T3 নববর্ষ সংখ্যায় অলোক মুখোপাধ্যায় 

মৃত্যুর প্রাক মুহূর্তে

মরে গেলে দেহের ওজন বাড়ে কিনা জানিনা তবে এই মুহূর্তে আমার ওজন সামান্য কম।  কারণ হৃৎপিন্ডের কিছুটা  হলেও ওজন  আছে এবং আমার হৃৎপিন্ডটা শরীরের মধ্যে নেই। হাসপাতালে ঢোকার মুখেই নিঃশব্দে এম্বুলেন্স থেকে বেরিয়ে এসেছি। মানে আমার হৃৎপিন্ডটাই শুধু বেরিয়ে এসেছে দেহটা নয়। এখন তো সবকিছুই এক্সচেঞ্জ হয়। তাই ভাবছি হৃৎপিন্ডটা কারোর সঙ্গে বদলে নেব।
আমি লেখক হতে চেয়েছিলাম। কফি হাউজে ছোট কাগজের সম্পাদকদের সঙ্গে আড্ডা মেরেছি, লেখা গল্প তাঁদের হাতে দিয়েছি। রাতে ফোন করব বললেও কেউ করতেন না। পরে দেখা হলে জিগ্যেস করেছি -দাদা আমার লেখাটার কিছু হল। উত্তর পেতাম – ওহ্ আপনি তো ফাটিয়ে দিয়েছেন মশাই! গল্পটা দারুণ লিখেছেন, শেষটা তো অসাধারণ হয়েছে।  এবার এতো ভালো ভালো লেখা এসেছে কি বলবো, আপনার গল্পটা রাখতে পারিনি! তবে সামনের বইমেলায় আপনি ফার্স্ট লিষ্টে। এরপর অর্ডার মাফিক বাটার টোস্ট, পাকোড়া, কফি টেবিলে এসেছে। তিনি গোগ্রাসে গিলেছেন, আমি কনিকা মাত্র। বিল মিটিয়েছি আমি। ঐ কাগজের পরের পর মুদ্রিত  সংখ্যা বেরিয়েছে এবং যথারীতি আমার গল্প নেই। রাগে ঘেন্নায় কফি হাউজে যাওয়া ছেড়ে দিলেও লেখা কিন্তু ছাড়িনি। প্রতি মাসে একটা করে গল্প লিখে যথাযথ ঠিকানায় পাঠিয়ে দিই। গতকাল একটা গল্প লিখতে বসেছি হঠাৎ মুঠোফোন বেজে উঠলো। অজানা নম্বর দেখে ধরলাম না। কিছুক্ষণ পরেই আবার ফোন। এবার ধরলাম।  ভদ্রলোক বলছেন আমি শুনছি। খুব বেশি হলে দেড় মিনিট। ফোনটা এসেছিল একটি বাণিজ্যিক পত্রিকার দপ্তর থেকে। আমার ফোটো আইডি, ব্যাঙ্ক ডিটেইলস এবং গল্পটার কপি নিয়ে যত শীঘ্র সম্ভব যেতে বললেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি এমনই উদগান্ডু বনে গেলাম যে আমার লেখা কোন গল্প টা নিয়ে উনি বলছিলেন মনে করতে পারছি না। কলব্যাক করাটাও অশোভন। মানে ব্যাপারটা দাঁড়ালো, ‘কপালে নেই ঘি ঠক-ঠকালে হবে কি’! অতঃপর অনলাইনে গুচ্ছের খাবার অর্ডার এবং দেরাজ থেকে ফুল সাইজ বৃদ্ধ সন্যাসীর ঢাকনা খুলে গুছিয়ে বসে গেলাম। খেতে খেতে নিজের সঙ্গে কথা বলছি, তারপর কখন যে কি হয়ে গেল! লোকাল ডাক্তার ঝুঁকি নেন নি, অগত্যা পাড়ার ছেলেরা এম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে এসেছে সরকারি হাসপাতালে।
আমার হাতে আর একদম সময় নেই বুঝলেন। হাসপাতালে এমারজেন্সির ট্রলিতে  আমাকে নিয়ে ডাক্তারবাবুরা ঘেমে নেয়ে অস্থির। আমি আছি কিন্তু হৃৎপিন্ডটা তো নেই। এই ফাঁকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা কোনো মৃত্যু পথযাত্রী, যার বেঁচে থাকা ভীষণ জরুরী তার সঙ্গে হৃৎপিন্ডটা এক্সচেঞ্জ করে নেওয়াই ভালো, কি বলেন!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।