অথ শ্রী উপন্যাস কথা-তে সুতনু হালদার – ধারাবাহিক (অন্ধকারের উৎস হতে)

(আট)

সকাল থেকে বিভিন্ন চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রাজ্যের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতির পরিসংখ্যান দেখতে দেখতে অনিমিখ চৌধুরী কিছুটা অবসাদে টিভিটা অফ করে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকল। তারপর সে রেডি হয়ে নিজের বাড়ি থেকে বেরোবার প্রস্তুতি নিল, গ্যারেজ থেকে গাড়িটা নিয়ে সোজা থানায়। দিন চারেক থানায় আসা হয়নি, অফিসার ফোনে তাকে যা যা গল্প শুনিয়েছেন, এতদিন সেগুলো সে মুখ বুঁজে সহ্য করে গ্যাছে। আজ আর নয়। আজ সামনাসামনি একটু কড়কে দিয়ে আসবে বলে মনে মনে ঠিক করল অনিমিখ। প্রায় দেড়মাস হয়ে গেল একটা মেয়ে রাস্তা থেকে কিডন্যাপ হয়েছে, অথচ পুলিশ এখনও কোনও সন্ধান দিতে পারছে না! মামদোবাজি! অনিমিখ চৌধুরি এটা আর মেনে নেবে না। অফিসার ইনচার্জকে একটু কড়কানি আজ সে দেবেই। এদের ওপর ভরসা করে এখনও সে ওপর মহলে জানাননি, অথচ তার নিজের বন্ধুই রয়েছে লালবাজারে। আইপিএস অফিসার সিদ্ধার্থ সোম। লোকাল পুলিশের দৌড় আজকেই শেষ দেখে ছাড়বে। প্রয়োজনে এবার সিদ্ধার্থ সোমকেই ব্যাপারটা দেখতে বলবে। এইসব ভাবতে ভাবতে অনিমিখ চৌধুরি থানায় এসে পৌঁছল।
থানায় এসে অফিসার ইনচার্জের ঘরের সামনের সিকিউরিটিকে বলল, ‘বড়বাবুর সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।’
-‘বসুন। স্যর ডাকলে যাবেন।’ কনস্টেবলটি তাঁকে জানালো।
অনিমিখ চৌধুরী এবার সোজা অফিসার ইনচার্জকেই ফোন করে তার অপেক্ষা করার কথা জানাল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভেতরে যাবার অনুমতি মিলল। অনিমিখ ওসির ঘরে ঢুকে সামনের চেয়ারে বসল। তারপর কোনও ভূমিকা না করেই বলল, ‘আমার মিসেসকে খুঁজে না দিতে পারলে আপনারা বলে দিন। আমি অন্য সোর্স কাজে লাগাব।’
অফিসার আড় চোখে অনিমিখ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনি হয়ত ভাবছেন, আমরা চুপ করে বসে আছি! ইউ আর রং মিস্টার চৌধুরী। এই লকডাউনের মধ্যে, প্রশাসনিক শত ব্যস্ততার মধ্যেও আপনার কেসটা নিয়ে আমরা লড়ে যাচ্ছি।’
-‘কিন্তু আমি তার কোনও আউটপুট দেখতে পাচ্ছি না! প্রায় দেড়মাস হয়ে গেল আমার মিসেস মিসিং, আর আপনারা এখনও বলছেন– চেষ্টা করছেন! অথচ ওই ব্যাপারে আজ অবধি কোনও পজেটিভ ইনফরমেশন দিতে পারলেন না!’
