কবিতায় ছন্দা চট্টোপাধ্যায়

স্বাধীনতা!

সত্তরের বৃদ্ধার নিদ্রাহীন রাতের অবসান আশেপাশের কচি কন্ঠে…
‘আজ আমাদের ছাদিনতা দিবছ; চল‌্‌রে গুল্টি, দাদু পকাতা তুলবে!’
‘পকাতা নয় রে পাকু, পতাকা বল্’
পাঁচ বছুরে গুল্টি করে সংশোধন…
পতাকা উচ্চারণ!

স্বাধীন দেশেই জন্ম বুড়িমার
তবু স্বাধীনতায় ছিলো না অধিকার!
সবচেয়ে বড়ো বেদনার মতো বেজেছিল…
সেই বিদ্রোহী প্রেমিক, যে বিপ্লবকে তাঁর চেয়েও বেশী ভালবেসেছিল…
বুঝলো না অবহেলিত মেয়েটার ভালোবাসা ছিলো বড়ো দরকার!

স্বাধীনতা সংগ্রামী বাবার হাতে তাম্রপত্র তুলে দিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী…
ওদিকে স্বাধীনতা পেলো ‘বাংলাদেশ!’
ভারতের‌ই বদান্যতায়!
শুধু স্বাধীনতা ছুঁয়ে যায়নি ভারতীয় নারীকে এক লেশ।

বেলা আটটা, বৃদ্ধ কাঁপা হাতে করেন পতাকা উত্তোলন…
গাঁদার পাঁপড়ি ছড়িয়ে পড়ে গায়ে মাথায়…
উদাত্ত কন্ঠেরা ‘জন গণ মন’ গায়…
তারপরেই সিঙারা, জিলিপি হাতে হাতে!

মাইকে বাজছে ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্তাঁ হামারা হামারা’
‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে কতো প্রাণ হলো বলিদান’
উৎকর্ণ বৃদ্ধা পেতে দ্যান কান।
বেলা বাড়ে,বাড়ে শব্দের ডেসিবেল,
দেশপ্রেম উৎকট উল্লাসে করে যায় ফেল।
মদ ও মাংসের চলে ম্যাহফেল…
নেতানেত্রীর বিশাল কাট‌আউটের পদতলে,
ক্ষুদ্র ফটো স্বাধীনতাসংগ্রামী থাকেন হেলে…
কানে ভেসে আসে সেই উদাত্ত স্লোগান…
‘বন্দুকের নল শক্তির উৎস…’
প্রান্তিক মানুষের মুক্তি চেয়ে লকাপে লাশ…
ভালোবাসা!

এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে ভেসে আসে মাংসের সুবাস!
কতোই ছাগল মুরগি হলো শহীদ, গলা কাটা লাস।
নিঃসঙ্গ মানুষের স্বাধীনতাদিবস পালন এলোমেলো চিন্তায়,
অতীত স্মৃতির চারণায়…
যদি আসতো এক অলীক ফোন, আমার সেই প্রথমের…
রাত কেটে যেতো না বলা অনেক কথায়…
শৃঙ্খলিত স্বাধীনতা গুমরে কাঁদে ব্যথায়।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *