টেকটাচ টক – ১০০দিন: বিশেষ সংখ্যায় শাল্যদানী
একশোতে ১০০
সঙ্গে চলা তো বড় কথা নয়, তাকে চলতে হয় সঙ্গে নিয়ে, ভাবতে হয় একসঙ্গে, স্বপ্নের জাল বোনা সেও তো ওই একই থালায় খাওয়া দশটা হাত। শুরুতো সবকিছুরই থাকে, গতিশীল বা গতিহীন কতকিছুই তার গতিপ্রকৃতির বর্ণনার কলাম কলাম জিগির হয়ে ধরা দেয়। ম্যাগাজিন হাউস, পাবলিকেশন হাউস, পার্সোনাল ব্লগ এসবের ছড়াছড়ি যখন তখন মন খোঁজে একটা পরিবারকে। হাউসে হাউসে চাপা পড়ে যাওয়া পরিবারগুলো ভুলে গেছে বা ভুলে যায় পরিবার নামক শব্দটির কথা। আর সাহিত্যজগতে পরিবার অতি বিষম বস্তু। পরিবার বলতে প্রথমেই মাথায় আসে পাওয়া আর পাইয়ে দেওয়ার যুগলবন্দী আর বন্ধু-বন্ধু মুখের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে ব্রুটাসেরা। ওই যে বললাম, পাওয়া আর পাইয়ে দেওয়া এই দুইয়ের বাইরে গেলেই তুমি সাহিত্যে নেই। এইতো সময় — তুই আমায় চুলকে দে আমিও তোকে দিই।
পরিবারের সংজ্ঞা যদি একসঙ্গে চলা হয়, একসঙ্গে বাঁচা হয়, সুখ দুঃখের মধ্যেও তরতরিয়ে তরী বাওয়া হয় তবে, আমাদের পরিবার, যা আপনাদের নিয়ে তৈরি তা পরিপূর্ণভাবে সফল। কেন জানেন? আমাদের মধ্যে কোন দেনাপাওনা নেই,পাইয়ে দেওয়া বা টেনে ধরা, গলা চেপে পড়াতে বসানো কিংবা অকারণ পুরস্কার বা তিরস্কারের কোন বহর নেই। মুক্ত আকাশে দেনা-পাওনার পালকগুলো খসিয়ে উড়তে হয় আমাদের পরিবারে আকাশে। উড়বো বললেই তো আর ওড়া যায় না, তার জন্য প্রয়োজন একটা সাহস, যে সাহসের জোরে প্রথম ডানা ঝাপটানো পাখিটা দুরুদুরু বুকে নিজেকে শূন্যের দিকে ছুঁড়ে দেয়, সেই সাহস। বড় কঠিন সাহস- সেই সাহস, বড় দামাল সাহস- সেই সাহস। পরিবারের জাদুকাঠি অপমান কে বানিয়ে দেয় রেশমি গোলাপ, গুজবকে বানায় গজলের সুর। উপমা কে সরিয়ে জানিয়ে দেয় সাতদিনে সাত রাজার কিস্তিমাত। একশোটা দিন ধরে দৈনিক সম্পূর্ণ ম্যাগাজিন— শুধু কবিতা নয়, প্রতিদিন গদ্য, নাটক, বইয়ের আলোচনা, খবর তুলোধোনা, ছবি, পোর্ট্রেট, ক্যামেরার কারসাজি, ধারাবাহিক উপন্যাস, ধারাবাহিক গদ্য, গবেষণা সাহিত্য সবকিছু নিয়ে প্রতিদিন একশোতে একশো।
তবে আমাদের প্রতিদিন 100 স্কোর করবার টার্গেট থাকত না, কারণ আমাদের ক্যাপ্টেন ভজন দত্ত একশোর নিচে স্কোর নামাকে পাস মার্ক বলেই মনে করতেন না, ফলে লড়াইটা ছিল অন্য জায়গায়। কত তাড়াতাড়ি কত সুন্দর কব্জির কায়দা দেখিয়ে 100 রান তুলে ফেলা যায়। সত্যি বলতে কী, সমস্যা হত অন্য জায়গায়, যখন ক্যাপ্টেন নিজেই সুইং বল দিয়ে বলতেন উত্তরবঙ্গের লেখা কম আসছে কেন কিংবা কবিতা কমাও-গদ্য বাড়াও। ভেবে দেখুন এই ভাবে 7 দিনে 7 টা ম্যাগাজিন প্রতিদিন নিয়মিতভাবে কাজ করে গেছে আর পেছন থেকে কখনো ক্যাপ্টেন বলেছেন আরো ফাস্ট রান তোলো আবার কখনো বলেছেন আমিতো আছি, মন খুলে ব্যাট করো। পরিবারে সকলেই সমান কিন্তু পরিবারের প্রত্যেক সদস্যর আলাদা আলাদা নিজস্ব চিন্তা, নিজস্ব ভাবনা, নিজস্ব গঠনশৈলী কিংবা নিজস্ব যাপন থাকে ফলে সেই আলাদা আলাদা যাপনগুলোকে একমুখী করার জন্য এবং সম্মিলিত ভাবনাকে চিনিয়ে দেওয়ানোর জন্য একটা মাথার প্রয়োজন হয় সুতরাং ‘মাথা ভজন দত্ত’। প্রতিদিন প্রতিটি সম্পাদকের আড়ালে থেকে গোপনে এক্সট্রা 100 করে গেছেন সুতরাং যে শিরোনামে আমি লেখা শুরু করেছিলাম তা বাতিল করতেই পারি, বলতেই পারি প্রতিদিন তার গোপনের 100 আজকের একশোতম দিনে একশোর মধ্যে {(১০০×১০০)+১০০)} =১০১০০০ স্কোর দাঁড়িয়েছে।
ঋষি, সুবীর, সোমনাথ এদের কথা লিখতে গেলে লজ্জাই লাগে কেন লাগে। কারণ, এই যে আমি কথাগুলো লিখছি আপনারা পড়বেন বলে, অথবা ধরে নিন আপনারা পড়ছেন আমি লিখেছি বলে এই পুরো চিত্রনাট্যটি জীবন্ত করে তোলা আর তাকে চলিয়ে, ফিরিয়ে, কথা বলিয়ে তোলার সমস্ত কৃতিত্ব ওদেরই। তাই ওদের স্কোরবোর্ডে টেনে গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো করার কোন বাসনা আমার নেই।
আর বেশি কিছু বলবো না। কেনই বা বলবো তাহলে 200 বা 300 তম সংখ্যায় বলব কী? ওয়েব ম্যাগাজিন আর এই সময়টা, কবি-লেখক-সাহিত্যিকদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কিন্তু কাজের আর কালের মিলিত যাঁতাকলে কত লেখা না জানি ধুয়ে যায়, মুছে যায়, সেখানে এই টেকটাচ টক রক্ষা করে শিল্পীর শিল্পকে যোগ্য সংরক্ষণের অত্যাধুনিক টেকনোলজি দিয়ে। এর জন্যও আলাদা করে স্কোরবোর্ডে আজ দাগ দিলাম না। আবেগের নাম যদি চোখের জল হয় তবে লেখাটা এখানে থামিয়ে গুনগুনিয়ে উঠতেই পারি —