গল্পেরা জোনাকি তে রীতা পাল (ছোট গল্প সিরিজ)

আলেয়া
টিটি এসে এক ঝটকায় সরিয়ে নিল নির্মাল্যকে। এক সেকেন্ডের জন্য বেঁচে গেল নির্মাল্য। সঙ্গে রেল পুলিশ। নির্মাল্য চিৎকার করে উঠলো, “ কি করছেন কি? আমাকে নামতে দিন।” পুলিশ জোর করে নির্মাল্যকে খালি সিটে বসিয়ে দিল। টিটি বললেন, “ চলন্ত ট্রেন থেকে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলেন কেন?” শুনে নির্মাল্য আরো রেগে গেল। “ কি যা তা বলছেন ? কলকাতা থেকে ধানবাদ এসেছিলাম অফিসের কাজে। আজ কলকাতা ফিরছি। আমার বান্ধবী জল আনতে গেল। আমি ওর সাথে নামতে গিয়েছিলাম। ওর জল শেষ হয়ে গিয়েছিল।” টিটি মিস্টার সেন বললেন, “ আপনি শান্ত হয়ে বসুন। আপনার বান্ধবী নিশ্চয়ই কোন কামড়ায় উঠে পড়েছে। তাছাড়া আপনি যখন নামছিলেন তখন ট্রেন ভালোই স্পিড নিয়ে নিয়েছিল। আরএকটা কথা আপনি যখন আমায় টিকেট দেখিয়েছিলেন, তখন ! আমার যতটুকু মনে আছে, আপনার টিকিট ছিল এস ওয়ানে। আপনি এস সেভেন এ কি করছেন?” নির্মাল্য আবার উঠতে গেল। পুলিশ হাত ধরে আবারও বসিয়ে দিল। মিঃ সেন বললেন, “ আপনার বান্ধবীর নাম আর সিট নাম্বার বলুন। আমি পুলিশ পাঠাচ্ছি। দেখি খুঁজে পাওয়া যায় কিনা। আচ্ছা? আপনার বন্ধবীর নাম কি অপ্সরা রায়? আর সিট নাম্বার ১৩?” এবার নির্মাল্য একটু থমকে গেল। বলল,“ হুম। আপনি জানলেন কি করে? আর তাকে পাওয়া যাবে নাই বা কেন?” মিস্টার সেন একটু হেসে বললেন,“ আলেয়া কে কি ছোঁয়া যায়? আপনি আগে বলুন এস সেভেনে কেন? তারপর সবই আমি আপনাকে বলব।”
“ আমি বেস কিছুক্ষণ আগে বাথরুমে গিয়েছিলাম। বেরোনোর সময় ওর সাথে দেখা হয়। আমাকে দেখে হাসে। হাতে একটা জলের বোতল দেখিয়ে বলে, ওর জল শেষ হয়ে গেছে। কাছাকাছি স্টেশনে নেমে একটা জলের বোতল এনে দিলে খুব উপকার হয়। তারপর থেকে ওর সাথেই এখানে এসে গল্প করছিলাম। কখন যে এতটা সময় কেটে গেছে? যখন খেয়াল হলো, ও বলল খুব জল তেষ্টা পেয়েছে। বলেই ও আগে ট্রেন থেকে নেমে গেল। আর তারপর আমি ওর পেছনে নামছিলাম। ঠিক তখনই আপনি আমাকে আটকালেন। নামতে দিলেন না।” বলেই মোবাইলটা বের করে ছবি দেখতে লাগলো। এক সময় হতাশ হয়ে মিস্টার সেনের দিকে তাকালো। মিস্টার সেন জিজ্ঞাসা করলেন,
“ কি! বান্ধবীর কোন ছবিই নেই তো!” তখন মিঃ সেন নিজের মোবাইল থেকে কয়েকটা ছবি বার করে দেখালেন। নির্মাল্য ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। মিঃ সেন বললেন, “ বছর দুয়েক আগে ঐ স্টেশনেই ওর প্রেমিক ওকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়।” আর তারপর থেকেই – – – –