেমন কিছু ও গতানুগতিক প্রথাভঙ্গকারী আঙ্গিকই সার্থক শিল্প আর বহু পুরাণো কোন শিল্পীর সেরা সৃষ্টিটি বহু হাত ঘুরে নীলামে উঠে। এই দুই ধরণের শিল্প চড়া দামে বিক্রী হয় কারণ এগুলি কালেক্টরস আইটেম বা সংগ্রাহকের যোগ্য শিল্পদ্রব্য হিসাবে আদরনীয় হয়।
আমাদের বাংলার শিল্পীরা তেমন কোন উচ্চমার্গের নয়। শিল্প সংক্রান্ত খবরাখবর তারা নেয়না। একই প্রথায়, একটা গন্ডীর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। শিল্পীদের দোষ নয় শুধু, এখানকার দর্শকও শিল্প বুঝেনা।
এখানে যা বুঝে তা হলঃ
১।কেউ কারুর মুখ বা পোর্ট্রেট করতে পারলেই লোকে বাহবা দেয়। শিল্পীরাও এইটুকু এসে ভাবে, তারা বিশাল শিল্পী হয়ে গেছে।
২। কেউ শুধু ল্যান্ডস্ক্যাপ বা দৃশ্যচিত্র জলরঙে এঁকে যায়। ভাবে এটাই আর্ট। তারা ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোমাপানীর আমল থেকে যে প্যাটার্ণ জলরঙ্গের শুরু হয়েছিল ব্রিটিশদের হাত ধরে সেই প্যাটার্ণ ধরে আজও চলছে।
৩।কেউ মাস্টার শিল্পীদের কপি করে, ভাবে সেও বড় শিল্পী, মাস্টার শিল্পীদের মতো আঙ্গিক – তারা ভাবে বাজারে বিকোবে। তারা শুধু ছবি বিক্রী করে টাকা কামাতে চায়। ছবি নিয়ে অনুসন্ধান তাদের বিন্দুমাত্র নেই। একটা দেখানো পথে তারা নিরাপত্তা ভেবে আঁকে।
৪।কেউ পড়াশুনা করে শিল্প সম্পর্কে কিছু জ্ঞান লাভ করেছে, তারা পশ্চিমের শতবর্ষের পুরানো শিল্পের ঢংযে ছবি আঁকে, ভাবে আর্ট। এরকম বিভিন্নজনের বিভিন্ন প্যাটার্ণে কাজ করলেও তারা সময়ের দাবি রেখে , এই ইন্টারনেট যুগে কনটেম্পোরারি আর্টে আসতে পারছেনা।
তাদের অনেকের চোখ আর মনন তৈরি হয়নি। ছবি ও ভাস্কর্যের সুন্দর নির্মানের পিছনে শিল্পীর চোখ ও মনন শেষ কাজ টুকু করে। নির্মানটি একটা সৌন্দর্যের প্রতীক হল কিনা। বা এটা কোন অর্থবহুল কাজ হল কিনা। বা নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত, যে একজন ক্রেতা এটা কি কারণে এত টাকা দিয়ে সংগ্রহ করবে? টাকা তো গাছে ফলেনা। অর্জন করতে হয়।
ছবি কেনার রীতি অনেক পুরাণো। একটা শিল্প বস্তু মানুষ মেলা থেকে, তীর্থ থেকে, উৎসব থেকে কিনে নিয়ে যায় ঘরে শোভা বাড়াতে। কোন স্মৃতিকে মনে ধরে রাখতে। যেমন কালীঘাটের মন্দিরের কাছেই কালীঘাটের পট-শিল্প বিক্রী হত। ডোকরা শিল্পও বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর ইত্যাদি অঞ্চলে নানা মেলায় মানুষ ঘর সাজানোর আইটেম হিসাবে, বেড়ানোর স্মৃতি হিসাবে, বা সুন্দর ঠাকুরের মুর্তি হিসাবে কিনত। যেমন নাড়ুগোপাল, দূর্গার অসুর বধ, মনসার ঝাড়, কালী মুর্তি ইত্যাদি। এই সব শিল্পের বিষয় বস্তু কিন্তু বুদ্ধি-উদ্দীপক