শহিদ ভগৎ সিং চরিত
দ্বিতীয় অধ্যায় || তৃতীয় পর্ব
আমাদের ভগৎ সিং, দশ- ক্লাসের মাথায় ডি এ ভি ছেড়েছে।
1921 সালে, ন্যাশনাল কলেজে ভর্তির জন্য এসেছে। দশ ক্লাস( নন ম্যাট্রিক), তাই প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তাদের ছ’মাস সময় দেওয়া হ’ল। দেখ, ভগৎ আর একটা ছেলে,
ওরই ডি এ ভি’র সহপাঠী, কেমন রাত জেগে, আদা- জল খেয়ে পড়ে চলেছে; পরীক্ষা শেষ, প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল; কলেজে ভর্তি হ’ল। এই সব স্কুল- কলেজ, সবই
দেশ- প্রেমিক শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত; এখানে, ইতিহাস, ও রাজনৈতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে ছাত্রদের মধ্যে দেশ- প্রেম জাগ্রত করাই মূলতঃ উদ্দেশ্য। প্রথমদিকে, ইংরেজিতে দুর্বল থাকলেও, দেখ, গভীর অধ্যাবসায়ে, ভগৎ,সে দুর্বলতা কাটিয়ে কেমন নিজের
যোগ্যতার প্রমাণ রাখছে! তার সঙ্গে সব সময় রয়েছে ছোট ইংরেজি ডিকশনারি। যাই হোক, চল, এবার বাড়িতে যাওয়া যাক।”
“সহপাঠী যশপালকে নিয়ে বাড়ি এসেছেন। সবাই জানে, ভগৎ সিং, ঘি, দুধ খেতে ওস্তাদ; কলেজের কাছে, লাহোর শহরের
‘আনারকলি’ দোকানের রেগুলার খদ্দের; নিজে তো ঐ দোকানের ‘কালা হালওয়া’ খাবেই, সঙ্গীকেও তা খেতে হবে; ওর হজম-শক্তিও অপার! বাড়িতে দুই বন্ধুর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে; মা, বিদ্যাবতী, এসে বলছে, ‘আচ্ছা,আচ্ছা, হয়েছে, রাতের খাবার খেয়ে তোমরা আলোচনা কর।’ খেতে বসে, মা তো ঘি চকচবে পরোটার সাথে, সবজিতে ঘি’র ছিটে দিতে শুরু করলে, ঘি- প্রেমী, ভগৎও আঁতকে উঠে বলছে, ‘বেবি, এত ঘি দিলে, সবজির টেস্টই নষ্ট হয়ে গেল।’ তা শুনে, বেবি বলে উঠলো, ‘দেখ, এই ছেলেটা, কিচ্ছু খায় না, যা খাবার দরকার, খাবে না; এই জন্যই এত দুর্বল।’ যশপাল, একবার ভগতের দিকে তাকিয়ে দেখে নিয়ে বললো, ‘ও যদি দুর্বল, আমি তো, তাহলে আর বেঁচেই নেই।’ শুনে, মা হাসি চেপে বলছে, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে, ওসব বলতে নেই, কু- নজর লেগে যাবে’।”
“ছবিতে, কাত করে থাকা টুপি মাথায়, কোর্ট- পান্ট পরা, সরু গোঁফ দেখে কিন্তু ঐ সময়ের ভগৎ সিং’র চেহারা তোমরা আন্দাজ করতে পারবে না; ঐ ফটো তো অনেক পরে তোলা হয়েছে। স্কুলের বন্ধুরা, তার নাদুস-নুদুস চেহারা ও বড় বড়,গোল গোল চোখ দেখে, তাকে বাচ্চা উঠ বলে ক্ষ্যাপাতো। এই ন্যাশনাল কলেজেই সহপাঠী সুখদেব, যশপাল, জয়দেব, রামকৃষ্ণদের পারস্পরিক সাহচর্যে ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় ভগতের জীবন অন্যখাতে বইতে শুরু করলো, আর অনুঘটকের কাজ করে চলেছে শহরের নামকরা ‘দ্বারকাদাস লাইব্রেরী’ ও তার লাইব্রেরীয়ান, রাজারাম শাস্ত্রী।”
চলবে