-‘দেখুন, মিস্টার চৌধুরী, আমরা একদমই বসে নেই। বাই দ্য ওয়ে, কিছু যদি মনে না করেন তো, একটা কথা জিজ্ঞেস করি। আপনার স্ত্রীর অন্য কারোর সঙ্গে কোনও অ্যাফেয়ার্স ট্যাফেয়ার্স ছিল টিল কিনা কিছু জানতেন? মানে এখন তো হামেশাই এমন দেখা যায়… তাই বলছিলাম আর কী, তেমন কিছু…’
অনিমিখ একটু উত্তেজিত হয়েই উত্তর দিল, ‘এমন প্রশ্ন আপনারা আগেও আমাকে করেছিলেন, তখন যা উত্তর দিয়েছিলাম, এখনও তাই দিচ্ছি, আর ভবিষ্যতেও তাই দেব। এমন কিছু আমার জানা নেই, যদি এমন কিছুর বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা থাকত, তাহলে আমি অন্তত জানতে পারতাম। আর আপনাদের জিজ্ঞাসার আগেই আমি নিজেই এসব তথ্য আপনাদের দিয়ে তদন্তে সাহায্য করতাম। ব্লাডি মিডিলক্লাস সেন্টিমেন্ট আমার একদমই নেই, অফিসার।’
-‘না, না! মিস্টার চৌধুরী, এগুলো আমাদের রুটিন এনকোয়ারি। আপনি অযথা উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন! আচ্ছা কোনও পারিবারিক বা ব্যক্তিগত শত্রুতা? কিংবা কারোকে আপনি সন্দেহ করেন? আর একবার ভেবে দেখুন তো।’
-‘না, আমি এতটুকুও উত্তেজিত হইনি। অ্যাফেয়ার্সের এই প্রশ্ন যদি আবারও আপনাদের মাথায় আসে, তাহলে আপনারা নিজেরাই এর উত্তর খুঁজুন। ওর স্কুলে খোঁজ নিন, অন্যত্রও নিতে পারেন। আর আমাদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনও শত্রু নেই। সন্দেহও কাউকে করি না। কিন্তু এইসব বোগাস প্রশ্ন আমাকে আর করবেন না। দিনে দুপুরে রাজরাস্তায় আপনার এরিয়া থেকে একটা গৃহবধূকে অপহরণ করা হ’ল, যিনি নিজে একজন শিক্ষিকাও বটে, সেই ব্যাপারে তদন্ত এত মন্থর কেন?
-‘আপনি অবান্তর কথা বলছেন! বর্তমান পরিস্থিতিটা মানুন। লকডাউনের জন্য এমনিতেই এখন আমরা প্রচণ্ড ব্যস্ত, তাছাড়া স্কুল বন্ধ। তবুও আপনার মিসেসের কলিগদের সঙ্গে আমরা ওভার টেলিফোন যোগাযোগ রাখছি। যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে সেখানেও আমরা বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য স্থানীয় দোকানদারদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। বাট আই অ্যাম সরি টু সে, কোনও প্রত্যক্ষদর্শী এখনও আমরা পাইনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে, ঘটনাটা তাঁরা শুনেছেন, কেউ দেখেছেন বলে জানাননি! আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমরা আমাদের কাজ ঠিকই করে যাচ্ছি। কোনও অবহেলা হচ্ছে না।’
অনিমিখ চৌধুরী ভেতরে ভেতরে যেন গর্জে উঠল। তার কিছুটা বর্হিপ্রকাশও করে ফেলল, ‘শুনুন অফিসার, আমি আপনাকে আর ২৪ ঘন্টা সময় দিচ্ছি। আপনি যদি কিছু না করতে পারেন, তাহলে আমি আপনার ওপর মহলে জানাতে বাধ্য হব।’
-‘কী বলতে চাইছেন? ওপর মহলের ভয় দেখাচ্ছেন কাকে?’
-:আপনাকে।’
-‘মিস্টার চৌধুরী, আপনি অযথা আমার সময় নষ্ট করবেন না। আপনার যেখানে ইচ্ছা জানান। পুলিশ ম্যাজিশিয়ান নয়। আমরা ধাপে ধাপে এগোচ্ছি, আপনাকেও একটু ধৈর্য ধরতে হবে। শুধু একটা কথা বলি, কেস হাতের বাইরে যায়নি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছি।’
অনিমিখ চৌধুরী বুঝল, এই পেটুয়া ওসিকে দিয়ে কিস্যু হবে না। তাঁকে তাঁর হাতটা একটু বাড়াতে হবে। ওসির ঘর থেকে সে বেরিয়ে এল।
বাড়ি ফেরার পথেই রাজর্ষি দাশগুপ্তের কথা মনে পড়ল। রাজর্ষি তার ব্যাচমেট। বেশ কয়েক বছর তেমন যোগাযোগ না থাকলেও, রাজর্ষি স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারি। ডাব্লুবিসিএস ক্যাডার। মোবাইল সার্চ করে রাজর্ষির একটা নাম্বারও পেল। কপার ঠুকে রিং করলেন। রিং হচ্ছে। রাজর্ষি এখনও এই নাম্বার ব্যবহার করে কিনা সেই ব্যাপারেও অনিমিখ নিশ্চিত নয়। এইসব ভাবতে ভাবতেই ওপর প্রান্ত থেকে ফোনটা রিসিভ করা হ’ল। অনিকেত চৌধুরী শুনতে পেল, ওপার থেকে ভেসে এল, ‘ইয়েস, রাজর্ষি দাশগুপ্ত স্পিকিং।’
পুরোনো বন্ধুকে নিজের পরিচয় দিয়ে, পুরো ঘটনাটা বলল অনিমিখ। রাজর্ষি পুরো ঘটনাটা শুনে বললেন, ‘সন্ধে নাগাদ তোর সঙ্গে কথা বলছি। অফিশিয়ালি ব্যাপারটা আগে ভালো করে জেনেনি। তুই চিন্তা করিস না। আমি তোর পাশে আছি।’
অনিমিখ চৌধুরী বাড়ি ফিরে এল।
সন্ধের একটু পরেই রাজর্ষি ফোন করেছিলেন। অনেকক্ষণ কথা হ’ল। লোকাল থানার সঙ্গেও কথা হয়েছে বললেন। প্রশাসনিক স্তরে যা যা করার, সেগুলো হচ্ছে, আর যতশীঘ্র সম্ভব অনন্যাকে উদ্ধার করা হবে বলে রাজর্ষি, অনিমিখকে কথা দিলেন। তবে লোকাল থানার ওসি অনিমিখকে বলেছিল, এই ঘটনার পেছনে বড়সড় কোনও চক্রের হাত আছে, সেই গল্পটা রাজর্ষি বাতিল করে দিয়ে, তাঁকে আশ্বস্ত করলেন; তেমন কোনও ঘটনা এটা নয়। কোনও বড চক্র এর পেছনে আছে বলে কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত তাঁদের হাতে নেই। ঘটনাটা নিতান্তই কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশেও করা হতে পারে। জানালেন রাজর্ষি দাশগুপ্ত । তবে এই বিষয়ে এখনও তিনি একেবারে নিঃসন্দিগ্ধ নন। কিন্তু তাঁর অনুমান আর অভিজ্ঞতার ভিত্তির উপর নির্ভর করে তিনি এটা জানালেন এবং আরও কয়েকটা দিন সময় অনিমিখের কাছে চেয়ে নিলেন। রাজর্ষিকে ভরসা করা ছাড়া, বিকল্প কোনও পথ অনিমিখের কাছে এই মুহূর্তে আর আছে তার বলে মনে হ’ল না। তাছাড়া, রাজর্ষীকে নির্ভর করতে আজ অন্তর থেকেই তার ইচ্ছা করল। ফলত অনিমিখ বলল, ‘বেশ। তুই যা ভালো বুঝিস করিস। তবে একেই অনেক দেরি হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি উদ্ধারের ব্যবস্থা কর ভাই।’
-‘হ্যাঁ। হয়ে যাবে। চিন্তা করিস না। তোর বউকে উদ্ধারের সব দায়িত্ব আমার। তুই নির্ভাবনায় থাক ভাই।’
যে কোনো কারণেই হোক, অনিমিখের আজ রাজর্ষিকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করল, তাই সে তার বন্ধুকে বলল, ‘আচ্ছা। তোর ওপর ভরসা রাখলাম।’
ফোনটা রেখে দিয়ে অনিমিখের বেশ নিশ্চিন্ত লাগল। এই মুহূর্তে সিদ্ধার্থ সোমকে আর জড়াতে ইচ্ছা করল না অনিমিখের। তার মনে হ’ল, সিদ্ধার্থকে আপাতত হাতে রাখা যাক। রাজর্ষি ফেল করলে, তখন না হয় সিদ্ধার্থর কথা ভাবা যাবে। নিজের মনে এসব ভাবতে ভাবতে অনিমিখ চৌধুরী ব্লেন্ডার্স প্রাইডের বোতল খুলে সোডা দিয়ে একটা পেগ বানিয়ে মোবাইলে সমাপ্তিকে ধরল। সমাপ্তি তাঁর অফিসের জুনিয়র একাউন্টেন্ট। অবশ্য বছর দু’য়েক ধরে সমাপ্তির সঙ্গে তার অন্য একটা কেমিস্ট্রি বেশ রসালো হয়ে উঠেছে। সমাপ্তিকে ফোনে ধরে অনিমিখ বলল, ‘আজ রাতে চলে এসো। খুব লোনলি ফিল করছি।’
-‘তুমি কি পাগল না মাথা খারাপ! শিবু বাড়িতে, তাছাড়া অফিস বন্ধ, বেরবো কী বলে?’
-‘ কিছু একটা বলে ম্যানেজ করো। অনেকদিন তুমি আমার সঙ্গে থাকোনি। আজ এসো।’
-‘থাকি নি মানে! গত মাসের সাতাশ তারিখেই তো সারারাত পাগলামি করলে! এর মধ্যে ভুলে গেলে?’
-‘সে তো প্রায় একমাস হতে চলল! তোমাকে ছাড়া এক মিনিটও আমার ভালো লাগে না।’
-‘হুমম। তোমার বউয়ের কোনও সন্ধান পেলে?’
-‘না। এখনও পাইনি। খোঁজ চলছে। তুমি আজ চলে এসো। বাড়িতে বলবে অফিসে জরুরি কাজে যেতে হচ্ছে।’
-‘পাগলামি করো না। এখন এসব বলা যাবে না। শিবুকে গাড়ল পেয়েছ? রাতের বেলা নিজের বউকে ছেড়ে দিতে কোনও পুরুষই পছন্দ করে না, বুঝলে মশাই। তাছাড়া এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোম এটা সবাই জানে’
-‘তাহলে?’
-‘দেখছি। তুমি আটটা নাগাদ আমাদের বাসস্টপের পরের স্টপেজে গাড়িটা নিয়ে দাঁড়াও। আমি ওখান থেকে উঠব, তবে ঠিক দশটার মধ্যে ফিরে আসব কিন্তু।’
-‘অগত্যা। তাই হোক।’
কিছুক্ষণ পরে সমাপ্তিই ফোন করে অনিমিখকে জানালো আসতে হবে না। যথাসময়ে অনিমিখের বাড়ি সে নিজেই পৌঁছে যাবে।
কিন্তু সাড়ে আটটা বেজে গেল কোথায় সমাপ্তি! অনিমিখ আবার সমাপ্তিকে ফোনে ধরল। সমাপ্তি জানালো, ‘অতি কষ্টে শিবুকে গুলপট্টি মেরে টেরে ম্যানেজ করেছি। বললাম অফিসের খুব আর্জেন্ট কিছু কাজ আছে। আজ নাইট শিফটে অনেককেই যেতে হচ্ছে। কাল সকালেই কিছু নতুন ডেলিভারি হবে সেইসব পেপার্স আজ রাতে রেডি না হলে কাল সকালে ডেলিভারি দেওয়া যাবে না। প্রোজেক্টটা ক্যান্সেল হয়ে যাবে। কোম্পানীর প্রচুর লস হবে বলে বস সবাইকে আর্জেণ্ট কল করেছে। তাছাড়া আগামী মাসের স্যালারী বিলটাও এই ফাঁকে রেড়ি করতে হবে, না হলে নেক্সট মান্থ কোনও এমপ্লয়ি স্যালারি পাবে না। সুতরাং আজ নো ছুটি। শিবু ধাপ্পাটা খেয়ে গেল। ভাগ্যিস এসব ব্যাপার ও তলিয়ে ভাবে না, এটাই ভরসা। না হলে আমি কবেই ধরা খেয়ে যেতাম।’
-‘গুড। দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল। কটায় আসছ?’
-‘ঘন্টা খানিকের মধ্যেই বেরচ্ছি।’
-‘ ঠিক আছে, আমি ঠিক সাড়ে নটা নাগাদ আগের জায়গাতেই দাঁড়াচ্ছি। তুমি চলে এসো।’
-‘ওকে।’ সমাপ্তি মোবাইল ডিসকানেক্ট করল।
সমাপ্তিকে নিয়ে অনিমিখ যখন বাড়ি ফিরল, তখন ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁইছুঁই। সমাপ্তি পরোটা আর চিকেনকারি নিয়ে এসেছিল। দু’জন মিলে সেটা আত্মসাৎ করতে করতে সমাপ্তি বলল, ‘মাঝে মাঝে তোমার এইসব পাগলামির জন্য কোনদিন না বিপদে পড়ে যাই! তুমি একেবারে যা তা!’
