কবিতায় সুমিতা চৌধুরী

বনলতারা
বনলতারা যুগ ব্যাপী কাব্যেই বিরাজ করে,
মানসপ্রেমিকা হয়ে কবির কলমে, হয়তো বা মনে।
মানুষই হওয়া হয় না তাঁদের আর…
এক আকাঙ্ক্ষার জমিতে দূরের, বহু দূরের স্বপ্নচারিণীর মতোই!
কাব্যের মহিমায় খ্যাত হয়,
কত মানুষের সমাদর, প্রেম, আর্তি, আকুতির সমাহারে।
তবু কারো একান্ত প্রেমিকা হওয়ার মান জোটে না আর তাঁদের,
কান্না ঘেরা কুয়াশার মাঝে কেটে যায় আদ্যোপান্ত জীবন!
কতো সুন্দরের উপমা, কতো ব্যাখ্যান,
তবু কি ভীষণ দৈন্যের শীতলতা মন জুড়ে!
অধর পায় না কোনো উষ্ণ পরশ কাঙ্ক্ষিত ঠোঁটের,
হৃদয় ভাঁড়ারে খালি জমা হয় নীল হয়ে ওঠা বোবা কান্নারা…
রাতের চরাচরে কবি আঁকে তাকে মায়াময় রূপে,
নিভৃতবাসী হয় কেবল মনের ঘরেই।
বনলতার মনে চাঁদ শুধু অমানিশাই ছড়ায়
আজন্মের একান্ত শরশয্যা মাঝে…
হে কবি এঁকো না আর কোনো বনলতাকে,
ছুটি দাও তাঁদের আজন্মের মতো।
যে কান্নার জল তুমি কখনো করোনি পরশ,
সে কান্নায় বুঝবে কেমনে আছে কত গভীর ক্ষত?
নারীকে আঁকা বড়োই সহজ বুঝি
প্রকৃতির মাঝে কল্পনার অপরূপ মিশেলে?
সে প্রকৃতিরই মাঝে নয় বিলাও তোমার সবটুকু প্রেম,
দেখো কিছু ব্যথার উপশম পাও কি না পাও…
বনলতারা ছুটি নিক কাব্য থেকে চির নির্জনে,
যেমন ছুটি দিয়েছো তাঁদের তোমাদের মনে চিরতরে।
বিশাল চিতা সাজানো দেখো হাটের মাঝে,
যেখানে প্রতিপলে দগ্ধ হয়, একমুঠো ছাইয়ের আকাঙ্ক্ষায় সব বনলতা…