কবিতায় ধীরেন্দ্রনাথ চৌধুরী

বর্ষা মানেই
বর্ষা মানেই, তুই তো আমার কদম ডালের সখী,
যেমন জমে, বিট নুন আর টসটসে আমলকি।
বর্ষা মানেই ঠোঁটে তে ঠোঁট, ময়ূর পেখম তোলে,
চারদিকেতে সব সুনসান, হৃদয় উৎরোলে ।
বর্ষা মানেই, কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া হয় নদী,
ছুটছে যানবাহন সব, রেটটা বাড়ে যদি।
বর্ষা মানেই হাড় জির জিরে বাচ্ছা সে এক ছেলে,
থরথরিয়ে কাঁপছে ভিজে, পরন্ত বিকেলে।
বর্ষা মানেই, পলিথিনের ঘর ভেঙেছে ফুটে,
ভিখ মেঙে খায় লোকগুলো সব পালায় ছুটে ছুটে।
বর্ষা মানেই, সব খোয়ানোয় কাঁদছে বুড়ো-বুড়ি ,
বর্ষা মানেই, আরেক ছবি, মাছ-ভাজা, খিচুড়ি।
বর্ষা মানেই, কোথাও শুধু ছিটে ফোঁটা বৃষ্টি,
শুকোয় ফসল জল না পেয়ে মাঠে, কোন শকুনের দৃষ্টি।
বর্ষা মানেই, তার ছিঁড়েছে, ট্রান্সফরমার ওফ্,
তার মধ্যেই বিকেলেতে মুড়ি – আলুর চপ।
বর্ষা মানেই, আর দেখা নেই ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ব্যাঙ,
কোথায় গেলো, চারিদিকে তাদের বড়ো গ্যাং।
বর্ষা মানেই, নেই কালিদাস, এবং তার কাব্য,
প্রকৃতিও পাল্টে গেছে, নতুন কি আর ভাববো!
বর্ষা মানেই, স্নান বন্ধ, আছে কি সেইদিন,
সুর কেটেছে, তাল কেটেছে, জীবন বর্ণহীন।
বর্ষা মানেই দুটো ছবি যায় দেখা দু দিকে,
একদিকে তে বানভাসি, আর খরায় থাকা টিকে।
বর্ষা মানেই, তোকে খোঁজা, ভিজলি কতখানি,
শরীর, মন আমার দিকে হেলছে? কি জানি!
বর্ষা মানেই, আকাশ ভাঙুক, পড়ুক বাজ কড়-কড়,
ভয় পেয়ে তুই হটাৎ করেই জড়িয়ে আমায় ধর।
বর্ষা মানেই, কদম ফুল ফুটুক রাশি রাশি,
আমি হবো কৃষ্ণ, আর তুই আমার বাঁশি।