নয়। ভাবনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবার নয়, সামাজিক সমস্যা আকরিত নয়। স্রেফ, গেঁয়ো শিল্পীদের সুন্দর মনের প্রকাশ, মনকে ভাল রাখার প্রকাশ আর তার পরিশ্রমের বিনিময়ে দু-পয়সা আয় করা। মানুষ যেহেতু অশিক্ষিত (হতে পারে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার ডিগ্রী করেছে, কিন্তু তার ১৮ /২০ বছরে পড়া তাকে মানসিক চেতনা বা বা বিকাশ দেয়নি, সে তার বাড়ির অশিক্ষিত ও অনুন্নত শ্রেণিতেই রয়ে গেছে। তার পড়া শুধু তার চাকরির যন্ত্র) সে একটা ছবি কিনবে। ঠাকুরের ছবি বা চলতি ট্রেন্ডে যে ছবি বা ভাস্কর্য চলছে তার মতো একটি বেছে নেবে। সে বেশী দাম দিয়ে কিনবেনা, সে অন্য নতুন প্যাটার্ণের কাজ সুন্দর হলেও নেবেনা। সে সামাজিক ট্যাবু বা চলতি প্রথা ভেংগে সমালোচিত হতে পারবেনা। শিল্পীরাও সেই জন্য চলতি প্রবণতা বা ঠাকুরের ছবি বা যাতে তার বিশ্বাস ঘটে যে বস্তুটি বিক্রী করতে পারবে, সে নিশ্চিত, তেমন শিল্পকর্মই করবে।তার বাড়িতে শিল্প কর্মের গোদাম বা ভান্ডার করবেনা। করার সামর্থও নেই। সাহস করে প্রথা ভাঙ্গবেনা।
মানুষ ক্যালেন্ডার কেনে। ক্যালেন্ডারে তারিখ থাকে। পঞ্জিকার চেয়ে কম দাম। মোটামুটি উৎসবের দিনক্ষণ লেখা থাকে, তিথি নক্ষত্র দেওয়া থাকে। আর ক্যালেন্ডারে সুন্দর ঠাকুরের ছবি, কোন দেশবিদেশের দৃশ্যচিত্রের ছবি বা আলোক চিত্র থাকে। লোকে কেনে , দেওয়াল ভরার দরকার হয়। শোভা বাড়ার দরকার হয়।এই সমস্ত কিছুতেই দেখা যায়, মানুষ শিল্পবস্তুকে পণ্য হিসাবে পরিণত করে বাজারে আনে। দৈবাৎ কেউ কিনবে এটা ভেবে করেনা। যেকোন বিষয়ের নির্মানে পরিশ্রম ছাড়াও অর্থ ব্যয় আছে। অর্থব্যয় থাকলে তার লাভ সমেত অর্থের ফেরত আসা উচিত সবাই ভাবে। সুতরাং মানুষ বোকার মত অর্থব্যয় করবে আশা করা যায়না। এই যে ভাবনা তার মধ্যেই শিল্প হলে হল না হলে কিছু করার নেই। ফলে যে লোকটা এই সব চলতি প্রথা ভেঙ্গে সাহস দেখাবে তার কিছু ভয় ও ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়। শিল্পীদের এই সাহস থাকা জরুরী।
আপনি একটা ক্যালেন্ডারের মত ছবি আঁকলেন, কি আপনি একটা অবিকল আলোকচিত্রের মতো পোর্ট্রেট আঁকতে পারেন, বা ব্যবসায়িক , ফরমায়েশী কাজ তুখোর করতে পারেন। পারেন যে কোন মাধ্যমে কিছু নির্মান করে বন্ধুদের তাক লাগাতে। আপনাকে শিল্পী বলব? আপনার মতন তো হাজার হাজার, লাখো লোক এরকম কাজ করতে পারে । সবাই শিল্পী? তাহলে যারা লাখো লোকের মেধা ছাপিয়ে একটা নতুন দিশা দেখায় তাকে কি করে আলাদাভাবে সম্মান দেখাবো? বা এই লাখো লোক শিল্পীদের ইতিহাসে নাম উঠবে? সময় সবাই কে মনে রাখবে?
আমরা বুঝিনা পটুয়া আর শিল্পীদের মধ্যেকার ফারাক।পটুয়ারা পটে কিছু বানায় ও তাদের লক্ষ্য থাকে বিক্রী। তারা সমাজ রাস্ট্র, সময় ইত্যাদি নিয়ে কখনো ভাবেনা। ভাবেনা শিল্পকে আরো অধিক স্বাধীনতা কি করে দেওয়া যায়, আরো অধিক ভাবে শিল্পকে উঁচু আসনে তোলা যায়, আরো অধিকভাবে লোকেরা কাছে পৌছানো যায়, আরো অধিক ভাবে এটাকে কি করে মানুষের ভাষা বানানো যায়। আজকে যে অক্ষর লিপি, তা তো যারা আঁকা-আঁকি করেন তাদের রেখা থেকেই জন্ম।। একটা আইডিয়াকে রেখাতে ধরা, মানুষে ভাবনাকে রেখার মাধ্যমে প্রচার করা- এতো যুগান্তকারী বিষয়। এরকম ভাবে পটুয়ারা করেনা। শিল্পীরা করে। মানুষ করে। যে মানুষ এভাবে ভাবে ও রেখার মাধ্যমে, নিজের অভিব্যক্তির মাধ্যমে মেধার প্রকাশ ঘটায় তাদের শিল্পী বলে। তারা তাদের কাজ বিপনন হবে, বিক্রী হবে, এটা ভেবে করেনা। ফলে তাদের কাজ কখনো মূল্য পায় বা কখনো মূল্য পায়না। কিন্তু তারা নতুন কিছু করে, সৃজন কিছু করে। এবং ইচ্ছাকৃত, মনের তাগিদ থেকে করে।
এই যে আমি দুটি সম্প্রদায়ের কথা বললাম, পটুয়া আর শিল্পী, আপনি কোনটা, ভেবে দেখেছেন? সবকিছু আপনি গুলিয়ে ফেললে, মিশিয়ে দেখলে ঠিক হবেনা।
চলুন, আর্ট বা শিল্প এর শুরুর দিকে যাই। এই শব্দের উৎপত্তির দিকে যাই। A R T  এই তিনটে অক্ষরের শুরুতে কি ছিল। এই তিনটে অক্ষরের পিছনে সারা পৃথিবী নাচানাচি করছে, শিল্প শব্দটা আমরা আমাদের ভাষায় ইংরেজির পিছন ধরে এসেছে। আর ইংলিশ শব্দ এসেছে লাতিন শব্দের পিছন ধরে। রোমানরা একটা শব্দ ব্যবহার করত লাতিন Latin থেকে ars, এ আর এস। কারুর কোন নির্মাণের দক্ষতা বা ইচ্ছাকৃত নির্মাণ। তারা জুপিটার ঠাকুরের মুর্তী নির্মাণ থেকে ওয়াগনের চাকা বানানো অব্দি সকল কাজ কে আরস বলত।শব্দটা পুরাণো ফরাসী ভাষার ধাক্কা খেয়ে মধ্যযুগে ইংরেজিতে এ আর টি অক্ষরে জমাট বেঁধেছিল। মানে আর্ট art হয়ে দাড়িয়েছে। মানে ইচ্ছাকৃত বা কৃত্রিম করে বানানো।
শব্দটা সপ্তম শতাব্দীরও আগে থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। কল্পনার মাধ্যমে কারুর কোন দক্ষতার নির্মাণ। ষোড়শ শতাব্দীতে ইংলিশ কথা বার্তায় এর প্রকাশ ঘটে। আর গত কয়েকশত বছরে এর বিকাশ বিস্তর। এর ডালপালা বিস্তর বেরুচ্ছে। তবু মূল পেইন্টিং, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, আলোকচিত্র,  স্থাপত্য, গানবাজনা, ফিল্ম, নাচ, সাহিত্য, নাটক ইত্যাদি অনেক কিছু।
যার গুরুত্ব আছে, সুন্দর কিছু ও অর্থবহ, কল্পনা ও দক্ষতা দিয়ে বানানো হয়েছে।তাকেই আমরা আর্ট বলি।
পটুয়ারা যা করে তা কিন্তু আপনি সুন্দর বললেও গুরুত্বপূর্ণ বা অর্থবহ, এক্সক্লুসিভ বানায়না। বানানোর মত তারা সচেতনও নয়।তাদের মধ্যে সিংহভাগ দেশ কাল পাত্র পাত্রী ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন নয়। তারা একট কিংবা দূটো আইটেম যা বিকোবে পণ্য হিসাবে তাতেই আগ্রহী। এর বাইরের জগৎ সম্পর্কে কোন চেতনা কাজ করেনা।সৃজনশীল ও কোন ক্ষতি স্বীকার করে তারা এগোয় না।তাদের সেই অর্থে আপনি কি করে শিল্পী নামে অভিহিত করেন?
