ক্যাফে ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ৭)

শহিদ ভগৎ সিং চরিত

তৃতীয় অধ্যায় || প্রথম পর্ব

কাহিনীকার বলে চলেছে, “চাচা, অজিত সিংজি’র বিপ্লবী চিন্তাধারা ভগৎ সিংকে অনুপ্রাণিত করে;চাচা, সামন্ততান্ত্রিক প্রভুদের অর্থনৈতিক শোষণের হাত থেকে ছোট ছোট চাষীদের রক্ষা করার জন্য সংঘবদ্ধ হবার ডাক দিয়ে ছিলেন, ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার জন্যই তাঁর ‘ভারত- মাতা সোসাইটি’, আর এই সোসাইটি’র রণধ্বণি ছিল, ‘পাগড়ি সামাল ও জাঠা—‘ ;কবি বাঙ্কে দয়াল, এই গানটি লেখেন ও সুর দেন।1907 সালের মার্চ মাসে, এ গান গাওয়ার অপরাধে, হয় তার জেল। যাই হোক, অজিতজি, ল্যাটিন আমেরিকায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন; সেখানেই গড়ে উঠেছে, ‘গাদার পার্টি’; সান- ফ্রান্সিসকো হচ্ছে, পার্টির হেড- কোয়ার্টার।
1857 সালের সিপাহি- বিদ্রোহের পথ অনুসরণ করে, গাদার পার্টির আন্দোলনের অভিযান। সিপাহী- দের মধ্যে বৈপ্লবিক চেতনার বিকাশ ঘটিয়ে সারা ভারতে ‘মুক্তি যুদ্ধের’ দিন ঠিক হয় 21শে ফেব্রুয়ারি1915 সাল, পরে দিনটা এগিয়ে নিয়ে 19শে ফেব্রুয়ারি করতে হয়; হায়! বিভীষণের দেশ, মিরজাফরের দেশে, ঘরের শত্রুর অভাব হয় না। ভাবো তো, ক’জন ইংরেজ, এদেশে এসেছিল; ক’জন মুসলমান, প্রথমে এদেশে যুদ্ধ করতে এসেছিল! এই বিরাট দেশে, ঐ ঘরের শত্রুদের দিয়েই বিদেশীরা, সে, কী মুসলমান , কী ইংরেজ, সবাই করেছে,দেশের মাটিকে রক্তাক্ত, দেশের মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়েছে;সব, সব ঐ বৈপ্লবিক চেতনার অভাবে, চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাবে।
ঘরের শত্রুদের বিশ্বাসঘাতকতায়, গাদার- পার্টির চেষ্টা হ’ল বিফল; একে, একে সবাই হয়েছে জেলবন্দী, হ’ল ফাঁসি, হ’ল দীপান্তর। কাতার সিং সারাভা, সবচেয়ে কনিষ্ঠ গাদার পার্টির সদস্য, মাত্র সাড়ে সতেরো বয়সেই ফাঁসির মঞ্চে শহিদ হলেন; বাঙালি বিপ্লবী বিফল মনোরথে হলেন দেশান্তরী; তিনি আর কেউ নন, বিপ্লব- চূড়ামনি রাসবিহারী বোস; পরে জাপানে তৈরি করেন আজাদ- হিন্দ বাহিনী; আর ঐ বৈপ্লবিক আদর্শকে সামনে রেখে ভারতে কম্যুনিস্ট আন্দোলনের সূত্রপাত; তখনও রাশিয়ায় সোভিয়েত বিপ্লব ঘটেনি। আমাদের ভগৎ সিং’র চরিত্রও চাচার ঐ বৈপ্লবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছে; চলছে পৃথিবীর সব দেশের বিপ্লবীদের কাজ- কর্ম বিশ্লেষণ; বৈপ্লবিক ধ্যান- ধারণায় উজ্জ্বীবিত সাহিত্যালোচনা, শাণিত হচ্ছে তার বৈপ্লবিক লেখনী। দেশের কম্যুনিস্ট আদর্শে অনুপ্রাণিত লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলাপ- আলোচনা। স্বয়ং ষ্টালিন, সমাজতন্ত্রের প্রতি ভগতের আগ্রহ দেখে, তাকে মস্কোয় এসে এ বিষয়ে Toilers’ র Eastern Universityতে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। নিজের প্রস্ততি পর্ব এভাবেই চলছে, বললেও অত্যুক্তি হবে না। লাহোরের দ্বারকাদাস লাইব্রেরী, বই’র সম্ভার দিয়ে যুগিয়ে চলেছে
ইন্ধন। মাত্র পনেরো- ষোলো বছর বয়সেই বাবার কাছে ‘চৌরিচোরা’ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধীজির
অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের তীব্র সমালোচনা করছেন।।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।