গদ্যের পোডিয়ামে পিয়াংকী – ধারাবাহিক – (ষষ্ঠ পর্ব)

ওরফে তারাখসা এবং তুমি বালক
পালকি কিংবা কুয়ো, কে কার সমসাময়িক, একথায় অনুরণন হয়, তীব্র শব্দ। কাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ, মানুষের ওপর কাঁধ। দরজার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে দরজা কি ছুঁতে আসে একান্তে? নাকি ফিরিয়ে দেয় অবলীলায় ? দক্ষিণের জানালায় হরিণের ছায়া এসে পড়ে, ছাপ ফেলে ফিরে যায় নিষ্ঠুর অবেলায়। অগোছালো কাপড়ে লেগে থাকা দাগ ফুলের গন্ধ নিয়ে চুপ করে বসে থাকে চৌরাস্তার ওপর। ধপ্! শব্দ হয়। মেঘ মুখে বেরিয়ে আসে রাজকন্যা। বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেলে সারসের ভিতর অন্ধকার বাড়ে। ভেতরের ময়ূর পা রাখে আতসকাচে ।বড় বড় জন্মে ছোট ছোট কিছু আলো এভাবেই আঁশ বুনতে থাকে ঘোরে অঘোরে।
এখন পালকি লুপ্তির পথ।কে যেন ছিটিয়ে দিচ্ছে চাঁদের আলো। যমুনায় নৌকা বাঁধা পালে শতছিন্ন যাওয়া-আসা, কে যেন চিৎকার করে বলছে ‘জলই জীবন, ঘরই মরণ’। কুয়ো উঠে আসছে মধ্যঘরে।হয়তো উপন্যাসের বালিকা জ্যোৎস্না স্নান সেরে ভিজে গায়ে সেঁধিয়ে যাচ্ছে পালকির আড়ালে…
যুবতী কন্যার গায়ে মেঘ। জলের ওপর দিয়ে সমান্তরালে বয়ে আসছে মিহিদানার মতো গুটি গুটি সঞ্চিত কথা। সেসব কথায় জাল আছে, আছে দড়ি সুতো কাঠি কাঁচি। অথচ কী আশ্চর্যভাবে কোথাও একটাও সীমান্তরেখা নেই। যুবতীর চুল ভিজে যাচ্ছে, তছনছ হয়ে গেছে অনতিদূরের ঘরবাড়ি, আকাল লেগেছে গ্রাম-গঞ্জে শহরে-গ্রামে কিংবা মফস্বলি বৃত্তে।
কিন্তু এসবের সত্যিই কি দরকার ছিল? একটা মেঘ যদি আটকেই যায় যদি পথ ভুল করে,যদি এক অনার্য অনাগত তাকিয়ে ফেলে জলের দিকে,যদি দাগ ঘষে জন্ম দেয় এক থোকা মালতী… কি করার আছে? তিনি এসব বোঝেন না,তাঁর নামে কোনো কুয়ো নেই,বরাদ্দ নেই কুয়াশাও। সীমান্ত অতিক্রম করা হয়ে গেলে পড়ে থাকে কয়েকটা ভাঙাচোরা ইঁট আর কিছু পূর্বকথা, কিন্তু তাতে তো পেট ভরে না। পেটের জ্বালা বিরাট, গর্ত বোজাতে হলে যত মাটি লাগে, তার যোগান দেবে কে? এইসব গাদাগাদি প্রশ্ন-উত্তর বসে থাকে বঁড়শি ফেলে। কুয়োর পেছনে ততক্ষণে জমে উঠেছে আগাছার দল। আড়ালে থাকা পর্ণমোচী এখন পরিপুষ্ট হরিৎবৃক্ষ।
ফুরিয়ে আসছে স্মৃতিদোষের ভিতর থাকা বল্গাহরিণ। কুড়িয়ে নাও,তুলে নাও,ভরে নাও। এসো বালক , মৃন্ময়ী রেখেছে এই তারাখসাটি …