একসময় ধরা হত কোন বীরত্ব বা ধর্মীয় কাজের দক্ষ প্রকাশ মানেই শিল্প সাহিত্য। যুগে যুগে এই ভাবনাটির ক্ষয় হয়েছে। একই বিষয় ছবিতে, ভাস্কর্যে, সাহিত্যে ক্লান্তি এনে দিয়েছে। মানুষ চেয়েছে স্বাধীনতা। আজ সে স্বাধীনতা শিল্পীরা পেয়েছে। তারা বিনিময়ে কোন লাভ হবে, এই তোয়াক্কা না করেই তাদের মনের কল্পনা, ভাবনাকে দিয়ে দক্ষতার সাথে প্রকাশ করে। অধিকাংশ সময় দেখা যায় তারা সার্থক।তারা পুরস্কৃত। যে পুরস্কার পটুয়ারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা।
দশম শতাব্দীতে ফরাসী ও ইউরোপের লোকেরা শিল্পের জন্য অভ্যেস ও পড়াশুনার মাধ্যমে দক্ষতাকে বলত শিল্প। এর অর্থ আপনি কোন গুরু বা শিক্ষকের অধীনে অভ্যেস করুন, পাঠ নিন। ১৮২৪ সালে শিল্প ভাবনা ও অনেকটাই বিজ্ঞান ও শৃঙ্খলাতে চলে এল। বলা হল, ‘শিল্প শিল্পের জন্য’। একে নিয়ে ভাবতে হবে, এর প্রকাশ আরো উচ্চমানের করতে হবে। Expression art for art’s sake (1824) translates French l’art pour l’art.  ১৮৪৭ সাল নাগাদ শিল্প নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়ে গেল।১৮৮৮ নাগাদ শিল্পের সাথে কারিগরি বা ক্রাফট যোগ হল “decorative design and handcraft” ।শিল্প কর্মের সোসাইটি তৈরি হল লন্ডনে।১৮৯০ নাগাদ বলা হল জনপ্রিয় ও লোকশিল্প বর্জন করে নতুন শিল্পকে উন্নত করতে হবে।
এরকমভাবে শিল্পের ইতিহাস ও সাহিত্যের ইতিহাস প্রায় একই রীতিতে সময়ের প্রবাহ বেয়ে এসেছে। ভবিষ্যতের অজানা গন্থব্যের দিকে বয়ে যাচ্ছে।
যারা পটুয়া, যাদের ছবি, ভাস্কর্য বেচেই জীবিকা তাদের কাছে আর্ট কোন বিজ্ঞান বা দর্শনের বস্তু নয়। টাকা আর পণ্য উৎপাদনের সম্পর্ক,  যা সহজ লভ্য ও সাপ্লাই অঢেল থাকে। তার মূল্য অনেক সস্তা। আপনি এরকম শিল্প করলে আপনার শিল্পবস্তুর মূল্য আপনার মত লাখো শিল্পীর গড় মূল্যে বা সস্তায় আপনাকে বিকোতে হবে। আপনি একচেটিয়া বাজার বা স্বতন্ত্র মূল্যের চাহিদা সৃষ্টি করতে পারবেননা। আপনার ছবি সাধারন লোকে কিনবে কিন্তু সংগ্রাহকের দ্রব্য বলে বা সংগ্রহের যোগ্য বলে সম্মান পাবেননা।আপনার ছবি কোনদিন নীলামে উঠবেনা, বা যাদুগর যাবেনা।
Jean-Michel Basquiat
১৯৮২ সালে,জ্যাঁ-মিশেল বাস্কুইয়াটের (Jean-Michel Basquiat SoHo at the Annina Nosei Gallery, 22 December 1960, Brooklyn, New York City, New York, United States Died: 12 August 1988)  বয়েস, ২২ বছর। ১৯৬০ সালে জন্ম। বেশীদিন বাঁচেননি। ১৯৮৮ সালে মারা যান। তার উত্থান অত্যন্ত নীচ জমি থেকে। জীবিত অবস্থায়। ছবি আঁকার সময় পান খুবই কম। ৮২ সালে যদি তার প্রথম ছবির প্রদর্শনী হয়ে থাকে, সে সময় পেয়েছিল মাত্র ছয় বছর। এই ছয় বছরে তিনি আমেরিকার মতন একটি দেশের আইকনে পরিণত। তার ছবি, ও ছবির বিষয় পরিকল্পনা, ও দর্শন- দুরদৃষ্টি শিল্প প্রেমিকদের নজর টেনেছিল।

এই উপরের ছবিটার শিল্পী Jean-Michel Basquiat জাঁ মিচেল বাস্কি্যেট বা বাস্কিয়া। আমেরিকার। তার জন্ম হয় ব্রুকলীনে ১৯৬০ সালে  in Brooklyn in 1960। বাবা ও মা দুজন দুই জাতির ও রাজ্যের  to a Haitian father and mother of Puerto Rican descent.  আজটেক কালচারের।   ১৯৮০ সাল নাগাদ ম্যানহাটানের রাস্তায় পাংক কালচারের গ্রাফিতি আর্টিস্ট  হিসাবে  বাস্কিয়ার আত্মপ্রকাশ। পরে আর্ট গ্যালারীতে স্থান পান।
গ্রাফিত্তি বা গ্রাফিতি। কোনো কিছুর উপরে, সাধারণতঃ দেওয়ালে, চলিত সমাজকে ব্যঙ্গ করে, বা কোন ঘটনাকে দুচার কথায় লেখা,লিপিবদ্ধ বা কোন শ্লোগান বা কোন চিত্র, কবিতা ইত্যাদি খোদাই বা রেখার মাধ্যমে প্রকাশ করাকে বলে। এই কাজ সাধারনত যার দেওয়ালে করা হয় তার কোন অনুমতি নেওয়া হয়না(ফলে এটা কোথাও অপরাধ ধরা হয়।) কিন্তু পাব্লিক বা সাধারণের নজরে পড়বে বলেই স্থানটি বেছে নেওয়া হয়। বা দৃষ্টি আকর্ষন করতে মোটা দাগের বা আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়াতে উপযুক্ত করে নেওয়া হয়। কখনো শুধু লেখার মাধ্যমে কখনো দেওয়ালে রঙ দিয়ে করা হয়।  এই গ্রাফিতি প্রাচীনকাল থেকেই, মিশর, রোম প্রভৃতি শহরে দেখা গেছে।
বর্তমানে স্প্রে পেইন্ট ও মার্কার পেন ব্যবহৃত হয়। মূল শব্দটার উৎপত্তি ইতালীয় শব্দ the Italian word graffiato (“scratched”)
গ্রাফিতি হল প্রতিরোধ গড়ে তোলার একধরণের অভিব্যক্তি এবং ক্ষমতার বিরুদ্ধে সত্যি কথা বলে শৈল্পিক স্বাধীনতার প্রকাশ। আর এটাকেই বলে হিপহপ সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির একটি অংশ জাঁ-মিশেল বাস্কিয়েট। ১৯৮০ সাল নাগাদ স্যামো নামে একটা আর্ট মুভমেন্ট নিয়ে এসেছিলেন আমেরিকান কালচারে, সাথে ছিল আরেকজন শিল্পী নাম Al Diaz অল দিয়াজ, তার বন্ধু।  সারা ব্যবসায়িক ম্যানহাটান শহরের downtown Manhattan বাড়িগুলিতে তাদের গ্রাফিতি এঁকে সবার চোখে বা নজরে পড়ার জন্য দেওয়াল তাদের ট্যাগ SAMO© লিখেদিতেন । বাস্কিয়েটের আদর্শ শিল্পী ছিলেন অ্যান্ডি ওয়ারহল। ওয়ারহল পরবর্তি সময়ে বাস্কিয়েটকে প্রমোট করতে সাহায্য করেন ও তার প্রদর্শনী স্পনসর করেন। তার ছবি শুধু হিপহপ কালচার বা শহরের দেওয়ালে সীমাবদ্ধ থাকেনি, ছড়িয়ে পড়েছিল, আমেরিকার সকল ধরণের সংস্কৃতিতে। পোশাকে পরিচ্ছদে, গানে, নাটকে, সাহিত্যে, জাদুগরে বড়বড় শিল্পপতিদের উৎপাদনের ব্র্যান্ডে যেমন  incorporated into clothing brands like Uniqlo, Reebok, Billabong, Stance and Sean John।
