মার্গে অনন্য সম্মান মিনতি গোস্বামী (সম্পাদকীয় কলম – সহ সম্পাদক)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১১৫
বিষয় – অপ্রত্যাশিত আমন্ত্রণ

বকখালি কবিতা উৎসব

আবির্ভাব অফিস থেকে ফেরার পর তাকে চা জল খাবার দিয়ে অলকা তার পাশের চেয়ারে বসে মিটি মিটি হাসতে থাকলো। আবির্ভাব স্যান্ডউইচে কামড় দিয়ে বলল, ” মতলব কি, নিশ্চয়ই কোন ধান্দা আছে? ” যা, আমি কি কেবল ধান্দা করি?
না তা নয়, তবে এ সময় খাবার দিয়েই তুমি রান্নাঘরে ঢোকো রান্না করতে, তাই বললাম। হাসি মানেই অন্য কিছু।

মোটেই না, আমার নেট ফুরিয়ে গেছে। তুমি যদি শেয়ার করতে দাও, তাহলে আমি একটা কবিতা পাঠাবো একটা গ্রুপে। আজ রাত আটটায় সময় শেষ। তার আগে তিন শো টাকা পাঠিয়ে লেখার সঙ্গে তার স্ক্রিনশট দিতে হবে। তাই তোমার কাছে বসলাম। আমি আজ রান্না শেষ করে ফেলেছি।

ও ঠিক বুঝেছি। তা টাকা দিয়ে নিজেকে কবি প্রতিষ্ঠার এই ভূত মাথা থেকে কবে নামবে শুনি? এ বাড়িতে দু বছর এসেছ, কম কবিতা তো টাকা দিয়ে ছাপালে না। মেমেন্টো এনে ঘর ভরাচ্ছো, কবি কবে হবে শুনি! কবে তোমার কবিতা সম্পাদকরা নিজে চেয়ে নিয়ে ছাপাবে অলকা?

ধুর, তুমি এমন করে বলো কেন? সম্পাদকরা অনুষ্ঠান করে, মেমেন্টো, উত্তরীয়, পত্রিকা এ সব দেয়, তাছাড়া হল ভাড়া তো লাগে। আমরা টাকা না দিলে কি করে এত অনুষ্ঠান হবে বলো? আরে এটা ভাবো, প্রচুর পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হচ্ছে । প্রচুর পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এভাবেই একদিন দেখবে আমাকে সবাই কবি নামেই চিনবে।

আবির্ভাব অলকার কোনো কথাতেই না বলে না। খাবার শেষ করে চেয়ারে বসে বসেই তিন শো টাকা গুগল পে করে, স্ক্রিনশট পাঠিয়ে দিল অলকার ফোনে, আর রিচার্জ ও করে দিল।

অলকা ফোনে রিচার্জ দেখে নিজের ঘরে চলে গেল। বলল, কবিতাটা পাঠিয়ে আমি এক্ষুনি আসছি। অলকা তার কবিতাটা মোবাইলে লিখে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিল।

কবিতাটা পাঠানোর পর ফোনটা একটু ঘাটতে ঘাটতে অলকা দেখলো, তার পরিচিত অনেক কবি দুর্গাপুরে নবান্ন উৎসবে আমন্ত্রণের পত্র আপলোড করেছে। আবার কেউবা বকখালি উৎসবের আমন্ত্রণপত্র দিয়েছে নিজের প্রোফাইলে।

এসব আমন্ত্রণপত্র দেখে অলকা মনে মনে ভাবে, সত্যিই তো, সে তো প্রায় পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে লিখছে। আর তার পরিচিত সব গ্রুপেই টাকা দিয়েই সে অনুষ্ঠানে যেতে পেরেছে।
আবির্ভাব খুব ভালো ছেলে, তাকে খুব ভালোবাসে বলে কিছুতেই বাধা দেয় না, কিন্তু সত্যি বলতে কি, অলকার নিজেরও এই ব্যাপারটা আর ভালো লাগছে না। বেশিরভাগ গ্রুপের কবিতা লিখে প্রায় রোজ সে ভার্চুয়াল সম্মান সনদ পায়.। কত লোকের প্রশংসা পায়, কিন্তু নিজের শহরের দু চারটে পত্রিকা ছাড়া, বিনা পয়সায় তার কবিতা কেউ ছাপেনা, কোন অনুষ্ঠানেও ডাকে না ।

আচ্ছা বকখালি কবিতা উৎসবের কর্ণধার সৌমিত বসুর কবিতা কার্নিভালে তো সেও কবিতা লিখেছিল ফেসবুকে। তাহলে তাতেও তো আমন্ত্রণ করতে পারতো। বড় কবিদের সঙ্গে একমঞ্চে আমন্ত্রিত হয়ে কবিতা পাঠ করার স্বপ্ন প্রতি নিয়ত দেখে অলকা.। অন্যান্য বৌদের মত শাড়ি, গয়না, টাকা পয়সা কিছুতেই তার লোভ নেই। শুধু তার কবিতা লোকের মুখে মুখে ফিরবে, লোকে তাকে একদিন কবি বলে চিনবে এটাই তার লালিত স্বপ্ন।

পরদিন সকালে ফেসবুক খুলেই আনন্দে লাফাতে থাকে অলকা। আবির্ভাব কে ঘুম থেকে ঠেলে তুলে দেয়। এই দেখো, বকখালি কবিতা উৎসবে আমন্ত্রণ পেয়েছি। তুমি আর আমি কিন্তু একসঙ্গে যাব.।
আবির্ভাব অলকার গলা জড়িয়ে বলে, আলবাত যাবো। আমার কবি বউয়ের সঙ্গে কবিতা উৎসবে যাবো, এ সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে?

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *