অণুগল্পে সুদেষ্ণা সিনহা

বনসাই

বনসাই শব্দটি অসিত প্রথম শুনেছিল অফিস কলিগ মিস্টার গুপ্তের কাছে। এ এক অদ্ভুত জাপানী রীতি। বনসাই করলে বড় গাছকে তার সবরকম বৈশিষ্ট্য নিয়ে ছোট পরিসরে আবদ্ধ রাখা যায়। প্রথম প্রথম একথা ভেবে বেশ কষ্ট পেয়েছিল সে। ভারি অদ্ভুত তো! গাছ তার মনের মতো বাড়তে পারবে না! মানুষ খবরদারি করবে!

এরপর মিস্টার গুপ্তের প্রভাবে অসিত তার সাতশো স্কোয়ার ফুট ফ্ল্যাটের বারান্দায় ছোট্ট একটি টবে একটি বট গাছ লাগাবার পরিকল্পনা করল। বছরের পর বছর ধরে তার পরিচর্যায় উপযুক্ত মাটি,সার প্রয়োগে,সময়মত ডাল কাটাছাঁটায় বটগাছটিতে ঝুরি নামল। বনসাই বটগাছ তাদের ফ্ল্যাটের মুখ্য আকর্ষণ হয়ে উঠল।

অসিতের এখন বয়স হয়েছে। শরীরে নানা রোগের প্রকোপ। স্ত্রী বিয়োগ হওয়ায় পর পরই একটা অদ্ভুত একাকিত্ব পেয়ে বসলো অসিতকে ঠিক সেই বনসাই বটগাছের মতো। সেও তো একা। এই প্রথম অসিত অনুভব করলো তারই মতো বনসাই বটগাছেটির একা ও ছোট হয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রণার কথা। আজ….আজই সে ওই ক্ষুদ্রতার যন্ত্রণা থেকে বনসাই বটগাছটাকে মুক্তি দিতে চায়। হ্যাঁ মুক্তি। নিজেরও।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *