গল্পে সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

নৈরঞ্জনা
একদিন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে নৈরঞ্জনা আবিষ্কার করে যে সে একটা মানচিত্র হয়ে গেছে ….পুরোপুরি গোটাগুটি একটা মানচিত্র । তাতে পাহাড় আছে নদী আছে জঙ্গল আছে সমুদ্র আছে মরুভূমি আছে এমনকী সীমারেখাও । সে ভারি অবাক হয়, মানচিত্র যে হতে হবে এইকথা তাকে কেউ বলে দেয়নি । সে বরং চেয়েছিল একজন মানুষ হতে, তার বদলে মানচিত্র !
অনেক ইতস্ততঃ করে সে মায়ের কাছে মনের কথাটি বলে ফেলে, মা তার কপালে চুমো দিয়ে বলেন ……”পাগলি!” তারপর হাত ধরে তাকে নিয়ে যান গুরুদেবের শরণে । গুরুদেব অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ আর গবেষণার পর বলেন, “আমি তো রক্ত মাংস আর মজ্জা ছাড়া আর কিছুই পেলাম না, কোথায় তোমার মানচিত্র !” সে কাঁপতে কাঁপতে মায়ের বকুনি শুনতে শুনতে ঘরে ফেরে, মা তাকে শপথ করান এমন আজগুবি কথা সে আর কক্ষনো বলবে না ।
কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি মা ভাঙেন নিজেই, কখন যেন বাবার কানেও এই কথা পৌঁছে যায়। এরপর বাবা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নজর করতে থাকেন তার ওঠাবসা চলাফেরা সবকিছু। একদিন এক আগন্তুক আসে তাদের বাড়িতে, নৈরঞ্জনা আন্দাজ করে এই অনাহুত বিজয় করতে চায় তার ভূমি। বন্ধঘরে গোপন আলোচনা হয় অনেকক্ষণ, সে বোঝে তার আবর্তন তার আকাশটুকু এইবার কেড়ে নেওয়া হবে।
দিন স্থির হয় সেই অঘটনের, হাতবদলও হয় নৈরঞ্জনার মানচিত্র, সুখ কি দুঃখ ঠিক বোঝে না সে। তার অনুমতি ছাড়াই এক বিজয়যাত্রা চলে কারণ বীরভোগ্যা বসুন্ধরা। বয়ে চলাই নৈরঞ্জনার ভবিতব্য তাই নির্লিপ্ত ঢেউগুলি বুকে গোপন রেখে নৈরঞ্জনা এখন এক বোধির অবগাহনের অপেক্ষায় থাকে। সে জানে নাম হবে সুজাতার, পরমান্ন আস্বাদন করিয়ে আশীর্বচনও সুজাতার কপালেই প্রাপ্য। তবু যদি তাঁর একবারও ক্লান্তি উপশম হয় …একবার ও।
বুকের ভেতর ঢেউগুলি নিয়ে নৈরঞ্জনা অপেক্ষায় থাকে, এক অবিচলিত উন্মুখতায়….. অনন্তকাল !