গত বছর তার একটা ছবি “Untitled” বিক্রী হয়েছিল একটা রেকর্ড দামে $110.5 million, যা কোন আমেরিকার শিল্পী বা আফ্রিকা-আমেরিকায় জন্ম কোন শিল্পীর হয়নি। ভাবুন আপনার লোভ লাগছে কিনা।
বাস্কিয়াকে কিন্ত আশীর দশকের কোন বিস্ময়কর ঘটনা বা বিষয় ভাবা হয়না,  রীতিমত পাবলো পিকাশো [Pablo] Picasso or an [Andy] Warhol ওয়ারহলের মত শক্তিশালী শিল্পী হিসাবে ধরা হয়।
বাস্কিয়েট ও অল দিয়াজ তাদের গ্রাফিতি যখন কোন দেওয়ালে করত তার নীচে  একটা সিম্বল  বসিয়ে দিত “SAMO©”, বলে, যার উচ্চারণ ইংরেজি Same-Oh র মতো। ওরা আর্ট ও ডিজাইনের উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করত। ৮০ তে বাস্কিয়েটের বয়েস মাত্র ২০।
তারা ট্রেনে , বাসে , সাবওয়েতে  ও  ছোট পূস্তিকাতে তাদের গ্রাফিতির প্রকাশ শুরু করেছিল। বাস্কিয়েটের গ্রাফিতির মধ্যে ছিল ঘৃণা ও নীরস টোন।
সোহো SoHo হল ম্যানহাটানের একটি গন্থব্য স্থল যেখানে আর্ট গ্যালারি থেকে বুটিক ইত্যাদি কেনাকাটা করা যায়, সেখানকার এক খবরওয়ালা The SoHo News তারা নজর করল  শহরের দেওয়ালের গ্রাফিতি গুলি, ও খোঁজ নিল কারা এসব করছে। তারা কিছু গ্রাফিতি প্রকাশ করল। তখন সেখানে গ্রাফিতির নীচে কারুর নাম থাকতোনা। হয়তো কোন সঙ্গত কারণেই।
বাস্কিয়া আর অল দিয়াজেরা নানা নেশা করত। কড়া নেশা। মারিজুয়ানাকে বলত, দ্য সেইম ওল্ডশিট “the same old shit,”  সেখানথেকে শুধু “the same old ,”  ও  পরে শুধুই SAMO© বলত । আর এইভাবেই  SAMO  আন্দোলনের জন্ম। সোহো র খবরওয়ালারা দেখল একই idiomatic phrases অনেক জায়গায়, এবং শেষে আবিষ্কার করল  was a drug that could solve all problems. SOHO, the art world, and Yuppies were satirized with Olympian wit.।
তাদের গ্রাফিতির লেখাগুলির  শব্দবন্ধ থাকত.১। SAMO© SAVES IDIOTS AND GONZOIDS… ২। SAMO©…4 MASS MEDIA MINDWASH , ৩।SAMO©…4 THE SO-CALLED AVANT-GARDE,  ৪।SAMO as an alternative 2 playing art with the ‘radical chic’ sect on Daddy’s$funds এছাড়া অনেক কবিতাও থাকত।
এই ধরণের গ্রাফিতি, পিছনে সমাজের অনেককে ব্যংগ করে, রীতিকে ব্যংগ করে এক দিনে গোটা ৩০ বিল্ডিংযে অল দিয়াজ ও বাস্কিয়া গ্রাফিতি বানিয়ে যেত, আর লোকে অদ্ভুত সব কথা বার্তা পড়ে তাদের নজরে নিয়ে গেছিল এই সবের সৃষ্টি কর্তা কে।
বাস্কিয়ার গ্রাফিতি অনেক শিল্পীর জন্ম দিয়েছিল যেমন Keith Haring , তিনি বাস্কিয়ার গ্রাফিতি দেখে খোঁজ করেন। ১৯৭৯ সালে তার সাথে দেখা করেন।
