হৈচৈ ছোটদের গল্পে সুমিতা চৌধুরী

সুপরামর্শ
শিকারি শিকারের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে হতাশায় ঘরে ফেরার মুখেই নজরে পড়লো সুন্দর ছোট্ট পাখিটাকে। শিকারের নেশায় ধরে ফেলল তাকেই জাল ফেলে। ছোট্ট পাখি বুঝল সে বন্দী হয়েছে ব্যাধের জালে। মৃত্যু সম্মুখে জেনেও সে হারালো না মনোবল। কারণ তার প্রাত্যহিক জীবন যুদ্ধে যে ওটাই সম্বল।
পাখি সপ্রশংস দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,” তোমার বীরত্বের খবর আমি জানি। তুমি বীর একথাও মানি। তবে কেন নগণ্য আমায় আজ ধরলে তুমি? তোমায় তো মানায় না এ নগণ্য শিকার।”
শিকারি প্রশংসা শুনে কিছুটা প্রীত হলেও বুঝলো ছোট্ট পাখির প্রশংসার উদ্দেশ্য। সে বলল,” প্রশংসা শুনতে ভালোই লাগে সবার। কিন্তু আমিও মানতে বাধ্য হচ্ছি তোমার উপস্থিত বুদ্ধি ক্ষুরধার। মৃত্যু সম্মুখেও হারাওনি তুমি মনোবল। আমিও প্রশংসা করি তোমার এই গুণের।”
পাখি-“যদি আমরা হই একে অপরের গুণমুগ্ধ। তবে কেন শত্রু মোরা? এসো না করি বন্ধুত্ব। তোমার বীরত্ব আর আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিবলে এসো না করি দিগ্বিজয়।”
ব্যাধ-“নুন আনতে পান্তা ফুরায় যার, সে করবে কি আর দিগ্বিজয়? সকাল থেকে রাত অবধি ফিরি বনে, যদি একটু খাবার সংগ্রহ হয়। বাড়িতে আছে আমার পরিবার। তাদের মুখে যে অন্ন আমাকেই জোগাতে হয়।”
পাখি-“এবার বুঝেছি তোমার অসহায়তা। তবে, ভাবো তো, যাদের তুমি মারো, তাদেরও আছে পরিবার। তাদের বিনা সেই পরিবারও হয় অনাথ। তাদের চোখের জলের দাম দিচ্ছ নাকি তুমি? তার থেকে তুমি করো অন্য কোনো কাজ, যে কাজে হয় না কারো ক্ষতি। দেখবে ভগবান হবে তোমার সহায়, জ্বেলে দেবে তোমার জীবনে আলোর বাতি। যতোদিন তা না হয়, আমি রইলাম তোমার বন্ধু হয়ে, সুখ দুখে রইবো সাথী হয়ে। চলো দেখাই কোথায় আছে ফলগাছ। ফল পেড়ে নিয়ে সবার ক্ষিদে মেটাও আজ। কাল থেকে দেবো তোমায় বনের শুকনো কাঠের সন্ধান। তাই বেচে করো তুমি পরিবার প্রতিপালন।
বনের গলিঘুঁজি জানার সুবাদে আজ সে পেয়েছে সরকার থেকে বন পাহারার দায়িত্ব। যার সুপরামর্শে তার জীবনের এই উত্থান, সেই ছোট্ট পাখিকে সে আজ তার পরম বন্ধু মানে। আর এই বনকে সযত্নে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছে সে নিজেরই পূর্বের করা অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে।