সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ৯)

সুন্দরী মাকড়সা
ঋষি কোনোদিনই অন্ধ কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেয় নি। অভ্যাসবশত বাড়িতে পূজ্য ধর্মঠাকুরকে ছাড়া অন্য কোনো ঠাকুর দেবতাকেও প্রণাম করে নি। করেনি এটা ভেবে নয়, যে নিজেকে একজন কুসংস্কারমুক্ত আদর্শবাদী হিসেবে সে প্রমাণ করতে চেয়েছে। করেনি তার কারণ ঠাকুরদেবতাকে কোনোদিনই ঋষি মনের গহনে আসন পেতে বসায় নি। ওর কাছে দেবতা মানেই এমন একটা বস্তু যিনি মানুষের আত্মবিশ্বাস বোধকে দুর্বল করে দেন। জলে জঙ্গলে লড়াই করে বেড়ে ওঠা ঋষি তাই বুঝি নিজের মনকে এতোটাই শক্ত রাখতে পেরেছে। কিন্তু যতোই হোক, তাই বলে গতকালের কাগজের টুকরো দুটো কীভাবে ওর কাছে উড়ে এলো, আর কী করেই বা চোখের নিমেষে উধাও হয়ে গেলো! আর টুকরো দুটোতে যতোটুকু লেখা ঋষির চোখে পড়েছে সেই কথাগুলো যেন ঠিক প্রশ্ন উত্তরের মতো লেখা।
নীচে বেসিনের কল খুলতে গিয়ে ও বুঝলো যে ট্যাংকিতে জল নেই। তারমানে ওকে গিয়েই সেই পাম্প ছাড়তে যেতে হবে। সামান্য হলেও মেজাজটা খিঁচরে গেলো ওর। খালি গায়ের ওপর টাওয়েলটা চাপিয়ে নিয়ে নীচে যাওয়ার সিঁড়িতে পা রাখলো ঋষি।
নাহ্, কুঁয়োটার চারপাশের ঝোপ জঙ্গলগুলো বেশ মাথাচাড়া দিয়েছে। বেশ ঘন আর সেই ঝোঁপে বেশকিছু কাঁটাগাছও নজরে এলো ওর। খুব সাবধানে পা টিপেটিপে কুঁয়োটার কাছে গেলো ও। ওখানেই একটা ন্যাড়া দেওয়ালে রাখা সুইচবোর্ডের সুইচকে অন করতেই কুঁয়োয় রাখা পাম্পটা চলতে শুরু করলো। এখন না হলেও অন্তত পনেরো মিনিট ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে ওকে এখানে। শুধুশুধু দাঁড়িয়ে না থেকে বরং ঝোপগুলোকে সাফ করবে ও।
পরিষ্কার করতে গিয়ে কিছুটা জায়গার গুল্মলতাগুলোকে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় দেখতে পেলো ঋষি। থেঁৎলানো ধ্বস্ত গাছগুলো দেখলে পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে এখানে কারা যেন ধ্বস্তাধস্তি করেছে। সাথে সাথেই গতকাল রাতের ধ্বস্তাধস্তির শব্দের আওয়াজ যে ওর কানে এসেছিলো সেটা মনে পড়ে গেলো ওর। মুরগি বা ছোটখাটো ছাগলছানা যদি খাটাস বা বনবেড়ালের শিকারের লক্ষ্য হতো তাহলে অন্তত কিছুটা হলেও পালক বা চাপবাঁধা রক্তের চিহ্ন থাকতো। কিন্তু…
ওই ধ্বস্ত জায়গাটার গাছপালাগুলো পরিষ্কার করতে হাত লাগালো ঋষি। একটা ঝুমকো দুল আর তার সাথে কানের লতির একটুখানি টুকরো ওর হাতে উঠে এলো।
দুলটাকে হাতে নিয়ে ও ভাবতে শুরু করলো। এটা কীভাবে সম্ভব। এধরণের কিছু ঘটলে গতকাল রাতে ওর ছ ব্যাটারির টর্চের আলোয় ধরা পড়তো না বিষয়টা?
ও দু আঙুলে ঝুমকোটা চোখের সামনে তুলে ধরলো। পাম্পটা ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় করে জল তুলে যেতে লাগলো।
ক্রমশ