অনিমিখ হাসতে হাসতে বলল, ‘বেড়ে রেঁধেছ কিন্তু চিকেনটা।’
-‘কাল খুব ভোরেই কাটব কিন্তু।’
-‘হুম। আর ঘুম না ভাঙলে বাড়ি গিয়ে শিবুবাবুকে অন্য কোনও গল্প শুনিয়ে দিও। অত ব্যস্ত হচ্ছ কেন? এই তো সবে এলে। এখনই যাবার চিন্তা করার কী আছে? অফিসের কাজগুলো আগে সারো, স্যালারি বিলটা রেডি করো, তারপর তো…’ বলে অনিমিখ হেসে উঠলেন।
সমাপ্তি চোখ বড় বড় করে বলল, ‘বাজে বকো না। পরশুদিন রাতে তোমার ওইসব ওইসব চ্যাট-ফ্যাটের পাগলামির জন্য শিবুর কাছে প্রায় ধরা পড়ে গিয়েছিলাম আর কী। ভাগ্যিস স্টাডি রুমের দরজাটা বন্ধ করেছিলাম। ওই কুম্ভকর্ণও যে ঘুম ভেঙে উঠে আসতে পারে সেটা ভাবিনি। ভাগ্য জোরে ও কিছু বুঝতে পারেনি। জিজ্ঞাসা করল, কার সঙ্গে কথা বলছিলাম? আমি বললাম, ‘কনফারেন্সে ছিলাম। তুমি উঠে এলে কেন?’
ও বলল, ‘বাথরুম যাবার পথে স্টাডিরুমে তোমার আওয়াজ পেলাম, তাই বলছি।’
-‘ভেবে দ্যাখো অনিমিখ, ভাগ্যিস দরজাটা বন্ধ ছিল, না হলে কী যে হত! ভাবলেই চমকে উঠছি।’
-‘সেদিন তুমি মুখ দিয়ে যেসব আওয়াজ করছিলে, শিবুবাবু আবার সেগুলো শোনেননি তো?’ বলেই অনিমিখ নিজের খেয়ালেই বলে উঠল, ‘না, না। সেদিন ওইসময় আমিই কাত হয়ে গিয়েছিলাম, শিবুবাবু শুনলে পুরো কুপোকাত হয়ে পড়তেন। সেটা যখন হননি, তখন কিছুই শোনেননি। কি বলো?’ বলে আবার হেসে উঠলেন অনিমিখ।
-‘এবার তোমাকে আমি খুন করে ফেলব কিন্তু!’
-‘আমি তো প্রতি মুহূর্তেই তোমার হাতে খুন হতে চাই ডার্লিং। তুমি যখন ইচ্ছা আমাকে খুন করো, বারবার খুন করো। আমার তাতেই আনন্দ।’
-‘ন্যাকা। শুধু ওই এক চিন্তা। ওসব ছাড়া আর কিছু বোঝ না বলো?
-‘এমন চৌত্রিশ, আটাশ, চৌত্রিশের রূপসী চোখের ঘুম কেড়ে নিয়ে হৃদয় সিংহাসন অধিকার করে বসে থাকলে কে-ই বা অন্য কিছু বুঝবে?
-‘ও! তাই! আমার আর অন্য কিছু নেই বুঝি? শুধু…’
তাল কেটে যাবার সম্ভাবনা দেখে অনিমিখ চটজলদি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘আরে না। থাকবে না কেন? আমি ইয়ার্কি মারছি তো।’
-‘হুমম। আজ কিচ্ছু পাবে না। পুরো উপোষ করিয়ে রাখব। দ্যাখো…’
-‘এই যে এত পরোটা চিকেন খাওয়ালে, পেট ভর্তি হয়ে আছে তো। উপোষী কেন থাকব?’
-‘পেট তো ভরল, এতেই হবে তো? শরীর আর মনের অন্য ওইসব খিদে মিটবে তো ওতে?’ বলতে বলতেই সমাপ্তি স্বগতোক্তির স্বরে বলে উঠল, ‘বেড়াল বলে মাছ ছোবে না!’
ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *