অণুগল্পে সায়নী ব্যানার্জী

ফিরে দেখা দিন
পুরো একমাস পর আজ শ্রীপর্ণা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে। শরীর দুর্বল কিন্তু স্মৃতির পাতা থেকে বিগত দিনের সব ছবি মুছে গেছে। মা বাবা কে শুধু আবছা আবছা চিনতে পারছে। এখন আরো বেশ অনেকদিন ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে শ্রীপর্ণাকে। সারাদিন শ্রীপর্ণা ভালো থাকলেও রাতে একটা স্বপ্ন তাকে তাড়া করে বেড়ায়। হঠাৎ হঠাৎ ই কেঁপে ওঠে শ্রীপর্ণা, ঘুম ভেঙে যায়। এক অন্ধকার রাস্তা , নিভু নিভু আলো আর অচেনা ভয়ঙ্কর মুখ শ্রীপর্ণাকে তাড়া করে বেড়ায়। অনেক চেষ্টা করেও কিছুই মনে পরে না ওর। নিয়মিত ডাক্তারের চেক-আপ চলে কিন্তু এই ভয়ঙ্কর স্বপ্নের কথা কারোকেই বলে উঠতে পারে না । এইভাবে কেটে যায় আরো বেশ কিছুদিন। ঘরের পরিবেশ থেকে বেড়িয়ে শ্রীপর্ণার মা-বাবা ওকে কিছুটা দূরে এক কফিশপে নিয়ে যায়। ওখানে পৌছোতেই শ্রীপর্ণার মনের মধ্যে এক ভীষণ চঞ্চলতা সৃষ্টি হয়। এই পরিবেশ, এই টেবিল , এই কফি কাপ তার ভীষণ চেনা। থাকতে না পেরে সেখানেই শ্রীপর্ণা ওর বাবা মা কে ওর সেই স্বপ্নের কথা জানায়। শ্রীপর্ণার বাবা তৎক্ষণাৎ এর আসল কারণ খোঁজা শুরু করে দেয়। দেড় মাস তদন্তের পর ধরা পড়ে –
আজ থেকে প্রায় চার মাস আগে কলেজের পর টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার পথে শ্রীপর্ণা এই কফিশপে আসে। তখন রাত ৯টা। সাড়ে ৯টায় কফিশপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এলাকাটা একদম নির্জন হয়ে যায়। সেখান থেকে সেদিন বেড়িয়ে রাস্তায় কিছু ছেলে শ্রীপর্ণার সাথে খারাপ আচরণ করে, তার ইজ্জত লুঠ করে ও পারিপার্শ্বিক লোকেদের চোখে বিষয়টি এলে তারা শ্রীপর্ণাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। মাথায় জোড়ে আঘাত লাগায় স্মৃতি চলে যায় শ্রীপর্ণার।
পুলিশ এলাকার লোকজনদের জিজ্ঞাসা করে তথ্য প্রমান সংগ্রহ করে। তাদের বিবরণ অনুযায়ী স্কেচ করে, জায়গায় জায়গায় খোঁজ চালিয়ে সেদিনের তিন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে।
স্মৃতি চলে গেলেও এক নারীর আর্তনাদ অপরাধীদের ক্ষমা করেনি। স্বপ্নের রাস্তায় হেঁটে আজ যথার্থ বিচারের গন্তব্যে সে পৌছেচে।
আজ অনেকদিন পর খুব শান্তিতে ঘুমিয়েছে শ্রীপর্ণা। দুর্গারূপী নারীর হাতে আজ আবার অসুর বধ হয়েছে।