সম্পাদক উরাচ

মানুষ বড় অত্যাশ্চর্য প্রাণী। কখনও সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আত্মার আত্মীয় হয়ে ওঠে, কখনও আবার সেই মানুষ কোন এক অজানা কারণে এড়িয়ে চলে সুকৌশলে৷ আধুনিক মানুষের আবার সবচেয়ে বড় হাইটেক অস্ত্র হল ব্যস্ততার অজুহাত দেওয়া৷ হাইটেকের অস্ত্র তো ব্যাবহার করতে শিখলে, মুখে একটা পলেস্তারা লাগান নকল হাসি তো ঝুলিয়ে দিলে কিন্তু ভুলে গেলে উন্নত প্রযুক্তির কারণেই আবার সকলের আপডেট সকলে পেয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি৷ তুমি কতটা ব্যস্ত, তোমার অন্য ভাই বোন – বন্ধু বান্ধবদের সাথে তোমার সম্পর্কের সমীকরণটার ভারসাম্য ঠিক কতটা বজায় রেখে চলেছ তাও আজ লুকিয়ে রাখার উপায় তো নেই!
আমরা সদা সর্বদা বৃহত্তর অন্তর্জালের (network) মধ্যে আবদ্ধ। সাক্ষাতে না পরিচয় থাকলেও এই জালে আবদ্ধ হওয়ার কারণে একে অপরের সাথে দৃষ্টি বিনিময় হয়, একে অপরের কর্মকান্ড সম্পর্কে ওয়াকি বহাল৷ বৃত্তটা ছোট হয়ে এসেছে৷ আমার বন্ধু তোমার বন্ধু, তোমার বন্ধু আমার বন্ধু সব মিলে মিশে একাকার। তাই কিচ্ছুটি এড়িয়ে যাওয়ার জো নেই! তোমার ব্যস্ততা যে শুধুই আমাতে ঘিরে কেন্দ্রিত তা বুঝতে বেশি বেগ পেতে হয় না স৷
দুঃখ এই সামান্য বুদ্ধিমত্তার পরিচয় অতি বড় শত্রুর থাকলেও তার প্রতিও একটা সমীহ জন্মায়, কিন্তু যে মানুষ নিজের বুদ্ধি প্রয়োগ না করে, নিজের বিচক্ষণতায় ধার না দিয়ে অন্যের রচিত মহাকাব্যের কুশি লব হয়ে যায়, তার প্রতি আমার অনুকম্পা হয়। আবার সেই মানুষটিকে আমি বড় দীনহীন মনে করি, যে অন্যকে বোকা ভাবে আর নিজেকে চালাক৷ করুণা হয়, কবে হবে বোধদয়! কবে বুঝবে সামনের মানুষটা তোমায় সুযোগ দিচ্ছে নিজেকে শুধরে নেওয়ার৷ কারণ ঐ যে আমরা অনেকেই ভালোবাসার কাঙাল, সম্পর্কের গুরুত্ব দিতে গিয়ে অনেক কিছু ত্যাগ স্বীকার করছি। তবু শুধরাইনি। তবে এটাও ঠিক আত্মসম্মান বোধটা খুব কড়া হওয়া উচিত। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে, একদিন সম্পর্কের বাঁধনে যে আবদ্ধ ছিলাম সে কথা বিস্মৃত হতে রক্তাক্ত হতে হবে হয়ত কিন্তু নিজের জন্য শ্রদ্ধাটুকু তো গচ্ছিত হবে!
অকৃতজ্ঞতা কোন গুন নয় তোমার চারিত্রিক দূর্বলতা, আর তোমার ব্যবহারই তোমার একমাত্র অন্তর্গ্রথিত পরিচয়, বাকি সব তো অর্জন করতে হয়!
পড়তে থাকুন সাহিত্য কাঞ্চন আর লেখা দিতে থাকুন।
✍️ রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়।