গদ্যানুশীলনে শ্যামলী দাস

অশৌচপালন
সে তো কবেই শুরু করতে হতো! বেটার লেট দ্যান নেভার! সত্যিই অশৌচ পালন করতে চান! তিলোত্তমার জন্য ?
তাহলে খোঁজ নিন, আপনার পাড়ার যে মেয়েটি কাজ করে রাতের লাস্ট লোকালে বাড়ি ফেরে, সে ফিরলো কিনা!
খোঁজ নিন আপনার বাড়ির কাজের মেয়েটির। তার ঘাড়ের কাছে , গলার নীচে কেন লম্বা লম্বা কালসিটের দাগ?
খোঁজ নিন আপনার বাড়ির ফুটফুটে মেয়েটি কেন পাশের বাড়ির কাকুকে দেখলেই ভয়ে সরে আসে!
খোঁজ নিন, কেন বাসে, ট্রামে, ভিড়রাস্তায় আপনার অপরিচিতা মেয়েটি বুকের সামনে ব্যাগ আগলে ধরে দাঁড়ায়, হেঁটে যায়!? তবুও কি রক্ষা পায়!
হাতের নাগালে থেকে যায় পাথরের খাঁজ, ফাঁকফোকর। খোঁজ নিন।খোঁজ নিন। চোখ কান খোলা রাখুন।
খোঁজ রাখুন মেয়েরা কতবার শৈশব হারায়!
কতবার নিশ্চুপ অসহায় মুখ সহ্য করে নেয় আঙুলের খেলা।
খোঁজ নিন আপনার সহপাঠিনীর, ভরসা দিন কর্মস্থলে।
বিশ্বাস দিন আপনার সঙ্গিনী কে। খোঁজ নিন, বারে বারে খোঁজ নিন। খোঁজ নিন আপনার বান্ধবীর চোখের নীচে কেন এতো কালি!
খোঁজ নিন আপনার সঙ্গিনীর ঘেমে কালো হয়ে যাওয়া মায়াবী মুখটির। শরীর ছেড়ে মনের খোঁজ নিন।
দিনে দশবার করে আয়নায় মুখ দেখুন। মুখ নয় বিবেক দেখুন।আসুন, আমি আপনি এই একান্নবর্তী পরিবার একসাথে তিলোত্তমার জন্য অশৌচ পালন করি।
চেতনা জাগানো বড় কঠিন কাজ। পারবেন!
বারবনিতা, রক্ষিতা, বেশ্যা ইত্যাদি ইত্যাদি শব্দ গুলি পৃথিবীর ডিকশেনারি থেকে মুছে দিতে? অন্তত আপনার মন থেকে?
“রাত দশটার পর বাড়ির বাইরে কেন! “প্রশ্ন টা সম্পূর্ণ মুছে ফেলতে পারবেন? পারলে ফেলুন।সময় আছে।চেষ্টা করুন।
এই অশৌচকালে, আপনার বাড়ির ছেলেটিকে শেখান সংযম, সম্মান, শ্রদ্ধা।
মেয়েটিকে শেখান আত্মরক্ষা, আত্মসম্মান, শক্তিরূপ । খুন্তির সাথে ছুরিও ধরুক। বই এর সাথে লাঠি।
গান কবিতা নাচের সাথে এবার নিশ্চিত শিক্ষা হোক মার্শাল আর্ট। ফিরে আসুক লাঠি খেলা, ছোরাখেলা।
পরিধানে রুচিশীলতা, ব্যবহারে নম্রতা, কোমলতার সাথে শিখুক গগনবিদারী চিৎকার।
অশৌচ শুরু হোক এমন করে, যেন মাংস লোভীরা ভয় পায়।
শেষ নয়, শেষ নয়। শুরুর শেষ হোক।
পাশে থাকুন অত্যাচারিতার। থানা, পুলিশ, মহিলা-সেল, FIR…..বড় সোজা কথা নয়। তখন যেন” নোংরা মেয়ে ” বলে, দরজা বন্ধ করে দেবেন না!
অশৌচ পালন করতে হলে এমন ভাবে করুন।
শোক পালন করতে হলে এমন ভাবে করুন।
নারীস্তনে একবুক ভালোবাসা দেখুন।যারা মেয়েদের বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ খোঁজে….
রাস্তা ঘাটে ঘরে বাইরে ফ্রক হাতড়ে, খেলার হাত পৌঁছে যায় বুক থেকে যোনি…
তাদের এমন ভাবে মনে করান সেই জন্মের লগ্নটি,
যেন রক্তের হোলি খেলা চিরজাগরুক হয়ে থাকে।
নারী পুরুষ ছেড়ে, আসুন মানুষ হয়ে এই অশৌচান্তে প্রার্থনা করি…..
বিসর্জন কেন!বরং আবাহিত হোক মাতৃশক্তি।
তিলোত্তমার জন্য অশৌচ পালন শুধু আশ্বিনে কেন!
আমরণ অশৌচ থাক চেতনায়…অবক্ষয় তো একদিনের নয়!
মায়ের বাপের বাড়ি আসা আটকে লাভ নেই বন্ধু।
বরং লোলুপ পৌরুষের প্রবেশটা আটকান।
দানবের বাড়বাড়ন্ত আটকান।
অসুরকুলের অমৃত পান আটকান।
রক্তবীজের বিনাশ শুরু হয়ে গেছে……
নারীর পাশে পুরুষের চেতনা দরকার। সাজানো পৌরুষ নয়,চেয়ে দেখুন, ওরা একসাথে হাঁটছে….
আমাদের সন্তানেরা শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে….. অশৌচপালন।
শিখিয়ে যাচ্ছে, তোমার রাত, আমার রাত,আমারও আছে দখল নেওয়ার অধিকার।
ভালো লাগলো।