প্রথম দিকে কেউ গ্রাফিতিতে নাম ব্যবহার করতনা, অল দিয়াজ সেটাই চাইত। বাস্কিয়া কিন্তু মুখে বলত এই গ্রাফিতির কোন ভবিষ্যত নেই কিন্তু খুব প্রচার চাইত। কালক্রমে জাঁ মিশেল বাস্কিয়া  গ্রাফিতি থেকে গ্যালারীতে ছবি প্রদর্শনীর সুযোগ পেল। বহু ভিস্যুয়াল আর্টিস্টের সাথে আর্ট কলেজে পড়াশুনার সময় বা বাইরে গ্রাফিতির আড্ডায় নানা শিল্পীদের সাথে পরিচিত হন। সবাই তার প্রশংসা করত। একটা সময় এল যখন তার গ্রাফিতিতে কবিতার মত লাইন এল ও স্যামো SAMO ট্যাগটি উঠে গেল।
তার ছবিতে শিশুদের মতো হিজিবিজি দাগ কেটে একটা পেইন্টিং এর আদল সৃষ্টি করেন ও এটাই তার সিগনেচার পেইন্টিং। তিনি ছিলেন একজন কবি সহ অনেক শিল্পকর্মের মেধাবান পুরুষ।
A poet, musician, and graffiti prodigy in late-1970s New York, Jean-Michel Basquiat had honed his signature painting style of obsessive scribbling, elusive symbols and diagrams, and mask-and-skull imagery by the time he was 20.
আমেরিকার ম্যানহাটানের ব্যবসায়িক অঞ্চলে তার ঘরে অতিরিক্ত নেশার জেরে of a heroin overdose at his downtown Manhattan apartment on Aug. 12, 1988, at the age of 27।  তার মৃত্যু হয় ১৯৮৮ র ১২ই আগষ্ট।তার বয়েস তখন মাত্র ২৭ বছর। শেষ করছি এই বলে, মানুষের উন্নত মেধা না থাকলে, শিক্ষা সচেতনতা না থাকলে, শিল্প-সংস্কৃতি না বুঝলে, শুধু লোক দেখিয়ে, সারাজীবন পটুয়া থেকে যাবেন। আপনি কোনদিন শিল্প সৃষ্টি করতে পারবেননা। ছবি আঁকতে গেলে অ্যানাটমির জ্ঞান লাগে, কিন্তু অ্যানাটমি ছাড়াও ছবি আঁকা যায়। আপনারা মার্ক শ্যগালের ছবিগুলি, জোয়ান মিরো বা পল ক্লীর ছবি, বা অন্যান্য বহু শিল্পীর ছবিতে অ্যানাটমি দেখতে পাবেননা। আপনাকে এক দীর্ঘ সময় কোন সঠিক শিল্পীর অধীনে কাজ করে বড় হতে হবে। যে বরিষ্ঠ শিল্পীরা কনটেম্পোরারি ছবির সম্পর্কে অজ্ঞ তেমন শিক্ষকের অধীনে থাকলে পটুয়া হবেন নিশ্চিত কিন্তু শিল্পী হতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে
An Untitled painting by Jean-Michel Basquiat sold to Yusaku Maezawa for $110.5 million Jean-Michel Basquiat Was a Conceptual Artist, Not an Expressionist

শিল্প সংস্কৃতির জগতে যৌনতা ও ড্রাগ একটা আবশ্যিক প্রয়োজনীয়তা থাকে। ইতিহাস অন্তত তাই বলে। বিজ্ঞান হয়ত অস্বীকার করবে। বাস্কুইয়াটের জীবনে মহিলার প্রেম ও ড্রাগ অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছিল, সতেজ রেখেছিল তার ছোট জীবন ২৮ বছর। দরকার উঁচু মহলের সাথে যোগাযোগ । এখানে গায়িকা ম্যাডোনার সাথে বাস্কুইয়াটের ছবি
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।