সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৭৯)

পুপুর ডায়েরি
আমার রাঙা মাসি।
আমার মায়ের থেকে তেরো চোদ্দ বছরের ছোটো দুই আইডেন্টিকাল টুইনের একজন।
আমার থেকে সতেরো আঠারো বছরের বড়ো।
মায়ের আমি, “ অটামস চাইল্ড”, তাঁর নিজের ভাষাতেই।
আমি যখন হয়েছি, মা তখন তেত্রিশ।
কাজেই মা বলে রাখতেন, “ শোনো বেরলে বলবে, তুমি আমার নাতনি। টাকুরা হল আমার ঠিকঠাক মেয়ে। ”
টাকু, আমার রাঙা মাসির ডাক নাম।
বা মশাই, মানে আমার বাবা ও সমান ভাবে ভালবেসে বড়ো হওয়ার পথে সঙ্গে ছিলেন আমার মাসিদের।
রাঙা মাসি আমার বন্ধু। আমায় কসমেটিকস ব্যবহার করতে সেখানোর টিচার, ( কারণ মায়ের কাছে ওগুলো নিষিদ্ধ দ্রব্য)|
আমায় রোল ফুচকা খেতে শেখানোর মাস্টার মশাই। আমার সব গোপন চিঠিদের জমা রাখার বাক্স। বড়ো হবার পর, বাচ্চাদের বেবি সিটিং করে আমাদের রিলিফ দেবার জায়গা। আমার কলেজের লোকাল গার্জেন। এক কথায়, আমার সেই ননজাজমেন্টাল বন্ধু, যে রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট পেয়েও বলে, মানি গভর্মেন্ট এতোগুলো টাকা দিলো, চল শপিং করি, শিগগির চলে আয় !
আর জ্বর হলেও বলে, খুব কষ্ট হচ্ছে, এটা নিয়ে কী করি বল তো?
চলে গেছে।
সতেরোই মার্চ। লিভার আর প্যানক্রিয়াসের ম্যালিগন্যান্সি।
আমায় বলে গেছে, চল মন উঠিয়ে নিলাম, যেতে যখন হবে, মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই।
দুহাজার বারো।
উনিশ মার্চ আমার তিরিশ বছর বয়েসী ভাইটা বাৎসরিক কাজ করতে বসবে।
আমি ভাবছি,ওর থেকে, আমার ষোলো বছরের ছোটো বোনটার থেকে আমি কত বেশি দিন আদর পেলাম।
আমার নালিশ করার কোনো জায়গা নেই।
কেবল রাঙা মাসির গলার সুরেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে মাথার মধ্যে।